Header Ads

প্রেস বিজ্ঞপ্তি 
২৪/০৫/২০২৫

আসাম বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বারবার একই বিতর্ক কেন ?
প্রয়োজনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ' শিলচর বিশ্ববিদ্যালয় ' করা হোক - বিডিএফ।

আসাম বিশ্ববিদ্যালয় অসম চুক্তির ফসল - ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার জনৈক অধ্যাপকের এই অসার মন্তব্যে আবার বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এর আগেও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, জাতীয়তাবাদী সংগঠনের কর্মকর্তা তথা বুদ্ধিজীবীরা বারবার এই বক্তব্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। এই অসার বিতর্কের স্থায়ী অবসান কল্পে প্রয়োজনে  আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ' শিলচর বিশ্ববিদ্যালয় ' করার প্রস্তাব দিল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।

 বিডিএফ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য এদিন বলেন যে এবারের ১৯শে মে উপলক্ষে এই প্রথম ' অসম সাহিত্য সভা'র প্রতিনিধিরা বরাক সফরে এসেছিলেন। তাঁরা ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন, এমনকি 'ভাষা শহিদ স্টেশনের দাবিকেও মান্যতা দিয়েছেন। জয়দীপ বলেন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বরাকের একমাত্র সংগঠন,যারা অসম সাহিত্য সভার এই উদ্যোগকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছে। কিন্তু সমস্ত প্রক্রিয়ায় জল ঢেলে দিয়েছে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার জনৈক অধ্যাপকের বক্তব্য। তিনি বলেন এরজন্য প্রকারান্তরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ই দায়ী। তিনি বলেন ১৯ শে মের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও আবেগিক দিনে কাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন অসম সাহিত্য সভার প্রতিনিধিদের এদিন আমন্ত্রণ জানানো অবশ্যই যুক্তিযুক্ত কারণ তা উভয় উপত্যকার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসানে ভূমিকা নিতে সক্ষম। কিন্তু এই জনৈক বিতর্কিত অধ্যাপক ছাড়া উভয় উপত্যকায় আরো বহু বুদ্ধিজীবী,প্রাজ্ঞ ব্যাক্তিত্ব রয়েছেন। তাঁরা বক্তা হলে এমন অহেতুক বিতর্ক তৈরি হতনা। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর দায় এড়াতে পারেন না।

বিডিএফ আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে  এদিন বলেন যে এই বিতর্কিত অধ্যাপক  বরাকবাসীকে প্রকারান্তরে অপমান করেছেন এবং ভিত্তিহীন বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিকৃত করে এদিন তিনি ' অসম বিশ্ববিদ্যালয় ' বলে উল্লেখ করেছেন। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অসমিয়া বিভাগ নেই বলেও ভুল মন্তব্য করেছেন এবং শিলচরে এই বিভাগ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন। হৃষীকেশ বলেন বরাক উপত্যকার কোনও কলেজে স্নাতক স্তরে অসমিয়া পড়ার সুবিধা রয়েছে বলে তাঁর জানা নেই। তিনি বলেন বরাকে অসমিয়া জনসংখ্যা নগন্য,মোট জনসংখ্যার দুই শতাংশ মাত্র । তাই এরকম একটি বিভাগ খুললে ছাত্র পাওয়া যাবেনা বলে সঙ্গত কারণেই ডিফু ক্যাম্পাসে এই বিভাগ চালু রয়েছে। এমনকি সেখানেও ছাত্র ছাত্রীদের সংখ্যা খুবই নগন্য। তিনি বলেন বরাকের জনগণ সবসময়ই সমন্বয়ে বিশ্বাসী। তবে যেহেতু বারবার আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অসমিয়া বিভাগ খোলার প্রস্তাব দেওয়া হয় তবে একই সাথে তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বাংলা বিভাগ খোলার উদ্যোগ নেওয়া উচিত,কারণ তেজপুরের জনসংখ্যার কুড়ি শতাংশ বাংলাভাষী। তিনি বলেন এই অধ্যাপকের উদ্দেশ্য মহৎ হলে অবিলম্বে এই দাবি নিয়ে তিনি বক্তব্য রাখুন। তিনি বলেন সমন্বয় নিয়ে শুধু বরাক বাসীকেই পরামর্শ দেওয়ার এই অপচেষ্টার পেছনে ব্যাক্তিস্বার্থ সহ অন্য দুরভিসন্ধি থাকতে পারে। তাই বরাক বাসীর এই বিতর্কিত অধ্যাপককে আগামীতে সম্পুর্নভাবে বয়কট করা উচিত বলে বিডিএফ মনে করে।

বিডিএফ যুব ফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক কল্পার্ণব গুপ্ত এদিন বলেন যে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে শিক্ষাবিদ প্রেমেন্দ্র মোহন গোস্বামীর শিক্ষা সংরক্ষণ সমিতির লড়াই, আকসার সভাপতি প্রদীপ দত্তরায়ের নেতৃত্বে আন্দোলন, প্রাক্তন সাংসদ সন্তোষ মোহন দেবের ভূমিকা এবং সর্বোপরি জাতিধর্ম নির্বিশেষে বরাক উপত্যকার আপামর জনসাধারণের দীর্ঘ আন্দোলনকে যারা ভুলিয়ে দিতে চাইছে তাঁরা জনগণের শত্রু। তিনি বলেন অসম চুক্তির ফলে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় যদি তৈরি হত তবে একদশক ব্যাপী আন্দোলনের প্রয়োজন হতনা, বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলনে আসুর এতো বিরোধীতা থাকত না, বিশ্ববিদ্যালয় বিল সংসদে উত্থাপিত হওয়ার পর অগপ সাংসদরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সদন ত্যাগ করতেন না। এমনকি বিল পাশ হবার পরও জমি বরাদ্দ করা থেকে প্রতিপদে অগপ সরকারের পক্ষ থেকে এতোটা অসহযোগিতা করা হতনা। সর্বোপরি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিপক্ষ হিসেবে তেজপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হতনা। তিনি বলেন এই বিতর্কের স্থায়ী অবসান কল্পে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস পুস্তকাকারে প্রকাশ করতে হবে। পুর্বতন উপাচার্যের উদ্যোগে অধ্যাপক সুবীর করের সম্পাদনায় এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতেই রয়েছে। অবিলম্বে তা প্রকাশের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি ওয়েবসাইটে যদি আসাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসকে বিকৃত করে তা অসম চুক্তির ফসল বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে তবে অবিলম্বে কতৃপক্ষকে তা সংশোধন করতে হবে। তৃতীয়ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিকরনের সমস্ত উদ্যোগকে বন্ধ করতে হবে।
কল্পার্ণব বলেন বিডিএফ এর পক্ষ থেকে আগেও এই দাবিগুলো তোলা হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বিতর্কে প্রমান যে কোন সংশোধনী পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক নন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তেমন হলে অবশ্যই তাদের অন্যধরনের গনতান্ত্রিক আন্দোলনের কথা ভাবতেই হবে। তিনি এদিন আরো বলেন আর নাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ' শিলচর বিশ্ববিদ্যালয় ' করা হোক। তাহলেই সমস্ত বিতর্কে ভাঁটা পড়বে।

বিডিএফ এর পক্ষ থেকে আহ্বায়ক হারাধন দত্ত এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.