শিয়াল ডাকা জ্বনাক জ্বোনাক জ্বলা দিনগুলি মোর
অমল গুপ্ত, ১ জুন :শিশু বেলার খেলার পবিত্র অঙ্গন হারিয়ে গেছে,খেলার মাঠ কংক্রিটের জঙ্গলে চাপা পড়ে গেছে। বুড়ি আম গাছটা কবেই মরে গেছে। লিচু গাছাটাও মরে গেছে,আমাদের শিশু বেলার খেলার সাথী কে ৭০ বছর পর খুঁজে পেলাম, নিখাদ ভালবাসার প্রেম ,সেই খেলার অঙ্গনে এক লিচু গাছ ছিল। তার ছায়া ঘণ শান্ত ঘুঘু ডাকা দুপুরে ধীর পায়ে থপ থপ ফ্রক পড়ে আসতো। বড় গরীব লাল নীল সাদা ছি টের কম দামি কাপড়ের ফ্রক ,পাশের পেয়ারা গাছে শীতের সকালে মাটির ভাঁড় বেঁধে বসে থাকতাম মায়ের ইতু পুজোর ব্যবহার করে মাটির ভাঁড়ে ঠান্ডা জল একটু চুরি করে চিনি মিলিয়ে দিতাম,সকালে পেয়ারা গাছে চড়ে মাটির ভাঁড়ে চুমুক দিতাম স্বর্গীয় আনন্দ খেজুর রসের স্বাদ পেতাম। উদাস ক্লান্ত দুপুরে সে আসতো। বৃষ্টি হলে ঝড়ে
আম পড়ত সঙ্গে শিলাবৃষ্টি কমদামী হাফপ্যান্ট ময়লা জামা চিরুনি হীন উসখো খুস্কো চুল বেজায় স্ফূর্তি মাটির ঘর তৈরি কারিগর ,শিব ঠাকুর গড়ছি। দুই আমাদা গাছ কে কলা গাছ করেছি। মিশ্র বাড়ির পিছনে আম গাছ ফজলি আম ফেটে পড়ছে। বড় জলাশয় কাদা গোলা জল একটি আম জলে পড়ছে আর টুপ টুপ শব্দ ,ঠান্ডা বাতাস ভিজে সপ সপে তবুও কি আনন্দ , আম পেয়েছি , সিল বৃষ্টির পাথর পকেটে পুড়ছি।কি আনন্দ।ভট্টাচার্য বাড়ি র লাল করমচা গাছে লালে লাল টুক মিষ্টি ভান্ডার , কাদরে বান এসেছে , লাটাই মাথাতে ছোট গাছ বেঁধে এস ডি ও বাংলো থেকে বানের জলে লাটাই ছাড়তাম যতদুর এক বুনো গাছে লাল সিঁদুর জল লাল হয়ে যেতো পহেল গ্রাম এত লাল হয়নি।সেই সিঁদুর গাছের নাম ভুলে গেছি ,কান্দি ছায়া পথ হলের টিকটিকি হতে চেয়ে ছিলাম কারণ বিনা টিকিটে সিনেমা দেখতে পেতাম। বাসের কন্ডাক্টর হতে চেয়েছিলাম রেল লাইন ট্রেন দেখতে পেতাম বিনাপয়সায়।কুমারদা বিনাপয়সায় শেরপুর নিয়ে গিয়েছিলেন খাগড়া স্টেশনে ট্রেন দেখে শিহরিত হয়ে ছিলাম। গরমের ছুটি মা আমার ছোলা ভিজিয়ে রাখতেন ,গরীবের প্রোটিন,এক কেটলি জল দিয়ে ছোট্ট আসনে প্রায় ঘুমের জড়তা যেতনা আমরা ভাইবোন দুটি করে বাসী রুটি খেতে দিতেন। ভোরের চাপা ফুলের সুবাস কোকিলের ডাক সেই নিদ্রাহীন ভরে সে আসতো ধীর পায়ে ফ্রক পড়ে অপেক্ষা করতাম , ভোরের সুবাসে নান্টু , মলি গলা ছেড়ে গান ধরতো , বাতাসে ভেসে যেতো ঘুঙুর হীন ধুলোমাখা পায়ে সে আসতো আমি অপেক্ষা করতাম।অপেক্ষা করব দিন কাল সময় ও মাপতে পারবে না। অনন্তকাল অন্তিম সময় পরকাল ও কানে আসবে দুটি ধুলোমাখা আদর হীন পায়ের মৃদু শব্দ সাদামাটা ঘুঙুর হীন শব্দ যার যা স্বপ্ন বুনে কার্পেটে দুর্ব ঘাসের জমিতে নয়।
। নদা মামার টিনের চালে যাতে শব্দ না হয়।পেয়ারা চুরি। ,জেলখানার মুরগি চুরি , বাবার বাক্স থেকে পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র চুরি শিশু বেলার এই অপরাধ নিজেকে ক্ষমা করতে পারেনি। তবু তো শিশু বলাi সেই শিশু বয়সের সাথী আজ ৭০ বছরে এক গৃহবধূ বাংলার এক গ্রামে ভরা সংসার আমার শূন্য ঘর শূন্য সংসার আমি ৭০ বছরের বৃদ্ধ শুধুই স্মৃতি রোমন্থন করে বেঁচে থাকা। একই পাড়ায় দুই দারিদ্র পীড়িত পরিবার সৎ মানবীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী দুই পরিবার। ,আজ উচ্চমধ্যবিত্ত দুটি ভাতের অভাব নেই।দারিদ্রতা নেই আছে মন কষ্ট আছে যন্ত্রনা আছে আকাশ সমান বিষাদ ,এক আকাশ বিষাদ নিয়ে বেঁচে থাকা,এই আকাশ ভরা সূর্য তারার মাঝে সেই ফ্রক পড়া দরিদ্র পারিবারের শিশু কন্যা লক্ষ্মী আজও গ্রাম বাংলার গৃহবধু হয়ে বেঁচে আছে।আমার। নিখাদ ভালবাসা আজও সেই থপ থপে ধীর পায়ের ঘুঙুরের শব্দ শুনতে পাই।তাই নিয়ে বেঁচে আছি। আমাদের মাটির বাড়ি খরের চাল দিয়ে বৃষ্টির টুপ টুপ শব্দ মুক্ত দানার মত ঝড়ে পড়ত শব্দহীন রোমাঞ্চ হীন শিশু বেলা স্বপ্নের মত ইথার তরঙ্গে ভেসে যাবে ,বেঁচে থাকবে অনন্তকাল যা সময় ছুঁতে পারবে না।বয়স ও ছুঁতে পারবে না। শিশু বেলার সাথীর মরণ নেই জীবন নেই শুধুই অনন্তকাল কালের স্রোতে ভেসে যাবে।
কোন মন্তব্য নেই