বাংলার গর্ব পদ্ম শ্রী দুখু মাঝি গৃহ হীন
বাংলার গর্ব, পদ্মশ্রী দুখু মাঝি আজ গৃহহীন
রুখাসুখা মাটির অনতম প্রাণপুরুষ। পুরুলিয়ার কঠিন মাটিতে সবুজের ঘনত্ব বাড়িয়ে চলেছেন। জীবনের সংগ্রাম, চলার পথ তাঁকে শিখিয়েছিল গাছপালার প্রয়োজনীয়তা। বাবা এসেছিলেন অযোধ্যা পাহাড়ের ধানচাটানি গ্রাম থেকে। বাগমুন্ডির সিন্দ্রি গ্রামে মোহন শাহ এর বাড়িতে কাজ পান। দুঃখ মাঝির জন্ম এই সিন্দরি গ্রামে। ১২ বছর বয়স থেকে গাছ লাগানোর প্রতি তার একটা আলাদা ভালোবাসা জন্মায়।
প্রথমদিকে অর্থকারী গাছ লাগাতেন -কুল ,কুসুম, পলাশ- যেগুলোতে মূলত লাক্ষা চাষ হয় ।বাগমুন্ডির এই এলাকা এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকা-- লাক্ষা চাষে খুব সুনাম রয়েছে। বাগমুন্ডির আনাচে-কানাচে দুখু মাঝির পরম যত্নে বেড়ে ওঠা গাছগুলো আজ মহীরুহ হয়ে উঠেছে।
গাছ লাগানো তো অনেকেই করেন ।কিন্তু লাগানো এবং বাঁচানো, পরিচর্যা করা এখানেই দুঃখ মাঝির বিশেষত্ব। গাছ লাগানোর পর বেড়া দেন। বেড়া দেওয়ার পদ্ধতিও অন্যদের থেকে অনেক আলাদা। তিনি ব্যবহার করেন মানুষের ফেলে দেওয়া বস্ত্র, কাঠ যেগুলো সাধারণত মানুষ ছুঁতে চায় না। অশুভ মনে করে। দুখু মাঝি সেগুলোকেই বেছে নেন। শ্মশান ঘাটে মানুষের ফেলে দেওয়া ধুতি,শাড়ি ,বিভিন্ন কাপড় ,কাঠ --সেগুলোকে নিজে হাতে করে, সাইকেলে করে নিয়ে আসেন ।তা দিয়েই তৈরি হয় গাছের বেড়া ।প্রয়োজনে দু একটা কাঁটা দিয়ে দেন ।কখনো গাছের গুঁড়িতে কাপড় জড়িয়ে দেন যাতে গরু ছাগলে নষ্ট না করে।
আর কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করেন গোবর গোলা জল, তাকে দু-তিন দিন পচিয়ে রাখেন। যাতে একটা উগ্র গন্ধ বার হয়। হাতে মেশিন নেই কিন্তু ছোট ঝাঁটা দিয়ে সেই তরলকে ছিটিয়ে দেন গাছের পাতায় যাতে গরু ছাগলে মুখ না দেয়।
গাছ বাবা ,গাছ দাদু, দুখু মাঝির সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে বহুদূরে। গাছ লাগানোর জন্যই তার সম্মান। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরকারি ,বেসরকারি বিভিন্ন জায়গাতে ডাক পাচ্ছেন। অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষও এগিয়ে আসছেন তাঁকে সাহায্য করার জন্য। বিভিন্নভাবে যে যেরকম পারছেন সাহায্য করছেন।
অনেকেই দুঃখ বাবুর সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। মোবাইল ফোনে তিনি ষড় বড় নন তাই এই যন্ত্রটিকে খুব একটা বিশ্বাস করতে চান না। তাই কোন সহৃদয় ব্যক্তি দুঃখ বাবুর সাথে দেখা করতে চাইলে সোজাসুজি বাঘ বন্দী থেকে চরিতাগ্রাম যাবেন সেখান থেকে বাঁ দিকে আরো তিন কিলোমিটার গিয়ে সিন্দ্রি গ্রাম পৌঁছাবেন।
এই গ্রামেই দুঃখ বাবুর বাড়ি। বাড়ির মূল রাস্তার ধারেই সাইনবোর্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধন্যবাদ জানাই- DrMrityunjoy Mahato মহাশয় কে। মৃত্যুঞ্জয় দা উদ্যোগী হয়ে এই ব্যবস্থা করেছেন। সহৃদয় ব্যক্তিরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন--তারা যেন সহজেই দুখু বাবুকে খুঁজে পান।
আজ এক বর্ষণমুখর দিনে দুখু বাবুর হাতে এই সাইনবোর্ড তুলে দেওয়ার সময় এক খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম ।এই সামান্য বর্ষণে বাড়ির পাশে চারিদিক জলে জলময়। চারপাশে অনেক পাকা ঘর থাকলেও দুখু বাবু এখনো তার মাটির বাড়িতে। কোনো মতে প্লাস্টিকটা টানিয়ে ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যেও তার অনাড়ম্বর জীবন অতিবাহিত করেছেন।
সম্মান অর্জন করেছেন। কিন্তু জীবনের গতি একি থেকে গেছে ।তার অনাড়ম্বর জীবনে কোন পরিবর্তন আসেনি। অল্প বৃষ্টিতেই বাড়িতে চুঁয়িয়ে পড়ছে জল ।কখনো রাস্তার জল ঢুকে পড়ছে বাড়িতে।
আপনারাও পাশে দাঁড়াতে পারেন। সাধ্যমতো দুখুবাবুকে সাহায্য করতে পারেন। আমাদের স্তর থেকে আমরা চেষ্টা করছি মাননীয় এমএলএ(MLA) সাহেব এবং MP সাহেবদের কাছে দুখু মাঝির কথা তুলে ধরা --যাতে তার জন্য অন্তত পাকা ছাদের ব্যবস্থা করা যায়। সেই প্রয়োজনীয় কাজ চলবে।
পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ। নমস্কার🙏
ছবি ও লেখা ✍️ জনার্দন মাহাত
#সংগৃহীত
Geography Times
কোন মন্তব্য নেই