Header Ads

আসু আর লাচিত সেনা মিথ্যা দাবি করছে

 নয়া ঠাহর ,সংবাদদাতা:

আসাম বিশ্ববিদ্যালয় আসাম আন্দোলনের ফসল বলে আসু এবং লাচিত সেনার বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যাচার - অবিলম্বে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রকৃত ইতিহাস প্রকাশ করুক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ - বিডিএফ।

সম্প্রতি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিহুর ছুটি নিয়ে একটি বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় আসুর আন্দোলনের ফসল বলে মন্তব্য করেছেন আসু, লাচিত সেনা সহ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার একাংশ সংগঠনের নেতারা। এটি যে সম্পুর্ন মিথ্যা সেই ব্যাপারে বক্তব্য রাখার পাশাপাশি অবিলম্বে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রকৃত ইতিহাস পুস্তিকা হিসেবে প্রকাশ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।

বিডিএফ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই ব্যাপারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন যে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রকৃত ইতিহাস নস্যাৎ করার একটি প্রচেষ্টা বহুদিন ধরে চলছে। কারণ এই প্রথম নয়, এর আগেও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বিভিন্ন নেতা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আসাম আন্দোলনের ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন। জয়দীপ বলেন তাঁরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, কারণ এটি ডাহা মিথ্যা। তিনি বলেন আসু এবং গন সংগ্রাম পরিষদের আন্দোলন নয়, বরং বিরোধীতার জন্যই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিলচরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জয়দীপ বলেন আশির দশকের বঙাল খেদা' আন্দোলনের সময় বরাকের ছাত্র ছাত্রী যারা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় উচ্চশিক্ষা নিতে যেতেন,আসুর ক্যাডাররা তাঁদের মার্কশিট ছিঁড়ে ফেলত, তাঁদের বিভিন্ন ভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হত। অবস্থা এমনই দাঁড়ায় যে একটা সময় আতঙ্কে অনেকেই পড়াশোনা ছেড়ে বরাকে ফিরে আসতে বাধ্য হন এবং বরাকের সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই বরাক উপত্যকার একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিতে ছাত্র সংগঠন আকসার নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল কংগ্রেস,সিপিআইএম সহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। বরাকের সর্বস্তরের জনগণের একদশক ব্যাপী আন্দোলনের ফলেই কেন্দ্রীয় সরকার শিলচরে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে বাধ্য হন। এই ব্যাপারে প্রয়াত শিক্ষাবিদ প্রেমেন্দ্র মোহন গোস্বামী ও রাজনীতিবিদ সন্তোষ মোহন দেবেরও উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তিনি বলেন সংসদে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় বিলের কপি ছিঁড়ে ফেলেছিলেন তৎকালীন অগপ সাংসদ বিজয়া চক্রবর্তী। এমনকি আসাম বিশ্ববিদ্যালয় নামের কোন বিশ্ববিদ্যালয় কেন বরাকে স্থাপিত হবে তা নিয়ে তীব্র আন্দোলনে নেমেছিল আসু সহ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বিভিন্ন জাতিয়তাবাদী সংগঠন যাতে স্পষ্ট যে তারা বরাককে আসামের অংশ বলেই ভাবতেন না। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার একপ্রকার বাধ্য হয়ে তেজপুরে আরেকটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেয়। এবং এরপরও তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস না করা অব্দি আসাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যাবেনা বলে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার জাতিয়তাবাদী নেতারা গোঁ ধরে বসেন যার ফলে একই দিনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিম্মা রাওকে 
এই দুইটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিলান্যাস করতে হয়েছিল। জয়দীপ বলেন যে তাই তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয় যে বরাকের জনগণের আন্দোলনের ফসল তাও স্পষ্ট।

বিডিএফ এর আরেক আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে বলেন যে ইচ্ছাকৃতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের এই ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং এর অন্যতম কারণ যে এর কোন লিখিত প্রামান্য ইতিহাস নেই। তিনি বলেন এই দায়িত্ব অবশ্যই আসাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপর বর্তায় কারণ প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ইতিহাস ছাত্রদের জানানো বিশ্ববিদ্যালয়ের কতৃপক্ষের কর্তব্য। তিনি বলেন এই ব্যাপারে প্রাক্তন উপাচার্য সুভাষ সাহা শিক্ষাবিদ সুবীর করকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং তার উদ্যোগে একটি ম্যানুস্ক্রিপ্ট তৈরি হয়ে ছাপাখানায় যায়। কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণে তা ছাপাখানা থেকে আবার ফিরিয়ে আনা হয়। হৃষীকেশ বলেন যে তার সন্দেহ যে যেহেতু এই ইতিহাস প্রকাশ পেলে আসু,গন সংগ্রাম পরিষদ সহ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বিভিন্ন জাতিয়তাবাদী সংগঠনের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় বিরোধিতার ইতিহাস সামনে চলে আসবে তাই এই বিষয়টিকে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তিনি বলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই ধরনের দ্বিচারিতার জন্যই আজ আসু বা লাচিত সেনার মতো সংগঠনের নেতারা এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কৃতিত্ব নেবার সাহস পাচ্ছেন এবং প্রকৃত ইতিহাসকে নস্যাৎ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ইতিহাস প্রকাশ করার উদ্যোগ নিক, যাতে নতুন প্রজন্ম এই বিষয়ে জানতে পারে। তিনি বলেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই কাজ সম্পন্ন করতে হবে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে। অন্যথা এই নিয়ে বিডিএফ বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করতে বাধ্য হবে।
অন্যান্যদের মধ্যে এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিডিএফ আহ্বায়ক হারাধন দত্ত এবং নবারুণ দে চৌধুরী।

বিডিএফ এর পক্ষ থেকে দেবায়ন দেব এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.