Header Ads

শিলাদিত্য দেব সম্পর্কে প্রকৃত মূল্যায়ন করেছেন চিত্ত রঞ্জন পাল

শিলাদিত্য দেব, প্রাক্তন বিধায়ক। বর্তমান অসম ভাষিক সংখ্যালঘু উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান। একটি বিতর্কিত নাম। কিন্তু তাঁর কর্মদক্ষতা প্রশ্নাতীত। কারণ তিনি ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত কট্টর জাতীয়তাবাদী সংবাদ পত্র "আসাম ট্রিবিউন" পত্রিকার নয়াদিল্লিস্থ সাংবাদিক ছিলেন। ইংরেজি ভাষায় কথা বলা ও লেখায় তাঁর সমতুল্য বাঙালি খুব কম নেতাই রয়েছে। এখন ফেসবুকে অনেক নেতার ইংরেজি, বাংলা ও অসমিয়া ভাষায় লেখা পড়ে অন্নপ্রাশনের ভাত বেরিয়ে আসতে চায়। অজস্র বানান ভুল। চার লাইন শুদ্ধ ভাবে লিখতে পারে না। তারাই আবার আমাকে কমেন্টে জ্ঞান দিতে আসে। 
শিলাদিত্য দেব ১৯৯৮ সালে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থের অ্যাডিশনাল প্রাইভেট সেক্রেটারি (এপিএস) ছিলেন। এই পদটির জন্য যোগ্যতার প্রয়োজন আছে। ২০১৬-২০২১ সাল পর্যন্ত বিধায়ক থাকাকালীন তিনি সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি করেছেন, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। যতদূর মনে পড়ে, তাঁর বিরুদ্ধে অসমের বিভিন্ন জেলায় ১০৪ টি মামলা ঝুলে রয়েছে। যেদিন বিজেপি সরকার অসম থেকে উৎখাত হবে, সেদিন তিনি হয়তো চোখে সর্ষে ফুল দেখবেন।
জাতীয় নাগরিকপঞ্জী নবায়নের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিলো শূন্য। হোজাই বিধানসভা কেন্দ্রের প্রায় ৩৩ শতাংশ হিন্দু বাঙালির নাম অন্তর্ভুক্ত হয় নি। যা অসমের মধ্যে সর্বাধিক। হোজাই বিধানসভা কেন্দ্রে প্রয়াত শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত ২৫ বছর বিধায়ক ছিলেন। প্রাক্তন মন্ত্রী ডাঃ অর্ধেন্দু কুমার দে ২০ বছর বিধায়ক ছিলেন। হোজাই বিধানসভা কেন্দ্রের মন্ত্রী বা বিধায়ক কে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার হিন্দু বাঙালি নেতা হিসেবে গণ্য করার পরম্পরা রয়েছে। কিন্তু আমার বিচারে শিলাদিত্য দেব তা নেতিবাচক ভাবে ব্যবহার করেছেন। হিন্দু বাঙালির সমস্যার প্রতি নজর দেওয়ার পরিবর্তে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বেশি উদগীরণ করেছেন। যারদরুণ, তিনি ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার হিন্দু বাঙালি নেতা হওয়ার মুকুট অর্জন করতে সক্ষম হন নি। যদিও একজন বিধায়ক হিসেবে তিনি নিজ বিধানসভা কেন্দ্রের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন। একশো শতাংশ সফল। আমার মামার বাড়ি হোজাই জেলার লঙ্কায়। ছোটবেলা থেকেই মামার বাড়ি যেতাম। তিন ঘণ্টা বা চারঘন্টা সময় লাগতো। ১৯৯১ সালে প্রয়াত হিতেশ্বর শইকীয়ার মন্ত্রীসভায় ডাঃ অর্ধেন্দু কুমার দে ক্যাবিনেট মন্ত্রী হন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত মন্ত্রী ছিলেন। তারমধ্যে ১৪ বছর ক্যাবিনেট মন্ত্রী ও পাঁচবছর বিরোধী দলের উপ দলপতি ছিলেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে পর্যন্ত হোজাই ও লঙ্কা যাওয়ার পথঘাটের অবস্থা ছিলো তথৈবচ। গাড়ি হেলতে দূলতে দুলতে যেতো। কোমড় ও পিঠ ব্যথা হয়ে যেতো। পি ডব্লিউ ডি রাস্তার ওপর খাল বিলের মতো বড় বড় গর্ত ছিলো। নীলবাগান থেকে হোজাই শহরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ যেতে প্রায় একঘন্টা সময় লাগতো। গৌতম রায় রাজস্ব মন্ত্রী থাকাকালীন ওই পথটি  এফডিআরের অধীনে নির্মাণের জন্য এস্টিমেট বানিয়ে জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু কার সাধ্য আছে, অর্ধেন্দু দে-র বিধানসভা কেন্দ্রে কাজ করবে? বাধা দেওয়া হয়েছিলো আমাকে।
শিলাদিত্য দেব বিধায়ক হওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকারের সেন্ট্রাল রিলিফ ফাণ্ডের (সি আর এফ) ২৭ কোটি টাকা এনে হোজাই-নীলবাগান ও হোজাই- জোড়াপুখুরী ৬/৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুটো রাস্তা নির্মাণ করেন।
হোজাই ও লামডিং শহরে পূর্ণ পর্যায়ের হাসপাতাল ছিলো না। ডাঃ অর্ধেন্দু কুমার দে হোজাই শহরে ৩০ বিছানাযুক্ত সিভিল হাসপাতালে চাকরি করেছেন। বৃটিশ আমলের এফ আর ইউ ছিলো। বলা যেতে পারে, ফার্ষ্ট রেফারেল হাসপাতাল। ১৯৯৫ সালে জোড়াপুখুরী অঞ্চলে ১০০ বিছানাযুক্ত হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ৩৫ বিঘা জমি আবন্টন দেওয়ার পাশাপাশি ৮.৪ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছিলেন হিতেশ্বর শইকীয়া। কিন্তু অর্ধেন্দু দে-র জীবদ্দশায় ওই হাসপাতালের এক শতাংশ নির্মাণ হয়নি। কিন্তু শিলাদিত্য দেব সেখানে একশো বিছানাযুক্ত আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন। 
আমি কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন হোজাই জেলার ইনচার্জ ছিলাম। হোজাই শহরে কংগ্রেসের কার্যালয় নেই। একদিন গিয়ে দেখি তিন তলার ওপর একটি দশ/বারো ফুটের একটি ভাড়া করা রুম। লঙ্কা শহরে যে কার্যালয়টি রয়েছে, সেটা সরকার জমির আবন্টন দিয়েছে। যদিও সরু একটি গলির ভেতরে লোকচক্ষুর আড়ালে। বিপরীতে শিলাদিত্য দেব হোজাই শহরে পাঁচ তারকা যুক্ত হোটেল সদৃশ বিজেপি কার্যালয় নির্মাণ করেছেন।
হোজাই ও লঙ্কা শহরের রেলষ্টেশন দুটো ছিলো বৃটিশ আমলের নির্মিত। বর্তমানে লঙ্কা, ঢলপুখুরী ও হোজাই রেলষ্টেশনে গিয়ে সবাই এয়ারপোর্ট ভেবে ভুল করবেন। এতো সুন্দর করা হয়েছে। হোজাই শহর থেকে নতুন বাজার যেতে ঘন্টার পর ঘন্টা রেল ক্রসিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। এখন ওভারব্রীজ হয়েছে। এখানে শিলাদিত্যের বিরুদ্ধে অসংখ্য মানুষের অভিযোগ রয়েছে। তিনি মুসলিম ব্যবসায়ীদের ফেভার করেছেন। বিপরীতে, হিন্দু বাঙালি ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করেছেন। প্রধান শহরের মেইন রোড ধরেই ষ্টেশনের ওপর দিয়ে ফ্লাই ওভার বানিয়েছেন তিনি। ভারতের কোথাও ষ্টেশনের ওপর দিয়ে ফ্লাইওভার বানানোর নিয়ম নেই। কিন্তু তিনি রেলবোর্ডের মীটিঙে গিয়ে কনভিন্স করছেন। যারদরুণ ষ্টেশনটিকে একশো মিটার ডানদিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপরই প্ল্যাটফর্মের ওপর দিয়ে ফ্লাইওভার নেওয়া হয়েছে। 
আমার সঙ্গে শিলাদিত্য দেবের মতানৈক্য থাকতেই পারে। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ পোষণ করার অধিকার সকলের রয়েছে। কিন্তু সামাজিক কাজের স্বীকৃতি দিতে আমি কার্পণ্য করি না। শিলাদিত্য দেবের কাছে থেকে আমার কিছু পাওয়ার নেই, দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠেনা। আমার ভ্রাতৃসম এক বন্ধু লিখেছেন, আমি নাকি শাক দিয়ে মাছ ঢেকেছি? কথাটা দুর্ভাগ্যজনক! সত্যি কথা বলতে লজ্জা কিসের? গৌতম রায়, চন্দন কুমার সরকার প্রশংসনীয় কাজ করেছেন, এ কথা অস্বীকার করলে চলবে ? বিধায়ক অজয় রায়ের কয়েক জন চাটুকার কমেন্ট করে আবোল তাবোল লিখেছেন। অবসর সময়ে একদিন উত্তর দেবো। কারণ বিধায়কের জন্মকুষ্ঠি সম্পর্কে আমি জানি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.