ফিরোজা বেগম ,কমল দাশগুপ্ত গান আর প্রেম অমর
এক প্রেম কাহিনী.......
স্টুডিওতে ফিরোজার প্রথম গান শুনে কাজী নজরুল ইসলাম ডেকে পাঠিয়েছিলেন কমল দাশগুপ্তকে৷ সালটা ছিল ১৯৪০, HMV স্টুডিও তে কাজী নজরুলের কাছে গান শোনাতে এলো ক্লাস ফোরে পড়া এক কন্যা । স্টুডিওতে সহকারীদের দিকে ঘুরে কবি বলেছিলেন- 'আমি হয়তো থাকব না৷ দেখবি, এ মেয়েটা একদিন দারুণ বিখ্যাত হবে'৷
কিংবদন্তি সুরকার কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে ফিরোজার প্রেম, বিয়ে এবং সংসারের ইতিবৃত্ত, সার্থক প্রেমকাহিনী দুই বাংলার ইতিহাসে সেরাদের সেরার তালিকায় থাকবে, যাঁর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে শুধু নজরুল ও প্রমীলার প্রেম৷ ফিরোজা বেগম .....ওপারের ফরিদপুরের মেয়ে হলেও কলকাতার সঙ্গীত সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে উঠেছেন দীর্ঘদিন৷ তাঁকে কি কোনও বাড়তি সম্মান দিয়েছে এই বাংলা ? .......দেয়নি । কমলের কৃতিত্ব, প্রেমের জন্য তিনি তাঁর বিশাল সাম্রাজ্য ছেড়ে চলে গিয়েছেন অন্য দেশে৷ তবে প্রশ্ন তিনি কী ঢাকায় কি সেই স্বীকৃতি পেয়েছেন কোনওদিন? যা পেতেন মুম্বই বা কলকাতায়? সেটা নিয়ে ভাবেনইনি তাঁর ফিরোজার পাশে থাকবেন বলে । কাকতালীয় হলেও সত্যি, আজ দুই কিংবদন্তি ফিরোজা বেগম ও কমল দাশগুপ্তের জন্মদিবস, আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি৷ লিখেছেন লেখক,নিবন্ধকার..... স্বপন সেন.... 'ভালবাসি বাংলা' পেজে৷
সামাজিক প্রাচীর ভাঙার জন্য বারবার নাম উঠে আসে বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামাল, সামসুন্নাহারের৷ কিন্ত ফিরোজা আসার আগে সত্যিই কোনও বাঙালি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তরুণী গানে গানে মাতাতে পেরেছে গঙ্গা, পদ্মা, মেঘনার আকাশ বাতাস ? বোধহয় না! স্টুডিওতে ফিরোজার প্রথম গান শুনে নজরুল ডেকে পাঠিয়েছিলেন কমল দাশগুপ্তকে৷ ধুতি এবং হাতা গোটানো শার্টের বাঙালি স্টাইল বলতে আমরা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে বুঝি, ওটা আদতে কমল দাশগুপ্তের স্টাইল ৷ প্রথম দর্শনে ফিরোজাকে পাত্তা দেননি কমল৷ অত ছোট মেয়ে, আর তিনি তখনই বাংলার সেরা সুরকারদের একজন৷
পরবর্তী কালে কমলবাবুর সঙ্গে ফিরোজার প্রেম ছিলো কলকাতা ও ঢাকার এক অন্যতম চর্চার অঙ্গ৷ ফিরোজা কমলের তত্ত্বাবধানে প্রথম রেকর্ড করেন ১২ বছর বয়সে, ১৯৪২ সালে ৷ দু’জনের বিয়ে হয় ১৯৫৬ সালে, কমল তখন ৪৪ আর ফিরোজা ২৬৷ ফিরোজার কৃতিত্ব, তিনি সমস্ত বাধা উড়িয়ে কমলের সঙ্গে নজরুল ও আধুনিক গান করে বেড়িয়েছেন৷ এইচএমভির সেরা ট্রেনারের ট্রেনিং নিতে নিতে গলা অন্যরকম হয়ে গিয়েছে৷ কলকাতা থেকে তাঁকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় গান বন্ধ করে বিয়ে দেওয়ার জন্য৷ এক বছর ফিরোজা খাবার বন্ধ করে দিয়েছিলেন, গানও৷ অসুস্থ হয়ে প্রায় মারা যাচ্ছিলেন তবু গান ছাড়েননি,কমলকেও না৷
নজরুলের প্রায় চারশো বিখ্যাত গান সুর করেছেন কমল দাশগুপ্ত যদিও বহু লোকে জানে সেগুলো
নজরুলের সুর । আর ফিরোজা? সিনেমায় গান করব না এই গোঁ ধরে রেখে তিনি নিজেই এক ইতিহাস৷ মুম্বইয়ে বাঙালি সুরকারদের দাপটের কথা বলতে গেলে আমরা সচিন কর্তা, সলিল চৌধুরী, আর ডির কথা বলি, কমলের সুরে হিন্দি গানের তালিকা খুঁজে দেখেছেন কখনও? পাবেন এক আলিবাবার গুহা, ১৯৪২ থেকে ১৯৫১ অসংখ্য হিন্দি গান!
ক্রমে আড়ালে চলে গিয়েছেন কমল দাশগুপ্ত,আলোয় ফিরে এসেছেন ফিরোজা বেগম,কিন্ত্ত জিতে গিয়েছে বাঙালির প্রেম৷ ৷ ফিরোজার প্রেমে সুগন্ধী কমল ফুটে উঠেছিল৷ বেশ অনেক বছর আগে চলে গিয়েছিলেন কমল৷ ফিরোজার প্রতিটি কথায় বারবার ফিরে আসতেন তিনি৷ মৃত্যুর আগে বেগমের ইচ্ছে ছিল, তাঁর ‘কমলবাবু’র কবরের পাশেই যেন তাঁকে শুইয়ে দেওয়া হয়৷ ঢাকার বনানীতে কমল দাশগুপ্তের কবর বড় একাকী পড়ে আছে যে ! ২০১৪ সালে বেগমের এন্তেকালের পর সেখানে তাঁকেও শুইয়ে দেয়া হলো ।
সংকলনে—স্বপন সেন৷
©ভালবাসি বাংলা
#কমল_দাশগুপ্ত
#ফিরোজা_বেগম
তথ্য সূত্র: এইসময় ব্লগ ।
#সংগৃহীত
কোন মন্তব্য নেই