তৃণমূল জিডিপি বাড়িয়ে ঋণ নিয়ে রাজ্যকে লঙ্কার পথে নিয়ে যাচ্ছে
*সুমনা বর্ধন, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়।*
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ১১ বছরে যে ক্ষতি করে চলেছেন তার জের আগামি কয়েকশো বছরে শুধরানো যাবে না।
উনি ক্রমাগত 'মিথ্যে' বলে দঙ্গল দঙ্গল ভিখারি তৈরি করেছেন। মানসিকতা বদলে দিয়েছেন এক সময়ের সেরা জাত বাঙালীকে। যারা হাজার টাকা দামের শাড়ি পরে তারাও 'লক্ষীর ভান্ডার'এ নাম তোলাতে লাইন দিচ্ছে । 'শ্রী' যোগ করে সরকারী অর্থ হচ্ছে নয়ছয়।
তৃণমূলকে পরপর ক্ষমতায় বসিয়ে আমরা নিজেদের পায়ে কিভাবে কুড়ুল মেরেছি, তা বুঝুন :
এর পরে তৃণমূল রাজ্যসরকারের বেহিসেবী অর্থনৈতিক কাজকর্মের খেসারত আমাদের সন্তানদের বহন করতে হবে।"
ভাববেন না যে কেবল চিট ফান্ডের টাকা চুরি, চাল চুরি, রেশন চুরি, বালি চুরি, কয়লা চুরি, চাকরি বেচে চুরি এই সবের মধ্যে এনাদের চুরি বিদ্যা সীমাবদ্ধ আছে। এনারা জিডিপি ক্যালকুলেশনেও চুরি করছেন। চুরি করে রাজ্য সরকার জিডিপিকে বেশি করে দেখাচ্ছেন। রাজ্য সরকারের এই হিসাব আবার কেন্দ্রীয় সরকার মানছেন না। প্রতি বছর এমনি চলছে। কেন? না, জিডিপি যত বেশি হবে তত বেশি ঋণ নেওয়া যাবে। জিডিপি হল কোন রাজ্যের অভ্যন্তরে প্রতি বছর যে মোট উৎপাদন (কৃষি, শিল্প, প্রাণী সম্পদ সব কিছু মিলে) হয় এবং যে সেবা (ব্যাঙ্ক, বীমা, হোটেল, পরিবহন, হাসপাতাল, স্কুল কলেজ সব কিছু) চলে তার বাজার মূল্য। যার জিডিপি যত বেশি তার আর্থিক সার্মথ্য তত বেশি, ধার শোধ করার ক্ষমতা তত বেশি তাই সে তত বেশি ঋণ পাওয়ার যোগ্য। এই জিডিপি ক্যালকুলেশন করার নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে যা কেন্দ্রীয় সরকার মানছে না।
ভয় হচ্ছে, পাশের দেশ শ্রীলঙ্কাকে দেখে। খবরে পড়ছি সেখানে এখন ৫০০ টাকা চালের কিলো। এক কাপ চা ১০০টাকা। জ্বালানির অভাবে পরিবহন স্তব্ধ হয়ে আছে। দিনে ১৭/১৮ঘন্টা লোডশেডিং করানো হচ্ছে। আসুন নজর দিই।
বুদ্ধবাবু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বিধান সভায় একটি বিল পাশ করানো হয়। এফআরবিএম আইনের সংশোধনী বিল। তাতে বলা হয় জিডিপির ৩% এর বেশি রাজ্য সরকার আর্থিক বছরে ঋণ নিতে পারবে না। গত মাসে বর্তমান রাজ্য সরকার ঐ আইন সংশোধনের জন্য বিল এনেছেন। এখন আর ৩% না সরকার জিডিপির ৫% ঋণ নিতে পারবে।
২০১১তে যখন ইনিংস শুরু করেন তখন রাজ্য সরকারের ১৯৪৭ সাল থেকে ৬৪ বছরে পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ ছিল ₹১,৮২,৩৮৭ কোটি টাকা। আর তার পরের দশ বছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে হল ₹৫,২৮,৮৩৩ কোটি টাকা, এই বছরে তা ₹৫,৬২,০০০ ছাড়িয়ে যাবে বলে সরকার বিধানসভায় ঘোষণা করেছেন। প্রতি মাসে যেরকম তিনবার করে বাজার থেকে ধার নেয়া হচ্ছে, আমার হিসাবে ওটা ₹৫,৮০,০০০ কোটি মত দাঁড়াবে। ৬৪ বছর ধরে মোট ঋণ হল ₹১,৮২,৩৮৭ কোটি আর তার পরের দশ বছরে উনি ঋণ করলেন ₹৩,৪৬,৪৪৬ কোটি, ১১ বছরে। সব থেকে যেটি চিন্তার সেটি হল, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ এইভাবে কোথায় বিনিয়োগ করেছেন ; উনি অর্থ খরচ করেছেন সেই সব খাতে, যেখান থেকে কোন রিটার্ন আসবে না অর্থাৎ কোন রাজস্ব আদায় হবে না। বিপদটা সেখানেই সব থেকে বেশি। দু একটি রাজ্যের এর থেকে বেশিও ঋণ আছে কিন্তু তাদের জিডিপি আমাদের থেকে অনেক বেশি। আমাদের জিডিপি যা দেখানো হচ্ছে তার মধ্যেও জল মেশানো আছে। তাই অবস্থা খুবই ভয়াবহ।
অবস্থা দেখে এইবার আর কেউ অর্থমন্ত্রীই হতে রাজি হননি। হিসাব অডিট করেন মুকুল রায় তিনি আবার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর অপ্রকৃতিস্থ। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন আগামী দিনে সরকারি কর্মচারীদের বেতন এবং পেনশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ঠিকাদাররা রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা পাওনা নিয়ে শিবনেত্র হয়েছেন।
বেসরকারি ছোট হাসপাতালগুলো স্বাস্থ্যসাথীর কোটি কোটি পাওনা নিয়ে বন্ধ হতে যাচ্ছে। কোষাগার শূন্য। ওঁনার আমলে তৈরি সমস্ত প্রকল্পে অর্থের যোগান অব্যাহত রাখতে আরও বেশি বেশি করে ঋণ করতে হবে। তাই আইন পরিবর্তন করা হচ্ছে, তাই জিডিপি কে অস্বাভাবিক ভাবে বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। এই চালাকির মূল্য চোকাতে হবে আমাদের, আমাদের সন্তানদের। তাই আমরা শঙ্কিত।
*সুমনা বর্ধন, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়।*
এই পোস্টটা একজন পাঠিয়েছেন। ফরোয়ার্ড করা হলো এই কারণে যে এত পুঙ্খানুপুঙ্খ ধারণা আমাদের নেই। অথচ এসব যদি সত্যি হয় তা হলে এ রাজ্যে ভয়াবহ দিন আসছে। মানুষের মানসিক প্রস্তুতির দরকার আছে।
😳😔😔😳
*পাওয়া*
কোন মন্তব্য নেই