বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কি নেতাজি নন?তবে কেন মুজিবর রহমানের নাম আসছে
রুদ্র প্রসন্ন ব্যানার্জী গবেষক ওয়াসিংটন: শেখ মুজিবুর তো দেশ ভাগের সমর্থনেই ছিলেন, তাই না? দেশ ভাগের পরেও তো দিব্বি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে ছিলেন। যখন ভোটে জেতার পরেও পশ্চিম-পাকিস্তান ওনাকে প্রধানমন্ত্রী হতে দিলোনা তখন উনি ভাষাকে হাতিয়ার করে নতুন রাষ্ট্র গঠনের জন্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হলেন। তাহলে ওনার প্রথম পরিচয় ছিল একজন মুসলিম তারপরে বাঙালি। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, মুক্তি-যুদ্ধের সময় যেসব হিন্দু-বাঙালিরা বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে শরণার্থী হিসেবে এসেছিলেন তাদের নিজেদের ভূমিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো প্রচেষ্টা তিনি করেননি। উল্টে ১৯৭১ অব্দি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যা পরে বাংলাদেশ হয় সেখানে হিন্দুদের উপর ঘটে যাওয়া সমস্ত গণ হত্যা তিনি হয় সমর্থন করেছিলেন নাহলে প্রতিবাদ করেন নি। এরকম একজন গণহত্যার সমর্থক এবং ক্ষমতা লোভী একজন মানুষকে কিভাবে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে ?
যদি বাংলা ভাষায় কথা বলায় বাঙালি হওয়ার একমাত্র মাপকাঠি হয়ে থাকে তাহলে নেতাজি সুভাষ বসু যেভাবে প্রায় একক ক্ষমতায় ভারতবর্ষের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভীত নাড়িয়ে দিয়ে সরাসরি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অখণ্ড ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তাতে উনাকেই সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বলে বিবেচনা করা উচিত। আর যদি শান্তি স্থাপনের দিক থেকে বিবেচনা করা হয় তাহলে ১৮৯৩ এ শিকাগোর বিশ্ব ধৰ্ম সম্মেলনে যে সর্বত্যাগী হিন্দু সন্যাসী ধর্মের বেড়াজাল ভেঙে দিয়ে ইউনিভার্সাল রিলিজিয়ন এর প্রস্তাব রেখেছিলেন সেই স্বামী বিবেকানন্দকে সর্বকালের সেরা বাঙালি মেনে নেওয়া উচিত। আর যদি স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জোগানোর দিক থেকে বিচার করা হয় তাহলে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নাইট উপাধি ত্যাগ করা বা বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাবের বিরোধিতা করা নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে মেনে নেওয়া উচিত। বিজ্ঞানের বিষয় বিবেচনা করলে জগদীশ চন্দ্র বসু বা সত্যেন্দ্রনাথ বসু অবশ্যই এগিয়ে থাকবেন। কিন্তু কোনোভাবেই কয়েক কোটি হিন্দুকে শরণার্থী বানানো শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে মেনে নেওয়া যায়না।
এখন প্রশ্ন হলো বিবিসি এর ভোটাভুটিতে কিভাবে শেখ মুজিবুর কে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ঘোষণা করা হলো ? বিবিসি এর প্রকাশিত সেই লিস্টে ২০ তম স্থানে রয়েছেন ১৯৪৬ এর গ্রেটার কলকাতা কিলিং এর মহানায়ক সোহরাওয়ার্দী। এটা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে যারা ভোট দিয়েছিলেন তাদের বৃহৎ সংখ্যা ছিল বাংলদেশী মুসলিম। যদি এই ধারণায় সত্যি হয় তাহলে ভারতীয় বা মূলত পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা তা মেনে নিলো কেন ? খুব সহজ উত্তর হলো গত ৪৪ বছর ধরে আমাদের রাজ্যকে সাম্যবাদের গবেষণাগার হিসেবে ব্যবহার করে আমাদের মানে হিন্দু বাঙালিদের অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের তাই আওয়াজ তোলার মতন কোনো অবস্থা বর্তমানে নেই। সিনেমাকে মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহার করে জনসমাজের সামনে বার্তা তুলে ধরা যেতে পারতো কিন্তু এখন আমাদের রাজ্যের চিত্রপরিচালকরা আরব সাম্রাজ্যবাদের কাটা কলা মুখে ঢুকিয়ে বাংলাদেশের মার্কেটের কথা মাথায় রেখে হিন্দু ধর্মকে ছোট করে দেখিয়ে সিনেমা বানান।
বাস্তব সত্যি হলো হিন্দু বাঙালির হাতে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক অবস্থা আর নির্ভরশীল নয়। আর যতদিন নবান্নকে বিদেশে বসে থাকা বামপন্থী অর্থনীতিবিদদের গবেষণাগার হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হবে ততদিন আমাদের মাথা নিচু করেই থাকতে হবে কারণ আজকের দিনে অর্থনীতিই সবকিছুর নিয়ন্ত্রক।
আর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো আমাদের রাজ্যের ৩৪ বছরের বাম শাসন ব্যবস্থায় কালচারাল মার্ক্সিজমকে হাতিয়ার করে মানুষকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে যে ওপর বাংলা থেকে লাথি খেয়ে মা বোনেদের ইজ্জত বাঁচাতে কেন চলে আস্তে হয়েছিল শ্যামাপ্রসাদের তৈরি করা পশ্চিমবঙ্গে ? যে জ্যোতি বসু মুসলিম লীগের সমর্থনে ১৯৪৬ এ বেঙ্গল-অসম রেলওয়ে এমপ্লয়ীজ এর ভোট লড়েছিল সেই জ্যোতি বসুর উত্তরসূরিরা যদি ইতিহাস বোঝাতে আসেন তাহলে তোজোর কুকুর বা বুর্জুয়া কবি হিসেবে আমাদের মনীষীদের অপমান করা ছাড়া আর যে কোনো উপায় ছিলোনা। তাই অর্থনীতির সাথে আমরা সংস্কৃতি গত ভাবেও দেওলিয়া হয়ে গেছিলাম আর এখন তো আবার অনুপ্রেরণায় বিশ্ববিদ্যালের আচার্য্য থেকে সাহিত্য একাডেমী সবজয়গাতেই ওনার অগাধ পান্ডিত্য দেখতে হচ্ছে। তাই আর বেশি না ভেবে বাঙালি হিসেবে নিজেদের লজ্জাবোধ আর একটু বাড়িয়ে নি - কি বলেন আপনারা !
রুদ্র প্রসন্ন ব্যানার্জী
গবেষক, ওয়াশিংটন।
কোন মন্তব্য নেই