Header Ads

কলকাতার যে রাস্তায় মানুষ কে গাছে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেওয়া হত

*ফ্যান্সি লেন*                                 আজও অতীতের নির্মম মৃত্যুদণ্ডের সাক্ষ্য দেয় কলকাতার এই রাস্তা।       ধর্মতলা থেকে রাজভবন হয়ে এগোতে শুরু করলে অফিসপাড়ার দিকে যে এলাকা, এই জায়গা তখন শুধু নির্জন রাজপথ। রাজভবনের প্রধান ফটকের উলটো দিকে, কলকাতার ওয়েলেসলি প্লেস থেকে কাউন্সিল হাউজ পর্যন্ত এই রাস্তাটিকে তখন বলা হত ‘ফ্যান্সি লেন’। নাম বদলে এখন পান্নালাল ব্যানার্জী স্ট্রিট। এই ‘ফ্যান্সি’ মানে কিন্তু ‘শৌখিন’ নয়। ‘গোরা’দের উচ্চারণের গেরোয় ফাঁসি হয়ে গেছিল ‘ফ্যান্সি’। এই রাস্তার নামের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে এক নির্মম ইতিহাস।    আঠেরো শতকের শেষদিকে, সুপ্রিম কোর্ট শুরু হওয়ার আগে প্রচিলত বিচারব্যবস্থায় সবার নীচে ছিল জমিদারের বিচার। এই ‘জামিদারের সালিশি’ সভায় ফাঁসির আদেশ দেওয়া হত সাধারণ মানুষকে। ফাঁসিতে লটকানো হতো এই ফ্যান্সি লেনেই। যায়গাটা তখন জনপথ ছিল না, ছিল জঙ্গলঘেরা একটা মেঠো পথ। তার পাশ দিয়ে বয়ে যেত একটা নদী বা খাল, তার নাম ছিল ‘হেস্টিংস নদী’। পরবর্তীতে যেটা বুজিয়ে হয়েছিল হেস্টিংস স্ট্রিট,  আর এখন তা পাল্টে হয়েছে কিরণশঙ্কর রায় রোড।                                               কলকাতায় ব্রিটিশ শাসনের গোড়ার দিকে যথেচ্ছ ফাঁসি দেওয়া হত। লঘু অপরাধে গুরু শাস্তি। মধ্যযুগীয় রীতি অনুসরণ করে এই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত প্রকাশ্যে। এমনকি, মৃত্যুর পরে সেই নিথর দেহ ঝুলিয়ে রাখা হত। কয়েকটা বড়ো গাছ, যার ডালে লটকে ফাঁসি দেওয়া হ’ত সামান্য কারণে। তবে শুধু উঁচু গাছই নয়। ফ্যান্সি লেনে তৈরি হয়েছিল ফাঁসির মঞ্চও। আজ যেখানে ওল্ড কাউন্সিল হাউজ স্ট্রিট, সেখানেই তৈরি হয়েছিল ফাঁসিকাঠ। এরপর ফাঁসির সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছিল।                               ১৮০০ সনে ব্রজকিশোর নামে এক ব্যক্তিকে পঁচিশ টাকা দামের একটা ঘড়ি চুরির অপরাধে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল এখানে। ফ্যান্সি লেনের গাছের ডালে এভাবে কত ব্রজকিশোরকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল, কত দীর্ঘশ্বাস আর কান্নার স্মৃতি বয়ে বেড়াত এই মেঠোপথের মাটি তার হিসাব নেই! রাস্তার নাম বদলের সঙ্গে সঙ্গে মুছে গেছে সেই ইতিহাস।                                          ছোটখাটো চুরি ছিনতাই বা রাহাজানিতেও প্রাণদণ্ড দেওয়া হত। কোম্পানির লোক রীতিমতো ঢেঁড়া পিটিয়ে ঘোষণা করত অমুক দিন তমুকের ফাঁসি হবে। কলকাতার যে পথে লম্বা গাছ বেশি ছিল, তাকেই ফাঁসির মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছিল ব্রিটিশ শাসকরা।                              সাধারণ ছাপোষা মানুষ, যাদের কপালে সুবিচার জুটতো না, জটিল ও অর্থবহুল বিচারপ্রক্রিয়ার মধ্যে না ঢুকে তাদের মনে হত এর থেকে বোধহয় মৃত্যুই ভাল। ব্রিটিশ হুকুমে দিনের আলোয় প্রকাশ্যে তাঁদের ফাঁসি দেখতে ভিড় করতেন বহু মানুষ।        কলকাতার কত গলিপথ, লেন-বাইলেন আজও আছে যেগুলোর নাম আমরা জানি না। পাল্টে যাচ্ছে সেইসব রাস্তার নাম আর সেইসঙ্গে মুছে যাচ্ছে সামাজিক ইতিহাস বা প্রেক্ষাপট।( মানস চৌধুরী র সৌজন্যে)

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.