Header Ads

অসম বিধানসভায় 126 জন বিধায়ক লাভলিনার খেলা উপভোগ করলেন

 


অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : গতকাল ছিল অলিম্পিকে পদক লাভ করা লাভলিনা বরগোঁহাইয়ের ঐতিহাসিক দিন। রাজ্য জুড়ে তাকে নিয়ে উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা, অসম বিধানসভার অধিবেশন পর্যন্ত তাতে প্রভাব পড়েছিল। বিধানসভা উপাধ্যক্ষ ড. নুমল মােমিনের প্রস্তাব লুফে নিয়ে অসম বিধানসভা অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ দৈমারি টকিওতে অলিম্পিকের রিঙে নামার সময় খেলা শেষ পর্যন্ত আধ ঘণ্টার জন্য বিধানসভা স্থগিত রাখা হয়েছিল। বিধানসভার ১২৬ জন বিধায়করা টিভির বড় পর্দায় সেই ঐতিহাসিক খেলা উপভােগ করলেন। শুরুতে অধ্যক্ষ বিধানসভা স্থগিত রাখার কথা ঘােষণা করে সদস্যদের অনুরােধ করেছিলেন, লাভলিনার জন্য প্রার্থনা করুন যাতে তিনি বিজয়ী হতে পারেন। গতকাল লাভলিনা টকিওর রিঙে তুরস্কের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বুসেনাজ সুর মেনেলির কাছে পরাজয় বরণ করেও ব্রঞ্জ পদক লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি অসম কন্যা লাভলিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। তিনি টুইট বার্তায় বলেন, দেশের নারী শক্তির উদয় হল। উত্তর-পূর্বাঞ্চল সহ দেশের মুখ উজ্জ্বল করল অসম কন্যা লাভলিনা। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, ১২৫ বছর ইতিহাসে লাভলিনার নাম সােনালী অক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি অসমবাসীকে গৌরবান্বিত করলেন। বলেন, তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করে সম্মান জানানাে হবে। আগামী ৯ আগস্ট তিনি গুয়াহাটি ফিরবেন। গুয়াহাটি বিমানবন্দরে লাল কার্পেট পেতে তাকে স্বাগত জানানাে হবে। সেখান থেকে গুয়াহাটির ফাইভস্টার হােটেল তাজ বিভান্তে আনা হবে। শংকরদেব কলাক্ষেত্রে তাকে সরকারিভাবে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। রাজ্যিক পর্যায়ে সংবর্ধনার চিন্তা চর্চা চলছে। গােলাঘাটের ডেপুটি কমিশনারের তত্ত্বাবধানে তিনি থাকবেন। তাকেখেল রত্নপ্রদান করার সুপারিশ করা হবে কেন্দ্রের কাছে। এদিকে, লাভলিনা। বরগোঁহাই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অসমবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, তিনি সন্তুষ্ট, তার প্রতিপক্ষ ছিল শক্তিশালী। তিনি তার কোচ কলকাতার মহম্মদ আলী কামারকে দ্রোণাচার্যউপাধি দেওয়ার সুপারিশ করবেন বলে জানিয়েছেন। | আজ বিধানসভায় অসম-মিজোরাম সংঘর্ষ নিয়ে আলােচনাকালে বিধানসভা উত্তাল হয়ে উঠে। কংগ্রেসের কমলাক্ষ্য দে পুরকায়স্থ মিজোরামের অসমের জমি দখল এবং হত্যা নিয়ে সরকারের কাছ থেকে স্পষ্টিকরণ চান। কংগ্রেসের কমলাক্ষ্য দে পুরকায়স্থ, সিদ্দিক আহমেদ, ভরত নরহ, দেবব্রত শইকিয়া, রকিবুল হুসেইন, এআইইউডিএফ-এর আমিনুল ইসলাম, রাইজর দলের একমাত্র বিধায়ক অখিল গগৈ প্রমুখ হাতে হাতে প্লেকার্ড নিয়ে প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার অনুপস্থিতিতে মন্ত্রী পিযুষ হাজরিকা লিখিতভাবে জানান, মুখ্যমন্ত্রী পুরাে ঘটনা প্রত্যক্ষভাবে তদারকি করেছেন। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যেতে দেন নি। তিনি সীমানা নিয়ে কোনােভাবেই সমঝােতা করেননি। বলেন, বিগত কংগ্রেস আমলে রাজ্যের সীমান্ত অঞ্চলগুলিতে অনের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। কংগ্রেসের দেবব্রত শইকিয়া, রকিবুল হুসেইন প্রমুখ অভিযােগ করেন, তাদেরকে মিজোরাম সীমান্তে যেতে দেওয়া হয়নি। কংগ্রেস, এআইইউডিএফ, রাইজর দল বিধানসভায় হুলস্থূল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন। সবাই মিলে অধ্যক্ষের ওয়েলের কাছে ছুটে যান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ দৈমারি ৪০ মিনিটের জন্য বিধানসভা মুলতুবি করে দেন। বিরােধীরা সরকারের জবাবে অসন্তোষ প্রকাশ করে ওয়াকআউট করে। বিধানসভা ৪০ মিনিটের পর আরও ৩০ মিনিট অলিম্পিকের খেলা দেখার জন্য স্থগিত ছিল। বিধানসভার শুরুতে অধ্যক্ষ মিজোরাম-অসম সীমান্তে নিহত পুলিশ কর্মীদের প্রতি শােক প্রকাশের জন্য এক মিনিট নিরবতা পালন করার নির্দেশ দেন। সব সদস্য উঠে দাঁড়িয়ে এক মিনিট মৌনব্রত পালন করেন। রাজ্যের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, নামকরা লেখিকা ড. অনিমা গুহর প্রতি শােক প্রকাশ করা হয়। রাজ্যের বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ড. অমলেন্দু গুহর পত্নী অনিমা গুহর সাহিত্য সাধনা নিয়েও আলােকপাত করেন অধ্যক্ষ এবং বিশিষ্ট অধ্যাপিকা নিরু হাজরিকার মৃত্যুতে শােক প্রকাশ করা হয়।

বিধানসভায় কৃষি বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে কংগ্রেস দল সরব হয়ে উঠে। বিরােধী দলপতি দেবব্রত শইকিয়া রাজ্য কৃষি বিভাগের ব্যাপক দুর্নীতি নিয়ে সরব হন। প্রধানমন্ত্রীর কৃষক কল্যাণ যােজনার টাকা রাজ্যের আট লক্ষ কৃষককে না দিয়ে ভুয়া কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তিনি এই ঘটনায় সিবিআই-র তদন্তের দাবি জানান। কৃষিমন্ত্রী অতুল বর এই দুর্নীতির কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, সরকার বরপেটা, মঙ্গলদৈ সহ বিভিন্ন স্থানে ভুয়া কৃষকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিল করেছেন। প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কংগ্রেসের ভরত নরহ, রকিবুর হুসেইন, ওয়াজেদ আলী চৌধুরী প্রমুখ কৃষিমন্ত্রীর জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তারা সিবিআইর তদন্তের দাবিতে গাে ধরে থাকেন। কংগ্রেসের নিজাম উদ্দিন অভিযােগ করেন, বছরে ছ'শাে কোটি টাকার কৃষি বীজ ক্রয় করা হয়। এক বৃহৎ পরিমাণ কৃষিবীজ নষ্ট। তা থেকে ফলন হয়না। বিধানসভায় দুর্গাদাস বড়াের এক প্রশ্নের জবাবে আবগারি বিভাগের মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য জানান, গুয়াহাটি মহানগরে ২১৬টি মদের বার, ৩০৫টি বিলেতি মদের দোকান আছে। দুর্গাদাস বড়াে অভিযােগ করেন, ৯০ শতাংশ মদের দোকানের মালিক অন্যদের হস্তান্তর করে দিয়েছে। সরকার ব্যবসা করছে। কর্ম সংস্থানের কোনাে ব্যবস্থা নেই। রকিবুল হুসেইনের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, গুয়াহাটি মহানগরে নির্দিষ্ট সময়ে মদের দোকান খােলে। বলেন, অরুণাচল মদের বিপরীতে সরকার কোনাে রাজস্ব পায় না। সেই অরুণাচলী মদ বাজেয়াপ্ত করার ব্যবস্থা করেছে সরকার। অগপর রমেন্দ্র নারায়ণ কলিতার এক প্রশ্নের জবাবে মৎস্য বিভাগের মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য জানান, ২০১৫-১৬ সালে যেখানে রাজ্যে মাছ উৎপাদন হয়েছিল ২,৯৪ লাখ টন। সেক্ষেত্রে বর্তমান ২০২১ অর্থ বছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩.৯৩ লাখ টন। ২০১৫-১৬ সালে পােনা মাছ উৎপাদিত হয়েছিল ৫৬৭৮০টন। ২০১৭-১৮ বর্ষে উৎপাদিত হয়েছে ৮০০০০ মেট্রিক টন। তিনি জানান, ২০১৬-১৭ সালে মাছ আমদানি করা হয়েছিল, ১২৬-১৮ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ সালে আমদানি করা হয়েছে ১২৮২৯ মেট্রিক টন। এআইইউডিএফের সিরাজ উদ্দিন আজমলের এক প্রশ্নের জবাবে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য জানান, গত পাঁচ বছরে রাজ্যে ২২টি গণ্ডারকে হত্যা করা হয়েছিল। কাজিরাঙাতে ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৭টি গন্ডার হত্যা করা হয়েছিল। ওরাঙে ৩টি গণ্ডার হত্যা করা হয়েছিল। গন্ডার হত্যা বন্ধের জন্য সরকার বিভিন্ন কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফাস্ট ট্র্যাক কোট বসিয়ে দ্রুত শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৪৪ জন চোরা শিকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বনমন্ত্রী জানান, রাজ্যে ১২৩৩২৪টি অগরু গাছের চারা, ১৯৬৭২৬টি চন্দন গাছের চারা এবং ৩৪০৭৫৭টি গামারি গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। জানান, অসমে সর্বমােট ৩১২টি সংরক্ষিত বনাঞ্চল আছে। তার জমির পরিমাণ হচ্ছে ১৩,৫৯,০২৬,৭০ হেক্টর। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বেদখলকৃত জমির পরিমাণ হচ্ছে ৩৬৩১৪২.২০ হেক্টর। রাজ্যের ৭২টি সংরক্ষিত বনাঞ্চল প্রতিবেশি রাজ্য নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম এবং অরুণাচল সীমান্তে আছে। তার পরিমাণ ৬৫৯১.৯২ বর্গ কিলােমিটার। প্রদীপ হাজরিকার প্রশ্নের জবাবে বনমন্ত্রী একথা জানান।

বিধানসভায় অমিয় কুমার ভূঞার এক প্রশ্নের জবাবে অসম চুক্তি রূপায়ন বিভাগের মন্ত্রী অতুল বরা জানান, বিগত অসম আন্দোলনের সময় ৮০৫জন শহিদকে ৫ লাখ টাকা করে এবং ৩২৭ জন গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির পরিবারকে দুলাখ টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। এবং অসম আন্দোলনে নির্যাতিত পরিবারের ৫২৩ জন সদস্যকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.