Header Ads

চোখের জল লুকিয়ে 28 আগস্ট বিদায় বেলায় শিবরাম চক্রবর্তী বলে গেলেন ফার্স্ট ক্লাস আছি


যাবার আগে শুধু বললেন,  
" ফার্স্টক্লাস আছি।"

শিবরাম চক্রবর্তীর জীবন হল এক বাউন্ডুলের জীবন।
বাউন্ডুলেরা হল চির  পলাতক।
সেই "পলাতক " সিনেমায়  অনুপকুমারের লিপে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের  গান মনে পড়ে? 
" জীবন- পুরের পথিক রে ভাই 
কোথাও আমার সাকিন নাই।
কোথাও আমার মনের খবর  পেলাম না।"
এই নানা মানুষের মনের খবর নেওয়ার জন্যেই  শিবরাম একদিন ঘর ছেড়েছিলেন।
নানারূপে শিবরাম চক্রবর্তীকে একঝলক দেখে নেওয়ার জন্যে আজ আমার এই নিবেদন। 

কি না করেছেন এক জীবনে? ভাবলে অবাক হয়ে যেতে হয়!
স্কুল জীবনে স্বদেশী বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।
একদিন এক  সভায় এক ইংরেজ সায়েবকে মারার জন্যে শিবরামকে দায়িত্ব দেওয়া হল।
যেই পকেট থেকে পিস্তল বার করেছেন এমন সময় মঞ্চে   মাইকে ঘোষণা হল এখন উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করবে শিবরাম চক্রবর্তী। 
পিস্তল পকেটেই রয়ে গেল।
সায়েবকে গুলি করা আর  হল না।
শিবরামের ভাষায় "GUN"  হয়ে গেল,  " গান।"

এরপর কলকাতায় এলেন শিবরাম চক্রবর্তী। 
জীবনযুদ্ধ শুরু হল।
ফুটপাতে রাত্রিবাস থেকে শুরু করে একদিন মুক্তারাম স্ট্রিটের  মেসবাড়িতে এলেন শিবরাম চক্রবর্তী।  
 শুরু হল নানা জীবিকা। 
  রাস্তায় রাস্তায় কাগজ বিক্রি থেকে শুরু করে সাহিত্য রচনা, সংবাদপত্রে লেখালেখি,  সম্পাদনা, প্রভৃতি কাজ করতে লাগলেন।
হাসি -  মজার লেখার সঙ্গে,  শিবরামের ভোজন বিলাস সমানে পাল্লা দিয়ে   চলতে লাগল।
মিষ্টি আর রাবড়ি পেলে আর কোন কথাই নেই।

শিবরাম চক্রবর্তী তখন যুগান্তরের  সম্পাদক।
কাগজে লেখালেখির জন্যে ইংরেজের চক্ষুশূল হলেন।
কারাবাস হল প্রেসিডেন্সি জেলে। 

এরপর একদিন  বদলি হয়ে এলেন বহরমপুর জেলে।
সেখানে তখন  কাজী নজরুল ইসলাম রাজবন্দী।
 নজরুল সেখানে  গান গেয়ে,  
হৈ হৈ রৈ রৈ করে সবাইকে নিয়ে  জমাটি আড্ডা বসিয়েছেন। 

শিবরাম মনের মত তাঁর মানুষকে পেয়ে গেলেন। 
প্রেসিডেন্সি জেলে দু'বেলা  অখাদ্য খাবার খেয়ে শিবরামের  মুখ অরুচি হয়ে গেছল। 
নজরুল ইসলাম ভাল রান্না করতে পারতেন।
এখানে নজরুল রাজবন্দীদের রান্নার  দায়িত্বে ছিলেন।
শিবরাম চক্রবর্তী লিখছেন অনেকটা এইরকম,
 মনে পড়লে এখনও জিভে জল আসে।
আমি তো বহরমপুর জেলে আসার আগে পর্যন্ত  টিঙটিঙে রোগা ছিলাম। 
তারপর দুইবেলা কাজির খানা খেয়ে এমন মোগলাই চেহারা নিয়ে বেরলাম যে আর রোগা হলাম না।
জেলখানায় আর  জেলের খানায় গড়া এই চেহারা এতটুকু টসকায়নি।
এই হলেন জীবনরসিক শিবরাম চক্রবর্তী। 

শিবরামের জীবনেও বসন্তের ছোঁয়া  এসেছিল।
সেই কিশোরীর নাম ছিল রিনি।
 কিশোরবেলা থেকে সেই প্রেমের শুরু।
তারপর সেই রিনিও একদিন   শিবরামের  জীবন থেকে হারিয়ে গেল!
পলাতক কি কখনও ঘর বাঁধে?

এজন্যই কি শিবরাম চক্রবর্তী মুক্তারাম বাবু   স্ট্রিটের মেস বাড়িতে একাকী  জীবনটা কাটিয়ে দিলেন? 

জীবনে অনেক বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। 
কোনদিন একটি অভিযোগের আঙুল কারো দিকে তোলেননি।
হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন সেইসব।
 
শিবরাম চক্রবর্তী তখন মৃত্যুর পথে। 
সেদিন ছিল১৯৮০ সালের ২৮ অগাস্ট। 
মৃত্যুর পাঁচমিনিট আগে ডাক্তারবাবু জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছেন শিবরাম বাবু?
শিবরাম চক্রবর্তী বললেন,
"  ফার্স্টক্লাস।"
মৃত্যুর সময়ও কাউকে নিরানন্দ  করলেন না।
বিদায়বেলায় হাত নাড়তে নাড়তে চলে গেলেন!

আজ শিবরাম চক্রবর্তীর  মৃত্যুদিনে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা রইল।
   
তথ্য সূত্রঃ
শিবরাম চক্রবর্তীর লেখা আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস / ঈশ্বর পৃথিবী ভালবাসা/
ভালবাসা পৃথিবী ঈশ্বর। 
কিছু সাহিত্য পত্রিকার প্রবন্ধ।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.