Header Ads

আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বিতর্ক একটি দুর্ভাগ্যজনক এপিসোড !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়

কেন্দ্র-রাজ্যের ইগো’র টানাপোড়েনে বেজায় বিড়ম্বিত হতে হল রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। রাজ্যের প্রাকৃতিক বিপর্য্যয়ের প্রেক্ষিতে পিএমও থেকে কলাইকুণ্ডাতে যে রিভিউ মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়েছিল তাতে প্রধানমন্ত্রীই মধ্যমণি ছিলেন। ঐ মিটিংয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এবং এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় ঐ মিটিংয়ে যে ছিলেন না--ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই সেটাও সকলেরই জানা। কিন্তু বিরোধী দল নেতাটির নাম যেহেতু শুভেন্দু অধিকারী--সুতরাং কিছু অনাবশ্যক কূট প্রশ্ন উঠবে না এমনটা তো হওয়ার জো নেই কোনোক্রমেই। হলেই বা তিনি দু’কোটি ২৭ লক্ষ মানুষের প্রতিনিধি বিরোধী দলনেতা ! দু’কোটি ৮৭ লক্ষ মানুষের প্রতিনিধি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মুখোমুখি দেখার বা হওয়ার আপত্তি থাকবে--এটাই সাম্প্রতিক রাজনীতির স্বাভাবিক প্রবণতা। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস দলের মিলিতভাবে যতদূর মনে হয় ৭৪ জন বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাদের নির্বাচনী এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠক-ই হোক বা কোনো সরকারি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক--সংশ্লিষ্ট বিরোধী জনপ্রতিনিধিরা ডাক পেয়েছেন এমন বদনাম কেউ দিতে পারবেন বলে মনে হয় না। ২০২১-এর নির্বাচনের পরেও যে সেই ট্র্যাডিশন একটুও নড়বে না তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে আলিপুরদুয়ারে মন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে জেলার নির্বাচিত পাঁচ বিধায়ককে ব্রাত্য রেখে জেলার তৃণমূল নেতাদের অত্যন্ত দৃষ্টিকটূভাবে গুরুত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে।
কলাইকুণ্ডার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রিভিউ মিটিংয়ে সঠিক সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিত না থাকা নিয়ে পিএমও এবং নবান্নের যে তরজা সামনে উঠে এসেছে তার সত্যতা বা যাথার্থতা প্রমাণের ক্ষমতা আমাদের মতো চুনোপুঁটিদের নেই। কিন্তু এই তরজা বা কেন্দ্র-রাজ্যের টানাপোড়েনে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় যে যারপরনাই বিড়ম্বিত হলেন তা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকছে না। আলিপুরদুয়ার থেকে কলাইকুণ্ডা হয়ে যে নিশ্চিত বার্তাটি ছড়িয়ে পড়লো তা থেকে বুঝতে মোটেও অসুবিধে হচ্ছে না যে রাজ্য বিধানসভায় দু’কোটি ২৭ লক্ষ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন যে ৭৫ জন বিরোধী বিধায়ক তারা ব্রাত্যই থেকে যাবেন প্রশাসনিক বৈঠক থেকে যে কোনো সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণের প্রশ্নে। এমনটাই সাম্প্রতিক রাজনীতির প্রতিষ্ঠিত রীতি। রাজনৈতিক মহলের একাংশ তাই কলাইকুণ্ডার রিভিউ মিটিং প্রসঙ্গে এই মন্তব্যই করেছেন যে--রিভিউ মিটিংয়ে যদি বিরোধী দলনেতা (রাজ্য বিধানসভার স্পীকার স্বীকৃত) শুভেন্দু অধিকারী না থাকতেন তাহলে মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের টাইমিংয়ের কোনো সমস্যা হত না। মুখসচিবও বিড়ম্বনায় পড়তেন না--মুখ্যমন্ত্রী যে মিটিংয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ সেই মিটিংয়ে যদি মুখ্যমন্ত্রী না থাকেন তাহলে মুখ্যসচিব কি করে থাকেন--অথচ রাজ্যেরই প্রাকৃতিক বিপর্য্যয় সংক্রান্ত রিভিউ মিটিংয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সভাপতিত্ব করছেন কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে মুখ্যসচিব হাজির থাকতে পারছেন না সেখানে ! বিষয়টি কিন্তু মোটেও স্বাভাবিক বা ডিপ্লোম্যাটিক নয়--তা কতটা বিড়ম্বনার সেটা আলাপনবাবু নিজে যতটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন--আর বিশেষ কেউ পেরেছেন বলে মনে হচ্ছে না। আলাপনবাবু তাই অনিবার্য্য সিদ্ধান্তের মুখে দাঁড়িয়ে এক্সটেনশন প্রত্যাখ্যান করে অবসরকেই বেছে নিয়েছেন। দু'প্রান্তে দুজনের দু’হাতে ধরে থাকা দড়ির মাঝখানে ঝুলে থাকা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না।
প্রকৃতপক্ষে দেখতে গেলে দেখা যাচ্ছে--আলাপনবাবুর চেয়েও বেশ খানিকটা বিড়ম্বিত হতে হল কেন্দ্রকেই। এক্সটেনশন মঞ্জুর করার পরেও (তিন মাসের) তাঁকে রাতারাতি দিল্লীতে তলব করার মধ্যে আর যাই থাক উচ্চমেধার প্রশাসনিক প্রতিভার পরিচয় প্রতিফলিত হয় নি। রাজ্যে একদিকে করোনা’র প্রাবল্যের বিরুদ্ধে লড়াই অন্যদিকে প্রকৃতিক দুর্য্যােগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মুখ্যসচিবের প্রয়োজনীয়তা যেখানে অত্যন্ত জরুরি বিবেচনা করে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে এক্সটেনশন দেওয়ার আবেদন জানালেন তাঁর সেই আবেদন মঞ্জুর করেও মুখ্যসচিবকে তলব করে কেন্দ্র যা বোঝাতে চাইল তাতে মুখ্যমন্ত্রীকে জব্দ করা গেল না--বরং মুখ পুড়লো কেন্দ্রেরই। মুখ্যসচিব এক্সটেনশন প্রত্যাখ্যান করে অবসরে গেলেন--অবসরে না গেলে তাঁকে আইন-আদালতের দুর্বিপাকে পড়তে হতো সম্ভবতঃ--সুতরাং মুখ্যমন্ত্রী প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ১ জুন থেকেই তিন মাস-ছ’মাস নয়--একেবারে তিন বছরের জন্যে নিজের মুখ্য উপদেষ্টার পদে তাঁকে বসিয়ে দিলেন ! ইদানীং অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস-আইএএসদের যেভাবে পুরস্কৃত করা হচ্ছে তাতে এটা নতুন কিছু নয় যদিও--কিন্তু আলাপনবাবু সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর গৃহীত সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকারের মুখ পোড়ালো নিঃসন্দেহে। আলাপনবাবু ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টার পদেই বহাল তবিয়তে থাকবেন--কিচ্ছু করার থাকবে না কেন্দ্রের ! একজন উচ্চশিক্ষিত মেধাবী অভিজ্ঞ আইএএস মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে যতটা যা দিতে পারবেন তার চার আনাও কেন্দ্রের প্রশাসনিক মেশিনারি এই রাজ্যে দিতে পারবে না। এটা মুখ্যমন্ত্রী এবং আলাপনবাবু দু’জনেই খুব ভালভাবেই জানেন এবং বোঝেন !!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.