Header Ads

নেক্সট ওয়েভ

 ডাঃ প্রার্থপ্রতিম গুপ্ত


একদা অগ্রগামী রাজ্য কেরালা এই মুহূর্তে কতটা খারাপ জায়গায় এসে উপনীত হয়েছে, বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে তার কারণটাও

আজকাল টিভি বড় একটা দেখা হয়ে ওঠেনা। দৈনন্দিন আবোল তাবোল খবরে বোঝাই করা টিভি চ্যানেল একইসঙ্গে শ্রুতি এবং দৃষ্টিকটু।

আর প্রায় রোজই শোনা যাচ্ছে চিকিৎসক তথা স্বাস্থ্যকর্মীদের শহীদ হওয়ার খবর। কিন্তু সরকার বা সংবাদমাধ্যম কারো কাছে ই নাকি তার  সেরকম কোনও তথ্য নেই।

তাই বহুদিনই আমার বাড়িতে কোন খবরের কাগজ ঢোকেনা। বন্ধ করে দিয়েছি ডি টি এইচ পরিষেবা ও। যতটুকু খবরের আমার প্রয়োজন তা আমি ইন্টারনেট থেকেই পেয়ে যাই। রাজনৈতিক চাপান উতোরে মেতে থাকা টেলিভিশন চ্যানেল কিংবা আপোষ করা প্রিন্ট মিডিয়া কোনটাই আমাকে আর আকর্ষণ করে না।

মূল খবরটিতে ফিরে আসি এবার। করোনা মোকাবিলায় কেরালার ইনিংসের শুরুটা ছিল জব্বর। মনে রাখতে হবে মহারাষ্ট্রের সাথে কেরালা তেই সর্বপ্রথম ছড়ানো শুরু হয়েছিল এই মহামারীর।

মহারাষ্ট্রে রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকলেও অত্যন্ত আক্রমণাত্মক উপায়ে কেসের সংখ্যা কমিয়ে ফেলেছিল কেরালা। 'টেস্ট এন্ড আইসোলেট' এই অ্যাগ্রেসিভ বডি ল্যাঙ্গুয়েজে করোনা অনেক চেষ্টা করেও বাড়তে পারছিল না সেখানে, অন্তত এই অগাস্ট মাস পর্যন্ত। কিন্তু বাইশে অগাস্ট থেকে দোসরা সেপ্টেম্বর অবধি চলা 'ওনাম' উৎসব এর পর কেসের সংখ্যা হু হু করে বেড়ে চলেছে সেখানে। এতটাই যে দেশের কোভিড

চার্ট লক্ষ্য করলে দেখা যাবে কেরালা দ্রুতগতিতে উঠে এসেছে অ্যাক্টিভ রোগীর তালিকার চার নম্বরে।

সামাজিক মেলামেশা, একসাথে বসে খাওয়া দাওয়া, আচমকা বন্ধন মুক্তির আবেগে ভেসে গিয়ে

সেখানে মহামারী আপাতত নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে সেকেন্ড ওয়েভ শুরু করে দিয়েছে। তবে কেরালার স্বাস্থ্য পরিষেবা দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেকটাই মজবুত। তাই ওদের ঘুরে দাঁড়াতে হয়তো সময় লাগবে না।

গোটা ভারতবর্ষে জুড়েই সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে সুস্থতার সংখ্যা নতুন কেসের তুলনায় বাড়ছে। তাই কমছে অ্যাকটিভ রোগীর সংখ্যা ও। দেশের কোভিড চার্টেও ওঠানামা করছে রাজ্য গুলির অবস্থান। যে  কারনেই হোক,কোন অঞ্চলে সামাজিক মেলামেশা বাড়লেই,সেখানে  তাল মিলিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ।সাপ লুডো খেলার মতো।লাগামছাড়া মেশামেশি  নিয়ে গিয়ে ফেলছে ভাইরাসের মুখে।

কিছু কিছু রাজ্য প্রথম ওয়েভ শেষ করে ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় ওয়েভে প্রবেশ করেছে।কেউ দাঁড়িয়ে প্রথম ওয়েভেই।

স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন দুর্গাপূজা নিয়ে চূড়ান্ত আশঙ্কায় রয়েছে বিজ্ঞানী তথা চিকিৎসকদের দল। মণ্ডপে মণ্ডপে উপচেপড়া ভিড়ে ভাইরাসও যে উৎসাহিত হয়ে উপচে পড়বে সে বিষয়ে কারও কোন সন্দেহ নেই।দুর্গাপুজোর ঠিক ১৪ দিন পরেই হিসেব মতো কেস এর সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল, যদি না সাধারণ মানুষ নিজেদের সংযত রাখতে পারেন। ঠিক ওনামের পর যেমন টি  ঘটেছে কেরালায়।তাই নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকেই এখন সবার নজর।

 

চিকিৎসক হিসেবে আমরা শঙ্কিত এই কারণেই, যে কেসের সংখ্যা আচমকা যদি বাড়তে শুরু করে আমাদের পরিমিত স্বাস্থ্যব্যবস্থা তার ধকল বহন করতে পারবে না। আর সংক্রমণ বাড়লে আমাদের মতো চিকিৎসক তথা স্বাস্থ্যকর্মীর শহীদ হওয়ার আশঙ্কা আরো বাড়বে। ভারতে যেখানে করোনায় মৃত্যু সাধারণ ভাবে এই মুহূর্তে দুই শতাংশের নীচে চলে গিয়েছে সেখানে চিকিৎসকদের মৃত্যুর হার ১৫ শতাংশের ওপর।

তাই স্বাভাবিক কারণে চিকিৎসক তথা স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিবার শঙ্কিত হয়ে রয়েছে।

তাই আমাদের সবাইকেই ভাবতে হবে কেরালার ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় আমাদের পশ্চিমবঙ্গে। একটা দুর্গাপুজো চলে গেলেও, বেঁচে থাকলে আপনি আরো অনেকগুলি দুর্গাপুজো দেখতে পাবেন।একথা অন্তর থেকে বিশ্বাস করতে হবে সকল কে।

রাহুল দ্রাবিড়ের ব্যাটিংয়ের কথা মনে করুন। অফ স্টাম্পের বাইরের বলকে ইনিংসের শুরুতে ব্যাট তুলে ছেড়ে দিতেন উনি। যাতে বাকি ইনিংসের ভিত টা মজবুত করে দেওয়া যায় আর ক্লান্ত হয়ে যায় বোলার।

এবারের দুর্গা পুজো টা কে এভাবেই ছেড়ে দিন। মনে করুন সপ্তমী অষ্টমী নবমী দশমী তে ওই উপচেপড়া ভিড়ে মিশে আছে করোনার বিষাক্ত স্যুয়িং। ছুঁলেই মহামারীর নাম্বার বাড়বে।

সোজা ব্যাটে খেলে যান মাস্ক, স্যানিটাইজার আর ডিস্ট্যান্সিং দিয়ে।ক্লান্ত করে দিন ভাইরাসকে।

ভ্যাক্সিন আসুক বা না আসুক আটকে দিন করোনার পরবর্তী ওয়েভ গুলিকে।ধীরে ধীরেই হার্ড ইমিউনিটি তৈরী হয়ে যাবে।যত সময় যাবে তত দুর্বল হবে ভাইরাস।তখন আমরা স্টেপ আউট করবো স্লগ ওভারে,'বাপি,বাড়ি যা.....'

ক্যামোফ্লাজ করে যদি বেঁচে থাকতে পারে গোটা প্রাণীজগত, আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী মাস্ক পড়ে লড়াই চালাতে পারবো না আরো কিছুদিন  এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে?

তাই আগামী দুর্গাপূজা আমাদের অ্যাসিড টেস্ট।

এই ওয়েভ যদি আমরা আটকে দিতে পারি রাহুল দ্রাবিড়ের চওড়া ব্যাটের মতো, তাহলে পরের দিকে স্টেপ আউটের জন্য প্যাভিলিয়নে অপেক্ষা করে আছে  আমাদের সৌরভ,সেহবাগ রা।

চালিয়ে খেলার অনেক সময় পাওয়া যাবে তখন।

ভালো থাকুন।বাইরে বেরোলে মাস্ক খুলবেন না একদম।ওটাই একমাত্র আপনাকে করোনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে।

 

লেখকঃ Dr. Partha Pratim Gupta- Fortis-এর Neurosurgeon. একদা জলপাইগুড়ি শহরের প্রথিতযশা চিকিৎসক Dr. Sisir Kumar Gupta র পুত্র পার্থপ্রতিম।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.