Header Ads

সিদ্ধান্ত সম্ভবতঃ ডিসেম্বরে, এখন অঙ্ক কষে চলেছেন মুকুল-শুভেন্দু !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়

রাজ্য রাজনীতির দুই নক্ষত্র মুকুল রায় এবং শুভেন্দু অধিকারীকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতেই হবে--কি সিদ্ধান্ত নেবেন তা তাঁরা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট মুহূর্তেই প্রকাশ করবেন। তাঁদের ডিপ্লোম্যাটিক মন্তব্য বা বিবৃতিতে নানান রহস্য-সঙ্কেত থাকবে, তা থেকে যার যা বোঝার তা বুঝে নেবেন। রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করতে গিয়ে আমার মনে হচ্ছে ডিসেম্বরের আগে তাঁদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসবে না।

ততদিন পর্যন্ত তাঁরা নিজের নিজের দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে ক্রান্তিকারী কোনো বক্তব্য রাখবেন না এবং নিজেদের বিপ্লবীয়ানা প্রকাশে অস্থির হয়ে উঠবেন না। দরিয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া ডিঙির ওপর বসে বসে তাঁরা স্রোতের চরিত্র পর্যবেক্ষণ করে যাবেন। করছেনও তাই। নিরাপদে ডাঙায় ওঠার জন্য নিরাপদ ঘাটে ডিঙি বাঁধার আগেই যাতে কোনো চোরা স্রোতে ডিঙি অকূলে ভেসে না যায় সে ব্যাপারে সচেতন থাকার ক্ষমতা মুকুল ও শুভেন্দু--এই দু’জনেরই রাজনৈতিক মেধার মধ্যে সেঁটেই আছে বরাবর।
তাঁদের সিদ্ধান্ত কি হবে সেটা নির্দিষ্ট সময়ের আগে নির্দিষ্ট করে বলা একটু বেশিরকমের ঝুঁকি নেওয়া হয়ে যাবে। তার আগে বরং বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে রাজ্যের মানুষ কি চাইছে। আমার কাছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেসব খবরাখবর আসে তা থেকে আমার কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, রাজ্যের সিংহভাগ মানুষই চাইছেন ১৯৯৭-’৯৮-এর মতো এ রাজ্যে ফের আর একটা নতুন রাজনৈতিক শক্তির অভ্যুত্থান ঘটুক। অর্থাৎ, মুকুল-শুভেন্দু’র নেতৃত্বে অত্যন্ত সময়পোযোগী একটা বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য তৃতীয় বিকল্প শক্তি গড়ে উঠুক--যার ধাক্কায় বিজেপি তো বটেই তৃণমূল কংগ্রেসও তার পায়ের নিচের মাটি হারিয়ে ফেলতে পারে। কোন্ দল, জোট বা রাজনৈতিক মিত্র গোষ্ঠী এ রাজ্যে সরকার গঠন করবে তা নির্ভর করবে এই নতুন বিকল্প শক্তির ওপরেই। এই নতুন কার্য্যকরী সম্ভাবনার কথা মুকুল-শুভেন্দু ভাবছেন না বলেও মনে করার কারণ নেই। সব রকমের বিকল্প নিয়েই তাঁরা অঙ্ক কষে চলেছেন। রাজ্যের মানুষকে অপেক্ষা করতে হবে তাঁদের সিদ্ধান্তের জন্যে।
মুকুল রায়ের রাজনৈতিক অবস্থানটা এখন রীতিমতো চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে নানান কারণে। অত্যন্ত অপমানজনকভাবে নিজের রাজনৈতিক মৃত্যু দেখতে চান নি মুকুল--তাই তাঁকে বিশেষ একটা প্রতিজ্ঞা নিয়েই দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিতে হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য ল্যাম্পপোস্ট একসঙ্গে কোরাস গেয়ে উঠেছিল--‘মমতা ছাড়া কে মুকুল, কী তার অস্তিত্ব?’ অনেকেই হাস্য-পরিহাসে সাংবাদিক বৈঠক মাতিয়ে নানান বিকৃত নামে তাঁকে চিহ্নিতও করেছিলেন ! যতদিন তিনি তৃণমূলে ছিলেন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতার মর্যাদায় দলের গুরুত্বপূর্ণ নিষ্কলঙ্ক সম্পদ হিসেবেই ছিলেন। কিন্তু দল ছেড়ে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের মানুষ জানতে পারল--তিনি অসংখ্য দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন--শুরু হল তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত থাকার মামলা দায়ের করার খেলা ! মানুষকে বোকা ভাবলেই মানুষ বোকা হয়ে যায় না--মানুষ সবই বোঝে। তাই মুকুল রায় বিজেপিতে এসেও নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বা গুরুত্ব কতটুকু তা হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিতে ছাড়েন নি। রাজ্যের মানুষের ব্যাপক সমর্থনও যে তিনি পেয়েছিলেন সেটাও প্রমাণিত হয়েছে গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে ! বলতে গেলে ভিত নড়ে গিয়েছে তৃণমূলের। তাই দল বাঁচাতে শেষপর্যন্ত নিজের ওপরেও আর আস্থা রাখতে পারলেন না মমতা--বিহারি লোটা-কম্বলের প্রয়োজন হল তাঁর। মুকুল যে সঠিক পথেই তাঁর অপমানের জবাব দিতে পেরেছেন সেটা স্পষ্ট হতেই তিনি একুশের জন্যে নিখুঁত একটি ছক কষে ফেলেছিলেন--কিন্তু সেই ছক অনুযায়ী ঘুঁটি সাজাতে চাইলেন না বিজেপি’র সাভারকার-সঙ্ঘ লবির বঙ্গ-বিজেপি’র সংখ্যালঘু কিন্তু শক্তিশালী নেতাদের বড় অংশই। তাঁরা মোদী-অমিত শাহকে সম্ভবত বোঝাতে পেরেছেন--মুকুল বাঙালি নেতা এবং সঙ্ঘ-শিক্ষিত নন, বঙ্গ বিজেপিতে তাঁর যত প্রভাব এবং দাপট বাড়বে ততই গোশালা রাজনীতির প্রভাবমুক্ত থেকে যাবে বঙ্গ বিজেপি এবং ধুতি-পাঞ্জাবি’র নেতা-বুদ্ধিজীবিদের দাপট বাড়তে থাকবে। সুতরাং মুকুল রায়কে শুধু তৃণমূলকে দুর্বল করার রাজনীতিতেই ব্যবহার করা হোক--এতে সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না !
সম্ভবতঃ এই কারণেই প্রায় তিন বছরের মেয়াদকালেও মুকুলের সম্মানজনক পুনর্বাসন হল না দলে। অথচ গোটা ভারতবর্ষের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে কত এলি-তেলি সঙ্ঘসুপারিশের দৌলতে রাজ্যসভার সদস্য হলেন--ক্যাবিনেট মন্ত্রী হলেন, রাজ্যস্তরে বা কেন্দ্রীয়স্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলেন। এদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। শুধু বঙ্গ বিজেপিতে মুকুলের ব্যাপারেই দলের শীর্ষস্তরেও যথপোযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিস্ময়কর স্থবিরতা রাজ্যের মানুষকে অবাক করছে। এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও কিন্তু প্রকট হচ্ছে ক্রমশঃ। মুকুল যত দূরে সরে যাচ্ছেন এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছেন--বিজেপি’র পাশ থেকে মানুষও তত দূরে সরে যাচ্ছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে এই প্রবণতা খুবই স্পষ্ট হচ্ছে। নজরে পড়ছে না বিজেপি’র আত্মকর্তৃত্বে এবং আত্মপ্রচার সর্বস্বতায় বিশ্বাসী কাগুজে নেতাদের। রাজ্য বিজেপি সভাপতি যখন হুঙ্কার ছেড়ে বলেন--আমি একাই এক’শো হয়ে দলকে ক্ষমতায় বসাতে পারব--তখন বিভিন্ন দল থেকে বিজেপিতে আসা নেতা-কর্মীরা প্রমাদ গুণতে শুরু করেন। এমিনিতেই দলে তাদের কোনো গুরুত্বই দেওযা হয় না--তার ওপর যখন তাঁরা দেখেন--খোদ মুকুল রায়কেই বিশেষ মূল্য দিচ্ছে না দল তখন তারা তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন বোধ করবেন--এটাই স্বাভাবিক।
এরাও তাই প্রহর গুণছেন নতুন এক রাজনৈতিক সমীকরণের। সেরকম কোনো সম্ভাবনা তৈরি হওয়ামাত্র তারা দল থেকে ছিটকে বেরিয়ে যেতে বিন্দুমাত্র বিলম্ব করবেন না। মুকুলের হাত ধরে যে বিরাট ধস নামবে দলে তার সঠিক কোনো ধারণাই এখনও তৈরি হয় নি বিজেপি নীতি নির্ধারকদের। তৃণমূল কংগ্রেসেও এই মুহূর্তে পিকে’র শুদ্ধিকরণ অভিযানের ঠেলায় যেসব জনপ্রতিনিধি ও তাদের অনুগামীদের ভাবমূর্তিতে কয়েক পরত কালির ছোপ লেগে গেছে সে কালি ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে ওঠার মতো সময় পেতে না পেতেই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো নেমে এল আম্ফান ও করোনা--ফের শুরু হয়ে গেল কোটি কোটি টাকা লুণ্ঠনের পোয়া-বারো মোচ্ছবের কাল। ফের দুর্নীতি--কাটমানি-তোলাবাজি’র রাশি রাশি অভিযোগ--ক্ষোভ-বিক্ষোভ ! এদিকে শিয়রে সংক্রান্তি একুশের ভোট। এমনিতেই ১২০-২২-টি আসনে জেতার ব্যাপারে তীব্র অনিশ্চয়তায় যাদের রাতের ঘুম ছুটে গেছে তারা অনেকটা পা বাড়িয়ে বসেই আছে। মুকুল-শুভেন্দু যদি একজোট হয়ে তাদের ডাক দেন তাহলে তৃণমূলেও ধস নামবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায়। ধস নামবে বাম ও কংগ্রেসেও--কারণ, এই মুহূর্তের রাজ্য রাজনীতিতে এই দুই দল বা ফ্রন্টের উল্লেখযোগ্য কোনো প্রাসঙ্গিকতাই নেই। 
শ্বাসরুদ্ধকর গোশালার রাজনীতিতে যাদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেছে সেইসব বুদ্ধিজীবি নেতা-সুশীলরাও রাজ্যরাজনীতির সমীকরণের শরিক হতে ছুটে আসবেনই--এক্ষেত্রে ভাঙনের চিহ্ন স্পষ্ট হবে তৃণমূলেও। তৃণমূল ও বিজেপি’র মধ্যে যারা এখন তীব্র অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করে এবং ঠিকঠাক বুঝেই মুকুলবাবুদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মুকুলবাবু জানেন, তাঁকে বাদ দিয়ে যোগ্য সম্মান না দিয়ে বিজেপির পক্ষে পশ্চিমবঙ্গে পালাবদল ঘটানো একেবারেই সম্ভব নয়। অন্যদিকে তাঁর পক্ষে তৃণমূলে ফেরার কথা ভাবাটাও রাজনৈতিক আত্মহত্যার সামিল। কারণ, তেমনটা করলে তিনি তাঁর পুরনো দলে মীরজাফরের অসম্মান নিয়ে আরও বেশি উপেক্ষা আরও বেশি অপমান ও হেনস্থা ছাড়া কিছুই পাবেন না। কেন না তাঁর বিশ্বাস, গোটা দলটাই এখন নতুন অপরিপক্ক একটা দিশাহীন নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। কিন্তু তিনি যদি বিজেপি ছেড়ে বেরিয়ে এসে তৃণমূলে না ফিরে এই রাজ্যেই ১৯৯৭-৯৮’তে তিনি যে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের অন্যতম যোদ্ধার ভূমিকা পালন করেছিলেন সেইরকমই আর একবার নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের সফল যোদ্ধা হয়ে উঠতে পারেন তাহলে একই সঙ্গে তৃণমূল যেমন উপযুক্ত জবাব পাবে ঠিক তেমনই বিজেপিও বুঝবে এইরাজ্যের মানুষ বাঙালিয়ানা বাংলাসংষ্কৃতি ও কৃষ্টি বাদ দিয়ে গোশালার রাজনীতিকে গ্রহণ করবে না। এটা তখনই সম্ভব হবে যখন একটা গ্রহণযোগ্য নতুন বিকল্প রাজনৈতিক সমীকরণ তাদের সামনে উঠে আসবে।
অন্যদিকে তৃণমূলেরই আর এক শক্তপোক্ত জনভিত্তিক রাজনীতিতে সম্পৃক্ত দাপুটে নেতা শুভেন্দুও বিশেষ মহলের সামনে বড়সড় প্রতিবন্ধক হিসেবে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত হয়ে গেছেন। সামগ্রিক নেতৃত্বের ভবিষ্যতের অন্যতম প্রধান দাবিদার হিসেবে তার অধিকারকে নস্যাৎ করা ক্রমশঃ কঠিন হয়ে ওঠার কারণেই তাঁকে দলের মধ্যে মুকুলের মতোই এখন কোণঠাসা হতে হচ্ছে। নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছেন তাঁর রাজনীতির মূল অঙ্গন বলতে যা বোঝায় সেই জনসংযোগের ক্ষেত্রেও। জনবিচ্ছিন্নতার রাজনীতি যে তার পক্ষে সম্ভব নয় এটা কে না জানে ! যুব সংগঠন থেকে শুরু করে মূল সংগঠনেও তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি কমানোর রাজনীতিতে বিহারি লোটা-কম্বলের তুর্কীনাচন তাঁর পক্ষে আর কিছুতেই মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না--মুকুলের মতোই তিনিও অপমানিত বোধ করছেন--দলবিচ্ছিন্নতার স্নায়বিক চাপ তৈরি হচ্ছে তাঁর ওপর। তিনি মেনে নিতে পারছেন না--কারণ, দলের সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে তিনিও এখন রীতিমতো উদ্বিগ্ন বোধ করছেন। নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যত যে ধীরে কিন্তু স্পষ্টতঃই অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে চলেছে সেটা অনুভব করেই তিনি তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক ভাবনার ওপর ভর করেই চলেছেন। এতে বেশ কিছু জল্পনা তৈরি হচ্ছে--তৈরি হচ্ছে নানা প্রশ্ন। উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে দলের ভেতরেও। দলের অনেকে চাইলেও শেষপর্যন্ত হয়তো শুভেন্দুকে ধরে রাখা যাবে না। কারণ, তিনিও মুকুলের মতোই দলের ভবিষ্যৎ স্পষ্ট দেখতে পচ্ছেন। অনেকের মতোই তিনিও বাধ্য হয়েই নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কথা ভাবছেন।
রাজ্যের মানুষ কি চাইছে সেটা বুঝতে তার ভুল হওয়ার কথা নয়। মানুষকে বোঝেন বলেই তিনি সবসমেয় মানুষের মাঝখানে বসেই রাজনীতি করেন। তাই আমার মনে হয় না তিনি বিজেপিতে যাবেন বলে। রাজ্যে নতুন এক রাজনৈতিক সমীকরণের জন্ম দেওয়ার চেয়েও ভবিষ্যতের জন্যে সেটা মারাত্মক ঝুঁকির বিষয় হয়ে যাবে। বিজেপিতে তাঁর অবস্থাও মুকুলের চেয়ে খুব বেশি উজ্জ্বলতর কিছু হবে না। করাণটা খুবই স্পষ্ট। গোবলয়ের নেতাদের গোশালার রাজনীতির নিয়ন্ত্রণেই তাঁকে হাত-পা ছুঁড়তে হবে। মুকুলের মতো তিনি বিজেপি’র রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা এ রাজ্যে বাড়িয়ে যাবেন--কিন্ত উপযুক্ত মর্যাদা পাবেন না--নানান কূট কৌশলী রাজনীতির শিকার হয়ে বিজেপি’র ব্যবহারের বস্তু হয়ে টিকে থাকবেন। কিন্তু আমি জানি, শুভেন্দু’র ধাত একেবারেই আলাদা--এভাবে নিজের মর্যাদা বিকিয়ে দিয়ে তিনি রাজনীতি করবেন না। রাতারাতি কিং না হলেও কিং-মেকারের রাজনীতিই তাঁর কাছে অগ্রাধিকার পাবে।
সুতরাং শুভেন্দুও যে নতুন শক্তিশালী একটা রাজনৈতিক সমীকরণের কথা ভাবছেন না তা নয়। অনেকের ধারণা, মুকুল বিজেপি ছাড়তে পারবেন না সারদায় ‘অভিযুক্ততা’র কারণে। কিন্তু ব্যাপারটা এখন আদৌ সেই জায়গায় নেই। কুমীর ছানার মতো সারদা-নারদা-রোজভ্যালি কাণ্ডে মাঝে মাঝে সিবিআইকে গর্ত থেকে বের করে এনে ব্ল্যাকমেলিংয়ের রাজনীতিতে বিজেপি’র স্বচ্ছ রাজনীতি রীতিমতো প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রায় তিন বছর মুকুলকে ব্যবহারের পর তাকেও যদি সিবিআই (কুমীরছানা) দেখানো হয় তাহলে সেটা বিজেপি’র কাছেই ব্যুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে। সুতরাং বিজেপি ছাড়ার প্রশ্নে মুকুলের তেমন কোনো সমস্যা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে হয় না। তা ছাড়া মুকুলেরও প্রচুর বলার মতো কথা আছে যা সামলাবার মতো ক্ষমতা বঙ্গ বিজেপি’র নেই। এটা এখন মুকুলও বিশ্বাস করেন। তাই তাঁর এই রাজনৈতিক দূরত্ব ও নিষ্ক্রিয়তা। এর ফলেই গোটা রাজ্য জুড়ে যেমন বিজেপি’র বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা হু-হু করে কমছে তেমনই দলের মধ্যেই অসংখ্য ফাটলের চিহ্নও স্পষ্ট হচ্ছে। দিলীপ ঘোষ একাই যে ম্যানড্রেক বা অরণ্যদেব নন তাও রাজ্যের মানুষ খুব স্পষ্ট করেই টের পাচ্ছেন। ফলে মানুষের মনের মধ্যে একটা নুতন রাজনৈতিক সমীকরণের স্বপ্ন স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। মুকুল-শুভেন্দু যদি এই লক্ষ্যে এগিয়ে আসেন তাহলে রাজ্যের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের ঢল নামতেই পারে তাঁদের দিকে। কিন্তু তার আগে জোরালো প্রত্যয়ের সঙ্গে তাঁদের কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েই এগিয়ে আসতে হবে। নতুন কার্য্যকরী বিকল্প মঞ্চ এখন তাঁদের অপেক্ষাতেই বাঁধা হচ্ছে মানুষের মনের মধ্যে--সেটা বুঝতে হবে তাঁদের এবং সেইমতোই সিদ্ধান্ত নিতে হবে !

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.