বদলে গেল ‘জম্মু-কাশ্মীর ডোমিসাইল আইন’!!
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
বিশেষ মর্যাদা বাতিল হওয়ার পর থেকেই আশঙ্কাটা ছিল সাধারণ কাশ্মীরিদের মনে। করোনা ভাইরাসের জেরে লকডাউন চলাকালীন ডেমেসাইল আইন বদলে যা আরো উস্কে দিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন বলে মনে করছে স্থানীয় বাসিন্দারা। নতুন 'জম্মু-কাশ্মীর ডোমিসাইল' আইন অনুসারে টানা ১৫ বছর কেউ সেখানে থাকলেই ডোমিসাইল সার্টিফিকেট বা চিরকাল বসবাসের অনুমতি পেতে পারেন।
সরকারি সূত্রে খবর, ৩৫ হাজারের বেশি মানুষকে এরই মধ্যে ডোমিসাইল সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। যার অর্থ, তাদের এখন কাশ্মীর উপত্যকায় চাকরির আবেদন করা, জমিবাড়ি-সম্পত্তি কেনা-বেচা ও ভোট দেওয়ার অধিকার থাকছে।
গত বছরের আগস্টে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের পর থেকেই উপত্যকায় দফায় দফায় কারফিউ জারি করে স্থানীয় মানুষদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ ঠেকাতে প্রায় গৃহবন্দি করে ফেলেছে প্রশাসন। এর পরে করোনা-লকডাউন শুরু হতে বিছিন্ন হয়ে যায় যাবতীয় যোগাযোগ। এই সময়েই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নতুন ‘জম্মু-কাশ্মীর ডেমিসাইল আইন’ চালু করে দিল।
বিশেষ মর্যাদা থাকাকালীন কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া কারো সেখানে জমি কেনা বা সরকারি চাকরি পাওয়ার অধিকার ছিল না। সংবিধানের ৩৫-এ ধারায় স্থায়ী বাসিন্দার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে সব এখন ইতিহাস। স্থায়ী বাসিন্দার সনদের বদলে এখন চাকরি পাওয়া বা সম্পত্তি কেনার জন্য ডোমিসাইল সার্টিফিকেটই যথেষ্ট।
কাশ্মীরের বাসিন্দা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক গুল ওয়ানি বলেছেন, 'মানুষ বুঝতে পারছে কী হচ্ছে, সরকারও জানে তারা কী করছে। এই পদক্ষেপের ফল সুদূরপ্রসারী। কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়ে আছে।’
ইতিহাসবিদ গির মোহাম্মদ ইসহাক বলেছেন, 'এখন কেউ নিজেকে কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে প্রমাণ করতে গেলে হলফনামা দিতে হবে। নতুন আইনের জেরে এখানকার স্থায়ী বাসিন্দাদেরও ডোমিসাইল সার্টিফিকেট লাগবে, কারণ শুধু পিআরসি এখন আর সব সুবিধা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।'
নতুন আইনে স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলো চটলেও বিজেপির দাবি, 'কাশ্মীরিদের চাকরি সুরক্ষিত রাখতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে বেকারত্ব কমবে।'
তবে বিজেপির দাবির বিরোধিতা করে সেন্ট্রাল কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পীর রাফিয়া বলেন, 'মুসলিম অধ্যুষিত একটি অঞ্চলের প্রকৃতি বদল করা হচ্ছে। লকডাউনের কারণে কাশ্মীরিরা আইনের প্রতিবাদও করতে পারছেন না।'
কোন মন্তব্য নেই