Header Ads

বাস্তবতার সবচেয়ে কাছে যে চারটি করোনা ভ্যাকসিন !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় 

কভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনের অধীর অপেক্ষায় গোটা বিশ্ব। গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান তাদের আবিষ্কার নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পথে হাঁটছে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ দল শতাধিক ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছেন। এর মধ্যে ২০-টিরও বেশি ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ, এই ভ্যাকসিনগুলো মানবদেহে প্রয়োগ করে তার কার্যকারিতা পরখ করা হবে।

ইম্পেরিয়েল কলেজ লন্ডনের ইমিউনোলজির প্রফেসর ড্যানি আল্টম্যান বলেন, জানুয়ারির ১১ তারিখে পৃথিবী যখন ভাইরাসের (আরএনএ) সিকোয়েন্স পেলো তখনই পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায় মানুষের কি ধরনের ভ্যাকসিন প্রয়োজন এবং কি ধরনের ভাইরাসকে ভ্যাকসিন দিয়ে আটকানো সম্ভব। আর এক্ষেত্রে ইমিউনোলজি এ পথে খুব ভালোভাবেই এগোচ্ছে।
গত ২০ জুলাই দুটো পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রথম দফায় প্রাথমিক ফল দেখিয়েছে। দুটো পরীক্ষায় তারা দেহের রোগপ্রতিরোধী ক্ষমতাকে প্ররোচিত করতে সমর্থ হয়েছে এবং প্রয়োগের পর বড় ধরনের কোনো নিরাপত্তাজনিত সমস্যা দেখা দেয়নি। এ সবই ইতিবাচক পথে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষণ। কিন্তু আরো পথ যেতে হবে। ইমিউন সিস্টেমের সঙ্গে খাপ খেয়ে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে, এই ভ্যাকসিন মানুষকে কভিড-১৯ থেকে নিরাপত্তা দেবে। তৃতীয় দফা পরীক্ষা বহু মানুষের দেহে প্রয়োগ করে দেখতে হবে আসলে তারা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারছে কি না।
বর্তমানে অনেক বিশেষজ্ঞ দল ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পেছনে
ঘাম ঝরাচ্ছেন। প্রযুক্তিগত প্লাটফর্মে এদের নিয়ে কাজ চলছে। এদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটা নিয়ে বেশ ভালো ফল পাওয়া গেছে।
লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ভ্যাকসিন সেন্টারের পরিচালক বিয়াটে কাম্পম্যান বলেন, তবে এগুলোর মধ্যে এই পর্যায়ে তুলনামূলক আলোচনা করা সম্ভব নয়।
এখানে চারটি ভ্যাকসিন সম্পর্কে বলা হলো। এগুলো আশাব্যঞ্জক ফল দিয়েছে। হয়তো এগুলোই করোনা থেকে বাঁচনোর বাস্তব উপায়ে পরিণত হবে।
অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রাজেনেকা---
ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের গবেষণায় কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পথে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার খবর বেশ আগেই জেনেছে মানুষ। দেশটির সরকার ইতোমধ্যে ওই ভ্যাকসিনের ১০০ মিলিয়ন ডোজের অর্ডার করেছে। এই ভ্যাকসিনকে শতভাগ কার্যকর করতে অক্সফোর্ডের সাথে কাজ করে যাচ্ছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। বর্তমানে এই ভ্যাকসিনটি সবচেয়ে বেশি আশার আলো ছড়িয়েছে। অক্সফোর্ডের ভাইরাল ভ্যাকসিনটি ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন। এটা প্রস্তুতের জন্যে বেছে নেয়া হয়েছে শিম্প অ্যাডেনোভাইরাসকে। এটি এমন এক ভাইরাস যা শিমপাঞ্জির সাধারণ ঠাণ্ডা-সর্দির জন্যে দায়ী। এটাকে করোনাভাইরাসের 'স্পাইক প্রোটিনের' জেনেটিক সিকোয়েন্স সমৃদ্ধ করে বিশেষায়িত করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এটি করোনায় আক্রান্ত কোষগুলোকে সুস্থ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ক্যানসিনো---
অক্সফোর্ডের বিশেষজ্ঞ দলটি যেদিন তাদের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল দেয়, একই দিন চিনের ক্যানসিনো বায়োলজিক্স উহানে তাদের ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় দফার ট্রায়াল দেয়। পরীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়, এই ভ্যাকসিনও বেশ নিরাপদ এবং ইমিউন সিস্টেমের সঙ্গে খাপ খেয়ে ভালো ফল দিয়েছে। ক্যানসিনো ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করেছে বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনলজি। তারাও স্পাইক প্রোটিন দিতে ভাইরাল ভেক্টর হিসেবে অ্যাডেনোভাইরাস বেছে নেয়। তবে এক্ষেত্রে এটি মানুষের সাধারণ ঠাণ্ডা-সর্দির ভাইরাস। তবে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার একটা নেতিবাচক দিক সম্পর্কে কাম্পম্যান বলেন, ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। ফলে কিছু মানুষের মাঝে এমনিতেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যাবে। তাদের ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিন ইমিউন সিস্টেমে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে না।
মোডেরনা---
মার্কিন প্রতিষ্ঠান মোডেরনা আরএনএ ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে। তারা কাজ করছে নতুন ধরনের এক ভ্যাকসিন নিয়ে যা করোনাভাইরাস স্পাইন প্রোটিনের আরএনএ এর একটি সিনথেটিক সংস্করণ তৈরি করবে। এ কৌশলে মানবদেহ নিজেই স্পাইক প্রোটিন তৈরি করবে, যা রোগপ্রতিরোধী ক্ষমতাকে প্রভাবিত করবে। জুলাইয়ের ১৪ তারিখে মোডেরনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় দফা ট্রায়ায়ের ফলাফল প্রকাশিত হয় নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ। সেখানে বলা হয়, এই ভ্যাকসিন ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে করে প্রয়োগকৃত দেহে কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি করেনি। খুব দ্রুত তৃতীয় দফা ট্রায়ালের প্রস্তুতি নিচ্ছে মোডেরনা।
সিনোভাক---
বেইজিং-ভিত্তিক সিনোভাক বায়োটেক যে ভ্যাকসিনটি নিয়ে কাজ করছে তার নাম করোনাভ্যাক। এটা ক্রিয়াশীল ভাইরাসকে অকার্যকর করে দেয়ার ভ্যাকসিন। এ কার্যপদ্ধতি পুরনো ঘরানার। এই ভ্যাকসিন দেহে প্রবেশ করে ক্রিয়াশীল ভাইরাসকে হয় মেরে ফেলবে কিংবা অকার্যকর করে দেবে এবং এর ফলে দেহে কোনো সংক্রমণ থাকবে না। আবার দেহের স্বাভাবিক রোগপ্রতিরোধী ক্ষমতা এই ভাইরাসকে ঠিকই চিনে রাখবে এবং পরবর্তীতে একই ভাইরাস দেহে প্রবেশ করলে ইমিউন সিস্টেম ক্রিয়াশীল হবে। জুনে প্রতিষ্ঠানটি এক বিবৃতিতে জানায়, মানবদেহে প্রথম ও দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায় দেখা গেছে, ভ্যাকসিনটি দেহের অ্যান্টিবডিগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয় এবং বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। ব্রাজিলে তৃতীয় দফা ট্রায়লের প্রস্তুতি নিচ্ছে সিনোভাক।
আরো পথ বাকি---
এই চারটি ভ্যাকসিনের পাশাপাশি আরো অনেক প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষজ্ঞ দল ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। কাম্পম্যান বলেন, তবে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রচেষ্টা জাতিগত প্রতিযোগিতা হিসেবে ভুল বার্তা দিতে পারে। এটা আসলে কোনো দ্রুতগতির স্প্রিন্ট দৌড়ের মতো নয়। এটা একটা ম্যারাথন। যে প্রথম আবিষ্কার করবে সেটাই যে সেরা হবে এমন কোনো কথা নেই। কার্যকর ভ্যাকসিনের আরো অনেক বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়। যে ভ্যাকসিন বহু সময় ধরে গবেষণার মাধ্যমে আদর্শ অবস্থায় প্রস্তুত হয় তা অনেক বেশি কার্যকর, দীর্ঘমেয়াদী, কমখরুচে এবং খুব সহজলভ্য হয়ে থাকে। আবার এমনও হতে পারে, ভিন্ন ভিন্ন ভ্যাকসিন বিভিন্ন বয়সী এবং বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে কাজ করছে। দ্রুতগতিতে একাকী আকিষ্কারক হওয়ার চেয়ে ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন প্লাটফর্মে ধীরগতিতে গবেষণা প্রয়োজন। এটা কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রতিযোগিতা নয়। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.