Header Ads

কেন্দ্ৰ সরকারের নতুন শিক্ষানীতি কতটা ফলপ্ৰসূ হবে তা ভাবাচ্ছে বিশ্লেষক মহলকে

 
 ছবি, সৌঃ আন্তৰ্জাল

 রিংকি মজুমদার

লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চরে সে...

ছোটবেলা থেকে ঠাকুমা দিদার মুখে এই কথাটা শুনে শুনে আমরা বড় হয়েছি। বুধবার দেশে নতুন শিক্ষা নীতি প্ৰবৰ্তন করল কেন্দ্ৰ সরকার। নতুন এই শিক্ষানীতিতে বহু ভাষা শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাউকেই কোনও ভাষা বাধ্যতামূলকভাবে যে শিখতেই সেকথা বলা নি। ছাত্ৰছাত্ৰীরা নিজেদের ইচ্ছামতো বিষয় চয়ন করতে পারবেন। নতুন নীতিতে ছাত্ৰ ছাত্ৰীরা যাতে আরও চিন্তাশীল, আরও সৃজনশীল হয়ে ওঠে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে। ছাত্ৰছাত্ৰীদের মাথার ওপর থেকে পরীক্ষার বোঝা কমানো হয়েছে। বৰ্তমানে যে শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে তাতে ছাত্ৰছাত্ৰীদের যেন পরীক্ষায় শুধু এবং শুধুমাত্ৰ মাৰ্কস ওঠানোর জন্য একেটা মেশিন তৈরি করা হচ্ছে এমনটাই মনে হয়। আজ থেকে বছর ২০ আগেও মাধ্যমিকে ফাৰ্স্ট ডিভিশন পাওয়া মানে খুবই গৌরবের বিষয় ছিল। কিন্তু এখন ছাত্ৰছাত্ৰীরা পরীক্ষায় ৯৮ শতাংশ নম্বর নিয়ে এলেও তাতেও যেন আরও ২ নম্বর কেন পেল না, অভিভাবকদের মন ভরছে না। কেন? প্ৰতিযোগিতার দৌড়ে আরও নম্বর চাই। নইলে পিছিয়ে পড়তে হবে যে।

নতুন শিক্ষানীতিতে ছাত্ৰছাত্ৰীদের ঘাড় থেকে পরীক্ষার বোঝা কমানো হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ছাত্ৰছাত্ৰীদের ঘাড় থেকে পড়াশোনার চাপটা একটু কমবে এমনটাই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু নতুন এই শিক্ষানীতি কতটা বাস্তবে প্ৰণয়ন করা যাবে সেটাই হচ্ছে লক্ষ্যনীয়।

দেশে বৰ্তমানে লক্ষ লক্ষ যুবক ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে মাস্টার ডিগ্ৰি হাতে নিয়ে বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছে। চাকরি নেই দেশের স্কুল কলেজ, বিভিন্ন প্ৰতিষ্ঠানগুলোতে পৰ্যাপ্ত পরিমাণে নিয়োগ করা হচ্ছে না।

 তবে নতুন শিক্ষানীতিতে প্ৰশ্ন উঠছে বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন শিশুদের কি হবে? নতুন শিক্ষানীতিতে তারা কিভাবে উপকৃত হবে। একথা ভাবাচ্ছে সচেতন মহলের অনেককেই। অনেকেই মনে করছেন নতুন শিক্ষানীতি প্ৰণয়ন করার আগে যদি একবার রাজ্যগুলোর মতামত নেওয়া হত তবে ভালো হত।
তবে নতুন শিক্ষানীতিতে ইতিবাচক দিকটি হচ্ছে ছাত্ৰছাত্ৰীরা শিক্ষা সম্পূৰ্ণ করার পর যাতে নিজেদের বহুমুখী প্ৰতিভা দিয়ে উদ্যমী হয়ে উঠতে পারে সেইদিকে আশা রেখেই নতুন ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্লাস সিক্স থেকে ভকেশনাল ট্ৰেনিংয়ের সিদ্ধান্ত এটা খুবই ভালো পদক্ষেপ হয়েছে। যাদের পড়াশোনা মাঝপথে আটকে গেছে তারা যতটুকু পৰ্যন্ত অৰ্থাৎ ফাৰ্ট ইয়ার , সেকেন্ড ইয়ার একটা সাৰ্টিফিকেট পেয়ে যাবেন। তারপর ভবিষ্যতে ফের পরবৰ্তী কোৰ্স থেকে ফের শিক্ষা শুরু করতে পারবেন।

নতুন এই শিক্ষা ব্যবস্থা সহজ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু আগামী প্ৰজন্মের ভবিষ্যৎ কতটা সুরক্ষিত করবে তা নিয়েও ভাবাচ্ছে বিশ্লেষক মহলকে। তবে নতুন এই শিক্ষা নীতি আরও ভালো করে খতিয়ে দেখার প্ৰয়োজন রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। আবার নতুন শিক্ষানীতির এই নমনীয়তাকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। এখনও পৰ্যন্ত কোনও ছাত্ৰ সংগঠন থেকে কোনও ধরনের প্ৰতিক্ৰিয়া আসেনি। অৰ্থাৎ তারা কেন্দ্ৰে গৃহীত নতুন শিক্ষানীতিকে কিভাবে দেখছে কোনও প্ৰতিক্ৰিয়া তারা দেন নি। নতুন শিক্ষা নীতিতে দেশের বিভিন্ন প্ৰত্যন্ত অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা কতদূর উপকৃত হচ্ছে সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। প্ৰান্তিক জেলা গুলো নতুন শিক্ষা নীতি গ্ৰহণ করতে গিয়ে আরও পিছিয়ে যাবে না তো সে দিকটাও দেখতে হবে। সমাজে কিছু অংশ উদার শিক্ষা নীতির সুবিধা পেল আর একটা অংশ প্ৰদীপের পিলসুজের নীচেই পড়ে রইল এমন টা যাতে না হয় এটা আমাদের সকলের কাম্য । তার কারণ এখনও গ্ৰামে গঞ্জের বহু মানুষ অৰ্থের অভাবে মোবাইল কিনতে পারছেন না। তারা দুবেলা দুমুঠো খেতে পারছে না। তার মধ্যে বৰ্তমানে অতিমারি করোনা পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন বিত্ত মানুষের অবস্থা ক্ৰমশ শোচনীয় হয়ে যাচ্ছে। সেখানে সরকারের ই- লাৰ্নিংয়ের লক্ষ্য কিভাবে বাস্তবায়িত হবে সেদিকটা অবশ্যই লক্ষনীয়। আমাদের সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন আরও সজাগ হতে হবে। যারা আগামী ভারতের নিৰ্মাণে গুরুত্বপূৰ্ণ ভূমিকা নেবে তাদের পথ চলা যাতে ঠিকঠাক সুষ্ঠুভাবে হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এই পরিস্থিতিতে নিৰ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরকারের ১০০ শতাংশ স্বাক্ষরতার লক্ষ্য পূরণ হবে কি তা অবশ্যই লক্ষ্যনীয়। নতুন এই শিক্ষানীতি কতটা ফলপ্ৰসু হবে তা ভাবাচ্ছে বিশ্লেষক মহলকে।

একবার দেখে নেওয়া যাক নতুন শিক্ষানীতিতে কি কি রয়েছেঃ 

নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতিতে দশম এবং দ্বাদশ শ্ৰেণির পরিকাঠামো বাতিল করা হয়েছে। তার পরিবৰ্তে ৫+৩+৩+৪ নীতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। অৰ্থাৎ পঞ্চম শ্ৰেণি পৰ্যন্ত প্ৰাথমিক স্কুল ধরা হবে। তারপর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্ৰেণি পৰ্যন্ত মধ্য স্কুল এবং অষ্টম থেকে একাদশ শ্ৰেণি পৰ্যন্ত হাই স্কুল এবং দ্বাদশ শ্ৰেণি থেকে স্নাতক পৰ্যন্ত উচ্চ পৰ্যায়ের শিক্ষার আওতায় ধরা হবে। ষষ্ঠ শ্ৰেণি থেকে ভকেশনাল বিষয় ছাত্ৰছাত্ৰীরা নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী চয়ন করতে পারবে। অষ্টম থেকে একাদশ পৰ্যন্ত ছাত্ৰছাত্ৰীরা নিজের পছন্দের বিষয় বেছে নিতে পারবে। সমস্ত স্নাতক পাঠ্যক্ৰমে মূল বিষয় এবং একটু হালকা অৰ্থাৎ কম চাপের বিষয় ছাত্ৰছাত্ৰীরা বেছে নিতে পারবে। যেমন বিজ্ঞানের ছাত্ৰছাত্ৰীরা মূল বিষয় পদাৰ্থ বিদ্যার পাশাপাশি সংগীতের মতো স্বল্প চাপের বিষয় নিজেদের পাঠ্যক্ৰমে বেছে নিতে পারবে। এছাড়াও অন্য কোনও কমবিনেশন থাকলে তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো বেছে নিতে পারবে। সরকারি বেসরকারি নিৰ্বিশেষে সমস্ত উচ্চশিক্ষা প্ৰতিষ্ঠানের জন্য অভিন্ন রেগুলেশন চালু হবে। ইউজিসি এআইসিটিই মিলে এক হয়ে যাবে। সমস্ত শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠানে সেটা সরকারি হোক অথবা বেসরকারি কিংবা মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সবেতেই একই গ্ৰেডিং এবং অন্যান্য নিয়ম থাকবে। দেশের সকল ধরণের শিক্ষকের জন্য নতুন শিক্ষক প্রশিক্ষণ বোর্ড স্থাপন করা হবে, কোনও রাজ্যই তা পরিবর্তন করতে পারবে না। স্বীকৃতিপ্ৰাপ্ত কোনও কলেজ সেই প্ৰতিষ্ঠানের রেটিংয়ের ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসিত অধিকার এবং তহবিল পাবে।

প্ৰি স্কুলের জন্য বাচ্চাদের বাড়িতে শিক্ষা দিতে বাবা মা কে সরকারের তরফ থেকে বেসিক লাৰ্নিং প্ৰোগ্ৰাম তৈরি করে দেওয়া হবে। শিক্ষা ব্যবস্থা আরও সহজ সরল হবে। যে কোনও ছাত্ৰছাত্ৰী যে কোনও সময় কোনও কোৰ্সে ভৰ্তি হতে পারবে। মাঝপথে শিক্ষা বন্ধ হয়ে গেলে পরবৰ্তিকালে আবার যেখান থেকে বন্ধ হয়েছে সেখান থেকে কোৰ্স শুরু করার সুবিধা থাকবে। প্রতি বছর শিক্ষার্থীর জন্য স্নাতক পাস করার জন্য ক্রেডিট সিস্টেম কিছু ক্রেডিট পাবে যা সে যদি অবশ্যই কোর্সে ব্রেক নেয় এবং পুনরায় কোর্সটিতে ফিরে আসে তবে সে তা ব্যবহার করতে পারে। প্ৰত্যেকটি স্কুলে সেমিস্টার হিসেবে বছরে দুবার পরীক্ষা হবে। মূল বিষয়বস্তু রেখে সিলেবাস কমানো হবে। ছাত্ৰছাত্ৰীদের ব্যবহারিক এবং প্ৰয়োগ জ্ঞানের ওপর জোর দেওয়া হবে। যে কোনও গ্র্যাজুয়েশন কোর্সের জন্য শিক্ষার্থী মাত্র এক বছর পূর্ণ হলে তিনি একটি বেসিক সার্টিফিকেট পাবেন, তিনি যদি দুই বছর পূর্ণ করেন তবে তিনি ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট পাবেন এবং তিনি যদি পুরো কোর্স সম্পন্ন করেন তবে তিনি ডিগ্রি শংসাপত্র পাবেন। সুতরাং কোনও শিক্ষার্থীর কোনও বর্ষ ন্যূনতম কোর্সটি ভেঙে ফেললে তা নষ্ট হবে না। সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সমস্ত স্নাতক কোর্স ফিড প্রতিটি কোর্সে ক্যাপিং সমেত একক কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত হবে। নতুন এই ব্যবস্থায় ছাত্ৰছাত্ৰীদের অ্যাকাডেমিক ভবিষ্যত স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল হবে বলে মনে করা হচ্ছে। 


















কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.