Header Ads

অধিকাংশ মানুষই যুক্তিতর্কবোধ হীন আবেগসর্বস্বতার শিকার !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়

কথাটা বার বার মনে হচ্ছে চীন-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে১৯৪৫ সাল থেকে চীন-ভারত সম্পর্কের ওঠানামার ইতিহাসের দুচারটে পৃষ্ঠাও নাড়াচাড়া না করেও অনেকেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ হয়ে ফেসবুকে নেমে পড়েছেন চীনের বিরুদ্ধে তথ্যমূলক আলোচনার জন্যে নয়--ভারত সরকার, দেশের তিন বাহিনী, প্রতিরক্ষা-বিদেশ মন্ত্রক প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাদীক্ষা দক্ষতা মেধা সিদ্ধান্ত গ্রহণের অযোগ্যতা কতটা নিম্নস্তরের সেটাই প্রমাণ করার জন্যে বা তুলে ধরার জন্য প্রসঙ্গে প্রথমেই আমার রাহুল গান্ধীকে এই প্রশ্নটাই করতে ইচ্ছে করছে--আপনি কি জানেন, জবাব চাইবার অধিকার তারই থাকে যে জবাব দেওয়ার দায়বদ্ধতাকে মেনে চলতে অভ্যস্ত থাকেরাহুল গান্ধী বা সনিয়া গান্ধী কি জবাব দেবেন--১৯৪৮ সালে আমেরিকাকে চীনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সুবিধে করে দেওয়ার জন্যে ভারতের মাটিতে আমেরিকাকে যুদ্ধঘাঁটি তৈরির অনুমতি কে দিয়েছিল এবং তার সুদূরপ্রসারী ফলাফল আজপর্যন্ত কার বিদেশনীতি এবং প্রতিরক্ষানীতির চরম দুর্বলতা ব্যর্থতার কারণে ভারতবাসীকে ভুগতে হচ্ছে? মা-বেটা কি জবাব দেবেন কার দুর্বলতা অপদার্থতা চরম ব্যর্থতার জন্যে কাশ্মীর দু-টুকরো হয়ে আজও একটা বিপজ্জনক সমস্যা হিসেবে জেরবার করে চলেছে ভারতকে? তাঁরা কি জবাব দেবেন--১৯৬২তে চীনের সামনে কার চরম ব্যর্থতায় সেনাবাহিনী তাদের দায়িত্বভার দুই রাজনীতিকের হাতে তুলে দিয়ে চীনের বিরুদ্ধে অপমানজনক পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল? এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্যে ইতিহাস ঘাঁটতে হয়--কিন্তু স্পষ্টতঃই বোঝা যাচ্ছে ইতিহাসে এদের রুচি নেইসবচেয়ে বড় প্রশ্ন--আপনি কে রাহুল গান্ধী? আপনি কি রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলনেতা প্রধান বিরোধী দলের সভাপতি? একজন সাংসদ ছাড়া আপনার দ্বিতীয় পরিচয়টা কতটা গুরুত্বপূর্ণ যে আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা-বিদেশ মন্ত্রকের ফাইলপত্র আপনার বাড়িতে পাঠাতে হবে? আপনার মাতামহ প্রধানমন্ত্রী দেশসংশ্লিষ্ট যেসব মারাত্মক ধরণের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা কতজনের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়েছিলেন তার কোনো তথ্য আপনার কাছে আছে? নিজের দলের সিংহভাগ সদস্যই অন্ধকারে থেকেছেন যেখানে সেখানে বিরোধীরা কবে কতটুকু কি জানতে পেরেছেন বা জানানো হয়েছে তার নথিপত্র কখনো খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছেন? এসব কালচারে আপনাদের কোনো রুচি আগেও ছিল না--এখন তো একেবারেই নেই ! ফলে মস্তিষ্ককে চাবুক হিসেবে ব্যবহার করে সঙ্কীর্ণ কাদাখোঁচা রাজনৈতিক শস্তা আবেগকে সংযত করতে শিখে উঠতে পারেন নি--তাই নিজের অধিকারের বাইরে গিয়ে গলা ফাটানোর কৌতুকনাট্যের কুশীলবের চেহারায় মাঝে মাঝে লাফিয়ে উঠতে হচ্ছে ! মানুষ আপনাদের রাজনীতি একেবারেই বোঝে না--এতটা গবেট মানুষকে ভাবার মূল্য তো কিছু কম দিতে হলো না--এখনও ফালতু রাজনৈতিক আবেগকে সংযত রাখার শিক্ষাটা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না কেন--মানুষ এই প্রশ্নের উত্তর চাইছে
কংগ্রেস তো আছে কংগ্রেসেই--বামেদের প্রতিক্রিয়াটা একটু দেখে নেওয়া যেতে পারেহাইফাই মার্ক্সবাদীরা নিজেদের ইতিহাস শিক্ষক হিসেবে দাবি করতে খুবই আত্মশ্লাঘা অনুভব করেন--সুতরাং ধরেই নেওয়া যেতে পারে তাঁরা--বিশেষ করে সিপিএম আরএসপি নেতারা--১৯৪৫ থেকে চীন-ভারত সম্পর্কের ওঠানামার ইহিহাসটা শুধু পড়েছেন তাই নয়--মুখস্থও রেখেছেনসব বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ১৯৬২-তে ভারতীয় মার্ক্সবাদীদের অনন্যসাধারণ চীনপ্রেম (যাকে বলা যায় চীনচাটুতা)-এর খাতা যদি খোলা যায় তাহলেই যথেষ্ট এবং অনেকের কাছেই বিস্ময়কর মনে হলেও (আমার কাছে নয়) দেখা যাচ্ছে ভারতীয় সিপিএম-আরএসপি নেতাদের হৃদয়ের গভীরে এখনও সে নিবিড় প্রেম দিব্যি বেঁচেবর্তে আছেআছে বলেই তড়িঘড়ি ভারতকে সুকৌশলে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টায় বঙ্গ সিপিএমের শীর্ষ নেতা বিমান বসু দাবি করছেন ভারতের উচিত হবে চিনের সঙ্গে বৈঠকে বসে সমস্যার সমাধান করতে হবেযদিও তিনি বিগত কয়েক বছর ধরে চীন-ভারতের অনেকগুলি বৈঠক--রাষ্ট্রীয় সফর এবং প্রতিটি সফরে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে বার্তাবিনিময়ের খবর সবই রাখেন এবং তা সত্ত্বেও তার মনে হচ্ছে ভারতেরই ব্যর্থতার কারণে সীমান্ত সমস্যা মিটছে না ! দীর্ঘ প্রায় আট দশকের ইতিহাসে এই সীমান্ত সমস্যায় চীনের দাদাগিরি এবং অনড় মনোভাব যে কিছুতেই বদলাচ্ছে না এবং বদলাবে বলেও মনে করা যাচ্ছে না তার কারণটাও বিমানবাবুর অজ্ঞাত নয় সমস্যার সমাধান এক মুহূর্তেই হতে পারে যদি ভারত সরকার চীনের দাবি মেনে নিয়ে নিজেদের ভূখণ্ড চীনের হাতে তুলে দেয় ছাড়া দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই--এটা সকলেই জানেনকারণ, চীন এমন এক কষাইপ্রবৃত্তির মতাদর্শের দেশ যে দেশের নাগরিকরাই পশুর জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়চীনের এই এক দলতান্ত্রিক মতাদর্শের মধ্যে এখন আর সমাজতন্ত্রের বিন্দুবিসর্গ নেই যা আছে তার নাম জহ্লাদী সাম্রাজ্যবাদ এবং মারাত্মক রকমের আনপ্রেডিক্টেবল্’! এই মারাত্মক প্রবণতা ভয়ঙ্করভাবেই প্রকাশ্যে এসেগিয়েছিল তিয়ানআনমেন স্কোয়ারের সেই তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক শাসকের আলখাল্লা ছেড়ে সাম্রাজ্যবাদী উর্দিতে নুতন সাজে সেজে ওঠার মধ্যে দিয়েতারপর থেকে যত দিন গেছে চীনের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের চেহারা তত স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়েছেগোটা বিশ্বে চীন প্রায় সিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেতার উল্লেখযোগ্য মিত্র বলতে এখন পাকিস্তান ! সুতরাং বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়--লাদাখ সীমান্ত নিয়ে তাদের এত আগ্রাসী মনোভাব কেনএটা সনিয়া-রাহুলও যেমন জানেন তেমনই সিপিএম-আরএসপি নেতারাও জানেনতবু তাঁদের চীনদরদের রাজনৈতিক আবেগ একটুও কমছে না--কমলে ভারতের মাটিতে তাদের বিরোধিতার রাজনীতিতে যে টুকু শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার জায়গা রয়েছে তা থাকবে না--এটাই তাদের দলতান্ত্রিক ওয়াশিংমেশিনে ধোয়া মাথার বিশ্বাস !
সাধারণ মানুষেরও প্রধান চালিকা শক্তি হল সেই যুক্তিতর্কবোধহীন আবেগসর্বস্বতা ! চীন-ভারত সংঘর্ষে ২০ জন সেনার মৃত্যু খুব সঙ্গত কারণেই তাদের আবেগবিহ্বল করে তুলবেইচীনের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ বিক্ষোভ তুঙ্গে উঠে যাবেপ্রতিবাদে তারা মুখর হবেন--এসবই নির্দোষ আবেগেতাড়িত প্রতিক্রিয়াএটা ঠিকই চীনকে তার অওকাত বোঝাতে গেলে আর্থিক অবরোধ তৈরি করতে হবে দ্রুতএক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে সরকারের চেয়ে জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে আগে চীনাদ্রব্য বয়কটের মাধ্যমেচীনাদ্রব্য বয়কট মানে অবশ্য এই নয় যে, যেগুলো ইতিমধ্যে ভারতীয় মুদ্রার বিনিময়ে কেনাকাটা করা হয়ে গেছে সেগুলো দুমদাম ভেঙে ফেলা বা আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ানতুন করে আর কোনো চীনাদ্রব্য না কেনার সিদ্ধান্তই হবে প্রকৃতপক্ষে বয়কটএখন সেটাই করা দরকারচীনা দ্রব্যের ব্যবসা যারা করে তাদেরও ব্যাপারটার গুরুত্ব বোঝাতে হবেএখানেও আবেগ নয় মস্তিষ্ককে সক্রিয় করতে হবে
লাদাখে সংঘর্ষের আগে চীনের সঙ্গে প্রচুর আর্থিক লেনদেনের চুক্তি হয়ে আছে এবং এখনও চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ভারতের সঙ্গে ছিন্ন হয় নিবাণিজ্য (নির্মাণ, আমদানি-রপ্তানি, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান) এবং অন্যান্য বিষয়ে যেসব চুক্তি ইতিমধ্যেই করা হয়ে গেছে সেগুলো রাতারাতি এই মুহূর্তে বাতিল করা শুধু ভারতের কেন আমেরিকার পক্ষেও সম্ভব নয়--কারণ, সেক্ষেত্রে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হয়চুক্তি বাতিলের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সামলানো কঠিন হয়ে ওঠেসুতরাং এসব ক্ষেত্রে আবেগ নয় মস্তিষ্ককে দেশের স্বার্থে গুরুত্ব দিতে হয়নিম্নস্তরের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে মেতে ওঠার আগে এইসব বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রয়োজনীয় খোঁজখবর নেওয়া জরুরি--না নিলে নিজেদের মুর্খতাকেই আলোকিত করা হয় মাত্রদেশ একটা গলি নয়--প্রতিরক্ষা-বিদেশনীতিও ডাংগুলি খেলার বিষয় নয়এসব ব্যাপারে মতামত দেওয়ার আগে বা জবাব চাইবার আগে ইতিহাসের পাতা ওল্টাতে হয়--আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সম্পর্কে পড়াশোনা করতে হয়--দলীয় ওয়াশিংমেশিনে মাথা ধুয়ে এসে একই ভঙ্গিতে একই ভাষায়--দে গরুর গা ধুইয়েবলে চিৎকার করলেই নিজেকে বাহাদুর প্রমাণ করা যায় নাআবেগের ওপরে মস্তিষ্কের শাসনকে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সক্রিয় রাখতে হয়রাখতে পারলে আর যাইহোক নিজেকে ‘‘জোকার’’ হিসেবে তুলে ধরার উন্মত্ততা তৈরি হয় নাএটা আামর অভিজ্ঞতালব্ধ বিশ্বাস--কেউ মানতে পারেন--না- পারেনআমার কাছে আগে দেশ তারপরে চীন-আমেরিকা-পাকিস্তান এবং মতবাদ !!

Top of Form
Bottom of Form

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.