ভিন রাজ্যের মানুষদের ডেকে আনলে তো সংক্রমণ বাড়বেই? লকডাউনের ৪২ দিন ধরে গরিব পরিযায়ী শ্রমিকরা হেঁটে চলেছে? তার করুন পরিণতি ঔরঙ্গবাদে ১৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু
অমল গুপ্ত : গুয়াহাটি
গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনা ভাইরাস বা কোভিড ১৯ নামে মারাত্মক রোগটির সূত্রপাত হয়। তারপর কেটে গেছে তিন মাস। ভারতের ঘুম ভাঙে মার্চ মাসে। কেরেলাতে বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের দেহে। প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। তারপর অসম বিধানসভার বাজেট অধিবেশনও শুরু হয়ে যায়। ১২ ফ্রেব্রুয়ারি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী প্রথম কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে টুইট করে বলেন দেশে ভয়ঙ্করভাবে করোনা ভাইরাস ছড়াবে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। কেরলে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। ওদিকে, জোরকদমে সংসদ চলেছে। রাহুল গান্ধী দ্বিতীয় বার টুইট করে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর গোচরে দেন,
করোনা ভাইরাস ভারতবাসীর কাছে এক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছে। আবার ১৩ মার্চ রাহুল গান্ধী টুইট করে বলেন, করোনা ভাইরাস ভারতের অর্থনীতি ধ্বংস করে দেবে। সেই টুইট তিনটিকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি কেন্দ্রীয় সরকার।
সংসদ চালিয়ে গেছে। কংগ্রেসের বিরোধী দলপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী সংসদে ১৬ মার্চ, তৃণমূল কংগ্রেস দলপতি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৭ মার্চ সংসদে মারণ রোগ করোনা সংক্রমণের প্রেক্ষিতে সংসদের অধিবেশন বন্ধ করার দাবি জানিয়েছিলেন। সেই দাবি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সাংসদদের রাজ্যে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন। জানুয়ারি মাসে কেরলে যখন এই রোগ মাত্র ৫০০ ছুঁয়েছে, তখন লকডাউনের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে দেশে এই রোগ আজ ৫৬ হাজারকে ছুঁতে পারতো না বলে অসম প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক চিত্ত পাল আজ অভিযোগ করেন। সারাদেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর কোনো পরিকল্পনা না করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা, তাদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে,
বাইরের রাজ্যে কাজ করা মানুষগুলোকে নিজেদের ঘরে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা না করে কেন্দ্রীয় সরকার পর পর তিন বার,
মাঝে ৮ থেকে ১০ দিন বিরতি দিয়ে মানুষগুলোকে নিজের রাজ্যে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারতেন। তবে তাদের খাদ্যাভাবে, সামান্য পানীয় জলের অভাবে বেঘোরে প্রাণ দিতে হত না। গত ২৪ মার্চ থেকে দেশে লকডাউন চলছে। গাড়ি মোটর,
ট্রেন, বিমান সব বন্ধ। কাজ হারানো, দিন মজুর লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক পরিবার সন্তানদের নিয়ে শত শত মাইল হাঁটা দিয়েছে, আজও হাঁটছে,
তার প্রমান পাওয়া গেলো গতকাল মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গবাদ থেকে মধ্যপ্রদেশ যাবার উদ্দেশে রাতে পথ ক্লান্ত পরিযায়ী শ্রমিকরা রেল লাইনের মাঝে পাটাতনের উপর শুয়ে পড়ে ছিলেন, রাতে মালগাড়ি তাদের ১৬ জনকে পিষে দেয়,
ক্ষত বিক্ষত দেহগুলোর সঙ্গে তাদের সামান্য খ্যদ্য শুকনো রুটিগুলোও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে টিভির পর্দায় তা দেখা যায়। রুটির সঙ্গে ছেঁড়া চপ্পল পরে আছে। তাদের জন্যই দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। আর তাদের আজ করুন অবস্থা। প্রায় দুমাস লকডাউন হবে। দেশের অর্থনীতি আজ তলানিতে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর মদ বিক্রি করে,
তেলের দাম বাড়িয়ে রাজ্যগুলো আর্থিক পরিস্থিতির ভালো করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সব রাজ্যের মানুষ, সব রাজ্যে যায়। নানা রুজি রোজকারের লক্ষ্যে তারা ঘর ভাড়া নেয়। তাদেরকে নিজের নিজের রাজ্যে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে কেন?
এই বুদ্ধি কে দিয়েছে?
রাজ্যগুলোর সরকারকে অনুরোধ করে নিজেদের মানুষগুলোর থাকা খাওয়ার বাবস্থা করছে না কেন?
ভিন রাজ্য থেকে আসা মানুষগুলি তাদের দেহে সংক্রমণ নিয়ে আসছে। তাদের অজান্তে, অসমে গত কয়েকদিনে ২০, ২৫ হাজার মানুষ এসেছে। তাদের থেকে দ্রুত রোগ ছড়াচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা আজ ভিন রাজ্যে থাকা মানুষেরদের এখন অসমে না আসার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জানান, অসমের ৫ লক্ষের বেশি মানুষ বাইরের রাজ্যে বসবাস করছে। বিজেপির বিধায়ক শিলাদিত্য দেব আজ বলেন,
৫ লক্ষ মানুষের জন্যে অসমের তিন কোটি মানুষকে কেন মূল্য দিতে হবে?
কোন মন্তব্য নেই