Header Ads

‘রুম’--লকডাউনের অনেক আগেই লেখা ঘরবন্দি থাকার গল্প !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় 
 
‘রুম’ এক মা আর ছেলের ঘরবন্দি থাকার গল্প। বছরের পর বছর একটি ঘরে বন্দি ছিল তারা। এক নারী আর তার শিশুপুত্রের এক ঘরে বসবাসের মানসিক অবস্থা আর রোজকার টানাপোড়েন নিয়ে এমা ডনাঘিউ রচনা করেন এই অনন্যসাধারণ উপন্যাস। ‘রুম’ নিয়ে অস্কারজয়ী সিনেমাও হয়েছে। তবে এই উপন্যাসটি চলমান করোনাকালের নয়। বরং আরো এক দশক আগে এর সৃষ্টি। বিষয়ের কারণেই করোনা ভাইরাসের জেরে মানুষের ওপর চেপে বসা লকডাউন পরিস্থিতির সঙ্গে প্রায় হুবহু মিলে যায় ‘রুম’। 
 
এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘মা’-এর মধ্যে দীর্ঘদিন একঘেয়ে জীবন যাপনের বিরক্তি, হতাশা, উৎকণ্ঠা, ক্ষোভ-সবই আছে। কিন্তু একই সঙ্গে রয়েছে সন্তানের জন্য সুস্থ, স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা। ২০১০ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসটি বেস্ট সেলারের মর্যাদা পায়। কাহিনীর ভিন্নতা আর চমৎকারিত্বের কারণে বুকার পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও স্থান করে নেয় এটি। বিস্ময়করভাবে কাহিনীর সেই ভিন্নতাই আজ আমাদের জীবনের চরম বাস্তবতা। আমরাও এখন বাস করছি বদ্ধ ঘরে, ঘরে থেকেই বাচ্চারা অনলাইনে স্কুল করছে।
লাখ লাখ কপি ‘রুম’ বিক্রির পর বইটি নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি হয় ২০১৫ সালে। ছবিটি সেরা অভিনয়সহ একাধিক ক্যাটাগরিতে অস্কার পায়। ছবিতে দেখা যায়, অপহৃত এক তরুণীকে বাগানের একটি ঘরে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। দিনের পর দিন মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। একপর্যায়ে একটি শিশুর জন্ম হয়--জ্যাক। ওই একটি মাত্র ঘরেই বেড়ে ওঠে শিশুটি। একটা হাতাশাব্যঞ্জক বিষয়কে নানা
বর্ণে-শব্দে রাঙিয়ে উপভোগ্য করে উপস্থাপনের জন্য এমা ব্যাপক প্রশংসিত হন।
এতে দেখা যায়, ওই তরুণী মা তার ছেলের জন্য সারা দিনের নানা কাজের জন্য রুটিন তৈরি করে দিয়েছেন। রুটিনে যেমন আছে ব্যয়াম তেমন আছে খেলার ব্যবস্থাও। কী করে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করতে হবে, পড়ালেখা, গল্প বলার জন্য সময় নির্দিষ্ট করার সঙ্গে সঙ্গে আছে ঘড়ির কাঁটা ধরে টিভি দেখার ব্যবস্থাও। আর এই নিয়মিত অভ্যাসগুলোই মা-ছেলেকে সুস্থ রাখে।
এই মা-ছেলের যন্ত্রণার সঙ্গে কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের জন্য অবশ্য আজকের এই কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থার তুলনা চলে না। তবে ঘরবন্দি পরিবারগুলো কোথাও না কোথাও এদের কাছেও আশ্রয় পায়। একই সঙ্গে পেতে পারে পরামর্শও, এমন বন্দিদশাতেও কী করে ভালো ও সুস্থ থাকা যায়।
লেখক এমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা আয়ারল্যান্ডে। এখন বাস করেন কানাডায়। কিশোর বয়সী দুই সন্তানের মা। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘রুম’ লেখার পর আজকের পরিস্থিতিতে পৌঁছে তার পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলার আছে কি-না। ছোট বাচ্চা থাকলে বদ্ধ জীবন তীব্র কষ্ট তৈরি করে--এ কথা মেনে নিয়েই বললেন, রুটিন জীবনে প্রবেশ করা খুব জরুরি। মা-বাবাকে হতে হবে সৃজনশীল। বাচ্চাদের জন্য ভাবতে হবে, কাজ করতে হবে এবং করাতেও হবে। সামাজিক মেলামেশার সুযোগ এখন আর নেই। কাজেই লক্ষ রাখতে হবে বাচ্চারা যেন একা হয়ে না পড়ে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.