Header Ads

দিয়া-রাজনীতির হার-জিৎ !!

 বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
দেশটা ভারতবর্ষ, সুতরাং দশমিক এক শতাংশ (.১%) অতি উৎসাহী আবেগপ্রবণ লঘু চিত্তের চ্যাংড়া যে বাজি-পটকা ফাটাবে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম, ফলে অবাক হই নি। যেমন অবাক হইনি ঐ .১%-এর মধ্যেই থাকা মোম-প্রদীপ গবেষকদের নিরন্তর খুজলি রোগে ছটফট করতে দেখেও।

অবাক হই নি বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞদের আতঙ্কে ছটফট করতে দেখেও। কারণ ঐ সব বিশেষজ্ঞরা ভেবে দেখে নি দিনের বেলায় ঘরে ঘরে কত ওয়াটের আলো জ্বলে এবং তার প্রতিক্রিয়ায় কতবার গ্রীড বসে গিয়ে কেলেঙ্কারি হয়। তারা ভাল করে শোনেও নি প্রধানমন্ত্রী ঠিক কি বলেছেন। তিনি ভুল করেও একবারও বলেন নি যে ৯ মিনিট ইলেক্ট্রিসিটিকে শাটডাউন করে দেওয়া হবে। তিনি বলেছেন রাস্তা-ঘাটে হাসপাতালে এবং জরুরি সর্বত্র আলো জ্বলবে। বাড়িতেও শুধু আলো ছাড়া সবই চলবে।

 বিদ্যুৎমন্ত্রক থেকেও যা বলার তা বলে দেওয়া হয়েছিল। তবু প্রধানমন্ত্রীর এই দীপ জ্বালানোর আহ্বানটাকে নিয়ে কয়েকদিন ধরে যা চলছিল তার বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছিল বলে আমার মনে হয় নি। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু একজন রাজনৈতিক মানুষ অতএব আমাদের শিক্ষা ও সংষ্কার তাঁর প্রতিটি উচ্চারণের মধ্যেই রাজনীতি খুঁজে মরে। শুধু তাঁর কেন, আমাদের মুখ্যমন্ত্রীরও কোনো কথাই রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণের বাইরে থেকে আলোচিত হয় না। তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু থাকে না। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন কেন তিনি কয়েক মিনিটের জন্যে দেশের মানুষকে প্রদীপ জ্বালাতে বলেছেন। কিন্তু তিনি বললে কি হবে--এটা যে গূঢ় রাজনৈতিক মতলবেই বলা সেটা প্রমাণের জন্যে যুক্তিরৎ কোনো অভাবই তো নেই--সুতরাং খিল্লি করো--ইয়ার্কি-ফাজলামি করো !
হ্যাঁ, আমিও মনে করি--করোনা মুক্ত হওয়ার পর এই আলো’র আয়োজন হলেই খুব ভাল হতো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানে যারা সাড়া দিলেন তাদের ক্ষতি কতটা হল, অথবা সাড়া না দিলে কতটা লাভ হতো সেটা ‍বোঝা গেল কিনা তা বিদগ্ধরাই বলতে পারবেন। লাগাতার তিন-চার দিন ধরে দেওয়ালী উৎসবে যত দীপ-মোম জ্বলে, যত বাজি-পটকা ফাটে তাতে যে পরিমাণে দূষণ তৈরি হয় তার ‍তুলনায় খুবই সামান্য দূষণ আজও তৈরি হল--যা না হলেই ভাল হতো। কিন্তু কে কাকে বোঝাবে !
গোটা দেশ জুড়ে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে মানুষ সাড়া দিল। কোটি কোটি মানুষ দিয়া-মোম জ্বালালেনও--খিল্লিতে তলিয়ে থাকা মুখগুলো অন্ধকারও হলো। কিন্তু হতো না--যদি ব্যাপারটা তলিয়ে ভেবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার শিক্ষা ও রুচিবোধ আমাদের থাকতো !
এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যের মধ্যে  আমি ক্ষুরধার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রকাশ ঘটতে দেখেছি। কিন্তু তাঁর সেনাবাহিনীর একজনও তো মমতা নয় এবং বাম-কংগ্রেসেরও শুধু বিরোধিতা করার জন্যেই বিরোধিতার রাজনীতি আঁকড়ে টিকে থাকার দুর্বল লড়াইয়ের মধ্যে ক্ষুরধার রাজনৈতিক মেধার খোঁজ করাটাও কোনো কাজের কথা নয়। মোদী বিরোধিতার রাজনীতিতে এদের অসহায় ক্রন্দন দেখতে দেখতে মানুষ বিরক্ত হচ্ছে ভীষণভাবে। কথায় কথায় তুর্কীনাচন নাচতে গিয়ে বার বার মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়ার অভ্যাস থেকে এদের কবে মুক্তি ঘটবে কে জানে !
দিয়া প্রজ্জ্বলনের রাজনীতিতে গো-হারা হেরে যাওয়াদের মুখের দিকে তাকাতে সত্যি খুব কষ্টই হচ্ছে অনেকের মতো আমারও। যদিও এই রাজনৈতিক সংস্কার থেকে মানুষের রেহাই পাওয়া খুবই কঠিন !!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.