Header Ads

প্রসঙ্গ করোনা ভাইরাস : উত্তরের উদ্বেগ !!

 বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়

আমি বরাবরই খুব বিস্ময়ের সঙ্গেই লক্ষ্য করে আসছি সারা দেশ যখন উদ্বেগে জেগে থাকে তখন কী শহর কী গ্রাম--উত্তরের মানুষ দিব্যি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকে ! জানি, আমার এই বাক্য অনেকেরই আঁতে খোঁচা দেবে--তবু যা সত্যি তা অস্বীকার করার অভ্যাস আমার নেই।

 গত জানুয়ারি থেকে করোনা শব্দটি মানুষের মস্তিষ্কে টোকা মারতে শুরু করেছিল--দেখতে দেখতে আজ মার্চের ১৮ তারিখ, প্রশ্ন উঠতেই পারে বাচালতায় চূড়ান্ত দক্ষ উত্তরের নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক-জেলাপরিষদের সভাধিপতি-পুরপ্রধানরা এতদিন কি করছিলেন? খোদ উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ-হাসপাতালে এতদিনেও আইসোলেশন, আইসিইউ পরিকাঠামো যুদ্ধকালীন তৎপরতার সঙ্গে গড়ে তোলা গেল না কেন? করোনা ভাইরাস নির্ণায়ক কিট বা পরিকাঠামো নেই কেন? আরও অসংখ্য প্রশ্ন রয়েছে--আমি তুলছি না। খোদ উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের যদি এই দশা হয় তাহলে উত্তরের অন্যান্য গ্রাম-শহরের অবস্থা যে কী ভয়ানকভাবে উদ্বেগজনক সেটা মনে হচ্ছে থার্ড স্টেজে যদি উত্তরবঙ্গ দুর্ভাগ্যবশতঃ ঢুকে পড়ে তাহলে তার ভয়াবহতা হাড়ে হাড়ে টের পেতে অসুবিধে হবে না। তখন কাউকে কিছু বলে বা কারুর অনুপ্রেরণায় গর্বিত হয়েও বাঁচা যাবে না। কারণ কাণ্ডজ্ঞানহীন বাতেলা আর দায়িত্বজ্ঞানহীন আত্মপ্রচার সর্বস্ব রাজনীতি আর যা-ই দিক ঐশ্বরিক ক্ষমতা কাউকে দেয় না।
তীব্র সচেতনতার অভাব সাধারণ মানুষ থেকে শিক্ষিত মানুষ--যারা নিজেদের সচেতন ও সর্বজ্ঞ মনে করেন তাদের নির্বিকার জীবনযাপনের ছবিতে স্পষ্ট প্রতিফলিত হচ্ছে। লোকজনের ভিড় যথাসম্ভব যখন এড়িয়ে চলার জন্যে ‘হু’ এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বার বার সতর্ক করে আসছে মাসাধিক কাল থেকেই তখনও রাজনৈতিক নেতাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক কাণ্ডজ্ঞানহীন নৌটঙ্কি মার্কা সম্মিলন-অনুষ্ঠানে নাচানাচি করতে দেখা যাচ্ছে--কাউকে কাউকে তো কেত্তনের আসরে ভাবাবেগে গলাগলিও করতে দেখা যাচ্ছে ! কী হচ্ছে এসব? শহরে শহরে জঞ্জালের স্তুপ--যেখানে সেখানে খ্যাক্ খ্যাক্ করে লোকে কাশছে--থুথু ফেলছে--মনের আনন্দে হাঁচছে--বাড়ির মধ্যে ষাটোর্দ্ধ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এবং শিশু থাকলেও সগর্বে নির্মাণ কাজ চালানো হচ্ছে--প্রচুর পরিমাণে বাইরের লোকজন ঢুকছে যারা একেবারেই পরীক্ষিত নয়--হাঁচি-কাশি-সর্দি সহ কাজ করে চলেছে--যারা এসব করাচ্ছে তারা করোনা ভাইরাসের থার্ড স্টেজের ভয়াবহতা সম্পর্কে যে বিন্দুমাত্র সচেতন নয় সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
নেপাল-ভূটান-বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তরের সীমান্তের বিরাট এলাকা সংযুক্ত। সীমান্তে গত পরশুও কোনরকম স্ক্রীনিংয়ের ব্যবস্থা ছিল না--কতজন ইতিমধ্যে এই মারণ ভাইরাস নিয়ে ঢুকে পড়েছে তার কোনও ডেটা উত্তরের কোনো জেলা প্রশাসনের কাছে আছে? মহকুমা শাসকেরা কি করছেন? নিজের নিজের এলাকার হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো সম্পর্কে তাঁরা কতটা ওয়াকিবহাল তা নিয়ে মানুষের ঘোরতর সংশয় থাকছেই। এই মুহূর্তের এই গভীর সঙ্কটের গভীরতা বুঝিয়ে তাঁরা রাজ্য-কেন্দ্র স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সঙ্গে পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন? জানালে এই নিদারুণ পরিস্থিতি মানুষকে দেখতে হতো না। মহকুমা শাসকেরা উপযুক্ত মাস্ক পরিয়ে সিভিক-পুলিশদের মাঠে নামাচ্ছেন না কেন তাদের স্পট-ফাইন করার জন্য যারা যত্রতত্র থুথু-কফ ফেলে চলেছেন? কবে করবেন মান্যবরেরা এসব--র্থাড স্টেজ ব্রেক-আউটের পর? আপনারা এসব করতে পারছেন না কারণ, আপনারা জানেন বিনামূল্যের অনুপ্রেরণা ছাড়া আর বিশেষ কিছু ব্যবস্থা করার ক্ষমতা আপনার সরকারের নেই। বাতেলা সর্বস্বতাও যে এক ধরণের মারণ ভাইরাস তা মানুষকে প্রায় প্রতিনিয়ত বুঝতে হচ্ছে। সুতরাং বাঁচার শেষ চেষ্টা মানুষকেই করতে হবে।
প্রশাসন প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলতে যে সক্ষম নয় এ সম্পর্কে কারুর কোনো সন্দেহ নেই। কাজেই যথাসাধ্য মানুষকে সচেতন হতে বাধ্য তো করতে পারেন ! যেখানে সেখানে অচেতন নির্বোধ লোকজনের থুথু-কফ ফেলা বন্ধ করতে পারেন, আগামী
তিন সপ্তাহ যে কোনো ধরণের জমায়েত-ধরণা-সম্মিলন বন্ধ
করতে পারেন, বাড়িতে লোকজন যারা আসছে যাচ্ছে তাদের ব্যাপারে মানুষকে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করতে পারেন--পারলে অনেক কিছুই পারেন এবং পারা অত্যন্ত জরুরি। প্রশাসন ফেলিওর হলে মানুষকেই সিরিয়াসলি ভাবতে হবে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে।
বার বার দু’চার ঢোক গরম জল খান। গলা খুশখুশ করলে হাঁচি-কাশির প্রবণতা দেখা দিলে নাক দিয়ে জল পড়লে গরম জলে আপেলসাইডার ভিনিগার মিশিয়ে খান--দ্রুত উপকার হবে। সম্ভব হলে কাজের লোকদেরও দু’সপ্তাহের জন্যে ছুটি দিয়ে দিন। মারাত্মক প্রয়োজন না থাকলে বাড়ির মধ্যেই থাকুন। ঘন ঘন ডেটল সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন। রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রক্ষার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার অবশ্যই খাবেন এবং প্রাণীজ প্রোটিন (খুব জরুরি) খুব ভালভাবে সেদ্ধ করে খান। এইসব নিয়ম দু’তিন সপ্তাহ পালন করলে আপনি কারুর মাথা কিনবেন না--নিজের এবং পরিবারের সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন--যেটা আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে--বিশেষ করে আপনি যদি রাজনৈতিক ওয়াশিংমেশিনে নিজের মাথাটা খুব ভাল করে না ধুয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে এসব মানতেই হবে। মনে রাখতে হবে--এই মুহূর্তে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরাও সেফজোনের মধ্যে থাকছেন না। সুতরাং এই বিষয়টি নিয়ে খিল্লি বা জোক করার আগে দশ বার ভাবুন। নিজের সঙ্গে অন্য সকলকে বাঁচাতে চেষ্টা করুন !

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.