Header Ads

আটটি জঙ্গি সংগঠনের 644 জন ও হিন্দু বাঙালি জঙ্গি গোষ্ঠীর অস্ত্র সহ 300 ক্যাডারের আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ



কোনোভাবেই হিংসা বা সন্ত্রাসবাদকে যেমন প্রশ্রয় দেওয়া হবে না, তেমনি হিংসা ছেড়ে কেউ শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে চাইলে এই সরকার স্বাগত জানাবে : মুখ্যমন্ত্রী সনোয়াল

নকুল রায়,  গুয়াহাটি : গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রেক্ষাগৃহে বৃহস্পতিবার অস্ত্র ত্যাগ করে জীবনের মূল স্রোতে ফিরে এসেছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের 644 জন সন্ত্রাসবাদী এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে খোদ মুখ্যামন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের হাতে অস্ত্র তুলে আত্মসমর্পণ করেছে 644 জন জঙ্গি
কেএলও, আরএনএলএফ সহ মোট আটটি সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকদিন ধরেই এই প্রক্রিয়া অব্যাহত ছিল এর মধ্যেই সব ব্যবস্থা করে স্বরাষ্ট্র বিভাগ এবং পুলিশের বিশেষ শাখা দীর্ঘ আলোচনা শেষে ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম-ইন্ডিপেন্ডেন্ট (ইউএলএফএ-আই), ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ বোডোল্যান্ড (এনডিএফবি), কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও), রাভা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (আরএনএলএফ)-এর মতো সংগঠনের সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছেন। সঙ্গে তারা 177টি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, তিনশোর বেশি গ্রেনেড এবং তাজা গুলি জমা দিয়েছেন সরকারকে
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গিদের নতুন জীবনে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আজ এই অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে আমি উপলব্ধি করতে পারছি, 2016 সালে আমাদের হাতে শাসনভার তুলে দিয়েছিলেন বরাক-ব্রহ্মপুত্রের মানুষ তখনই লক্ষ্য ঠিক করা হয় সন্ত্রাসবাদমুক্ত রাজ্য গঠনের আর এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এগিয়ে চলেছে সরকার দীর্ঘ চার বছর পর এর ফল মিলেছে আজ একসঙ্গে 644 জন সন্ত্রাসবাদী জীবনের মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন আমি এদের আন্তরিকতার সঙ্গে স্বাগত জানাচ্ছি এখন সবাই মিলে অসমকে ভারতের বুকে এক অন্যতম শক্তিশালী রাজ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে সকল ভাষা-ভাষি, জাতি-ধর্মের লোককে মিলেমিশে কঠোর পরিশ্রম করে অসমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে দেশের 130 কোটি মানুষের মধ্যে প্রমাণ করতে হবে, আমরা সবদিক দিয়ে শক্তিশালী তিনি আরও বলেন, যাঁরা ফিরে এসেছেন, তারা অনেক বড় কাজ করেছেন গণতন্ত্রের উপর যে তাঁদের বিশ্বাস রয়েছে সেটা আজ প্রমাণ হয়ে গেছে
মুখ্যমন্ত্রী সনোয়ালের মতে, কোনো রাজ্য বা দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শান্তির কারণ, শান্তি ছাড়া প্রগতি সম্ভব নয় আর এই কাজ আমাদেরই করতে হবে তাই এই রাজ্যকেও সন্ত্রাসমুক্ত করার পাশাপাশি স্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনতে নিরন্তর কাজ করে চলেছে এই সরকার কোনোভাবেই হিংসা বা সন্ত্রাসবাদকে যেমন প্রশ্রয় দেওয়া হবে না, তেমনি হিংসা ছেড়ে কেউ শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে চাইলে এই সরকার স্বাগত জানাবে তবে কোনো ক্ষেত্রে হিংসা বরদাস্ত করা হবে না বলে তিনি জানান এখনও যাঁরা সন্ত্রাসের পথ ত্যাগ করে আসেননি, তাঁদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন সবাই মিলে শান্তির অসম গড়ে তুলি এই রাজ্যকে দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাজ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠি করতে আপনাদের সহযোগিতারও প্রয়োজন রয়েছে
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, যাঁরা অস্ত্র ত্যাগ করে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে শান্তির পথে ফিরে এসেছেন তাঁদের সংস্থাপনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এর আগেও যাঁরা জীবনের মূল স্রোতে ফিরেছেন তাঁদেরও সংস্থাপন দিয়েছে সরকার আত্মসমর্পণকারী 644 জনও যাতে সসম্মানে বেঁচে থাকতে পারেন এই ব্যবস্থা করা হবে তাছাড়া, সরকারেরও বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে আত্মসমর্পণকারীদের জন্য এসব প্রকল্পের অধীনেও অনেক সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারবেন তাঁরা
এদিকে, রাজ্যে জঙ্গিগোষ্ঠীর আত্মসমর্পণ সমারোহে হিন্দু বাঙালির জঙ্গি সংগঠন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব বেঙ্গলিনামের এক জঙ্গি গোষ্ঠীর আবির্ভাব চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে বুধবার রাত 10টা নাগাদ 300 সদস্যের এক বিশাল বাহিনী অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র হাতে নিয়ে ওদালগুড়ির পুলিশ সুপারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে
অমরজিৎ পালের নেতৃত্বে এনএলএফবি-র এই 300 ক্যাডার বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল সহ পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহনীর শীর্ষ আধিকারিকদের সামনে আত্মসমর্পণ করেছে এর আগে বুধবার রাতে হঠাৎ করে এনএলএফবি-র আবির্ভাবে স্তম্ভিত বিভিন্ন মহল তারা প্রকাশ্যে অস্ত্র সহ 300 ক্যাডারকে সঙ্গে নিয়ে এসে এনএলএফবি-র স্বঘোষিত চেয়ারম্যান অমরজিৎ পালের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল হিন্দু বাঙালির নাগরিকত্বের প্রশ্ন নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে আত্মসমর্পণের সময় তারা প্রায় 375টি মারণাস্ত্র ও বিস্ফোরক সামগ্রী জমা দেয় এর মধ্যে 7.5 পিস্তল, 9 এমএম পিস্তল, হস্ত নির্মিত বন্দুক, আইইডি বিস্ফোরক, গ্রেনেড, অ্যামিনেশন প্রভৃতি রয়েছে সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, তাদের মূল দাবি ছিল অসমে বসবাসকারী হিন্দু বাঙালির নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা কারণ অসমে বসবাসকারী হিন্দু বাঙালিরা বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের বলি আসছেন ডি ভোটার সমস্যায় আক্রান্ত হিন্দু বাঙালিদের অনেকেই ডিটেনশন ক্যাম্পে এখনও আবদ্ধ হয়ে আছেন এবং কেউ কেউ মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছেন দীর্ঘদিন ধরে এই ডি ভোটারের শিকার হয়ে চলছে হিন্দু বাঙালিরা
তিনি বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ করায় তারা খুশি তার মতে, সিএএ-র ফলে অসমে বসবাসকারী হিন্দু বাঙালিরা উপকৃত হবেন এলএলএফবি-র প্রধান অমরজিৎ পাল আরও জানান, তার সংগঠনের মূল লক্ষ্যই ছিল অসমে বসবাসকারী হিন্দু বাঙালিদের নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়া, অসমের হিন্দু বাঙালিদের জন্য একটি স্যাটেলাইট কাউন্সিল গঠন করা, ডিটেনশন ক্যাম্পে আবদ্ধ হয়ে থাকা হিন্দু বাঙালিদের উদ্ধার করা সহ ডি-ভোটার সমস্যা থেকে হিন্দু বাঙালিদের মুক্ত করা এছাড়াও তাদেরও পুনঃসংস্থাপনের জন্য সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাতে তারা রাজ্যের সর্বাঙ্গীন উন্নয়নের কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালনের সুযোগ পান
রাজ্যে বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবাদের আগুন জ্বলছে এই মুহূর্তে হিন্দু বাঙালি জঙ্গি সংগঠনের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে সমর্থন জানিয়ে সরকারের কাছে আত্মসমর্পণের ঘটনা রাজ্য জুড়ে এক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে
এনিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়ারও সৃষ্টি হয়েছে এনিডএফবি(এস)-র দুই গোষ্ঠীর আত্মসমর্পণ নিয়ে বিভিন্ন মহলে গত কিছুদিন ধরে চর্চার বিষয় হয়ে উঠলেও বাঙালি জনমুক্তি বাহিনী নামের সংগঠন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের সরকারি অনুষ্ঠানের 24 ঘণ্টা আগে এনএলএফবি নামের জঙ্গি সংগঠনের আত্মসমর্পণের ঘটনা স্বাভাবিকভাবে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে
আজকের কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রী বিদায়ী জিওসি 4 কর্পস লেফটেন্যান্ট জেনারেল মনোজ পান্ডেকেও সম্মান জানিয়েছেন এবং আগত জিওসি 4 কর্পস লেফটেন্যান্ট জেনারেল শান্তনু দয়ালকে স্বাগত জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে বিধায়ক তুপর্ণা বড়ুয়া, মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবি শান্তনু ভরালি, মুখ্যসচিব কুমার সঞ্জয় কৃষ্ণ, ডিজিপি ভাস্কর জ্যোতি মহন্ত, অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র বিভাগের মুখ্য সচিব জিশনু বড়ুয়া, কমিশনার ও স্বরাষ্ট্র বিভাগের সচিব আশুতোষ অগ্নিহোত্রি, এডিজিপি (আইনশৃঙ্খলা) জিপি সিং, আইজিপি এসবি হিরেন নাথ, রাজ্য সরকারের সমন্বয়ক পল্লব ভট্টাচার্য প্রমুখরা উপস্থিত ছিলেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.