Header Ads

বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও রাজ্যপালের ডানা ছেঁটে ফেলল রাজ্য সরকার !

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় : আরও জোরালো হল সংঘাত। কারণ রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আচার্য তথা রাজ্যপালের ক্ষমতা খর্ব করার জন্য নতুন বিধি বিধানসভায় পেশ করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট বা কোনও ধরনের বৈঠক ডাকার ক্ষেত্রে এতদিন নিয়ম ছিল, উপাচার্যের তরফে আচার্য তথা রাজ্যপালকে বৈঠকের দিন জানানো হবে এবং তারপর রাজ্যপাল বৈঠক ডাকবেন। কিন্তু নতুন নিয়মে রাজ্যপালের সেই অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে বৈঠক ডাকার ক্ষেত্রে উপাচার্য শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে আলোচনাক্রমে সেই বৈঠক ডাকতে পারবেন। রাজ ভবনকে শুধুমাত্র দিনক্ষণ উপাচার্যের তরফে জানিয়ে দিলেই হবে। 
এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক উপাধি দেওয়ার ক্ষেত্রে যে তালিকা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করত, সেই তালিকা রাজ্যপালের কাছে পাঠাতে হতো। তারপর প্রয়োজনে রাজ্যপাল সেই তালিকায় বদল আনতে পারতেন। কিন্তু নয়া নিয়মে বিশ্ববিদ্যালয় তালিকা পাঠাবে শিক্ষা দপ্তরকে। শিক্ষা দপ্তর সেই তালিকা পাঠাবে রাজভবনকে। সেই তালিকায় কোন বদলের ক্ষমতা রাজ্যপালের থাকবে না। 
রাজ্যপালের সঙ্গে এখন থেকে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যত কোনও সরাসরি যোগাযোগ থাকবে না। সবক্ষেত্রেই শিক্ষা দপ্তর মারফত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রাজভবনের যোগাযোগ হবে নয়া নিয়মে। আগে নিয়ম ছিল কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে সার্চ কমিটি মারফত তিনজনের নামের তালিকা শিক্ষা দপ্তর রাজ্যপালকে পাঠাবে। সেই তিনজনের মধ্যে থেকে কোনও একজনকে রাজ্যপাল উপাচার্য হিসেবে বেছে নেবেন। কিন্তু নয়া নিয়মে বলা হয়েছে, এখন থেকে তিনজনের মধ্যে যে কোনও একজন নয়, প্রথমে যার নাম থাকবে সেই নামেই অনুমোদন দিতে হবে রাজ্যপালকে। 
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতিতে রাজ্যপালের একজন প্রতিনিধি থাকতো এতদিন। সেই নাম রাজ্যপাল নিজেই ঠিক করতেন। তবে নতুন নিয়মে, এখন থেকে শিক্ষা দপ্তর রাজ্যপালকে তিনটে নাম পাঠাবে। সেই নামের মধ্যে থেকেই যেকোনও একজনকে বিশ্ব বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতিতে রাজভবনের প্রতিনিধির জন্য মনোনীত করতে হবে রাজ্যপালকে। 
যদি কোনও উপাচার্য বা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে রাজ্যপালের কোনও অভিযোগ থাকে তাহলে এখন থেকে রাজ্যপাল সরাসরি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে শিক্ষা দপ্তরকে জানাতে হবে রাজভবনের তরফে এবং তারপর শিক্ষা দপ্তর তদন্ত করে খতিয়ে দেখবে। সেই তদন্তের ভিত্তিতে হবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত। 
সমাবর্তনের ক্ষেত্রেও উপাচার্য যা সিদ্ধান্ত নেবেন তা শিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে নিতে হবে। সরাসরি সমাবর্তনের ক্ষেত্রে আচার্য রাজ্যপাল উপাচার্যের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। 
আচার্যের বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত যদি কোনও প্রস্তাব থাকে তাহলে তা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে জানানো যাবে না। এতদিন আচার্য বা রাজ্যপাল তা সরাসরি উপাচার্যকে জানাতে পারতেন। এখন থেকে যেকোনও প্রস্তাব শিক্ষা দপ্তর মারফত রাজ্যপালকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাঠাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আচার্যের কোন সচিবালয় থাকবে না। এতদিন তা ছিল। 
বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনও বিধির ক্ষেত্রেই প্রয়োজনমতো বদলের ক্ষমতা রাজ্য সরকারের হাতেই থাকবে। ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম সংক্রান্ত যে আইন, সেই আইনের পরিপ্রেক্ষিতে যে বিধি তৈরি হয়েছিল সেই বিধিতে বদল নিয়ে এল রাজ্য সরকার। 
এটা কোন বিল নয়, ২০১৭ সালে এই সংক্রান্ত সংশোধনী বিল পেশ হয়। সেটা আইন হয়ে গিয়েছে। আইন তৈরি হওয়ার পর যে বিধি তৈরি করতে হয় সেই বিধির বদল নিয়ে আসা হলে সেক্ষেত্রে রাজ্যপালের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। সরকার নিজের মতো তাতে বদল করতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.