Header Ads

মহারাষ্ট্রে পাশা উল্টিয়ে বিজেপির দাবি ১৭০ বিধায়কের সমর্থন, আরও ভাঙনের আশঙ্কা !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় 
 
মহারাষ্ট্রের মসনদ দখল শেষপর্যন্ত করল বিজেপিই। এবার বিধানসভায় সংখ্যার লড়াই। বিজেপি দাবি করছে, তাঁদের সঙ্গে রয়েছে ১৭০ জন বিধায়ক। এর আগে এনসিপি-কংগ্রেস-শিবসেনা সম্মিলিতভাবে দাবি করেছিল তাঁদের সঙ্গে ১৭০ জন বিধায়ক রয়েছেন। এখন পাশা উল্টে দিয়ে বিজেপি সেই দাবি
করে বসল।


এবার মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ও শিবসেনা জোট গড়ে লড়াই করেছিল। বিজেপি জিতেছিল ১০৫টি আসনে। আর শিবসেনা জিতেছিল ৫৬টি আসনে। উভয়ে মিলে ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বাধ সাধে মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে লড়াই। এই অবস্থায় জোট ভেঙে যায়। শেষপর্যন্ত এনসিপির একাংশকে ভাঙিয়ে সরকার গড়ে বিজেপি !
এনসিপি ছেড়ে অনুগামীদের নিয়ে বেরিয়ে এসে বিজেপিকে সমর্থন দিয়েছেন অজিত পাওয়ার। তিনি নিজে উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন। আর জানিয়েছেন ৩০ জন বিধায়ক তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন। অর্থাৎ ৩০ জন বিধায়ক এনসিপি ছেড়ে এলে বিজেপির সমর্থনে সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১৩৫। এই সংখ্যা ম্যাজিক ফিগারের থেকে ১০ কম।
২৮৮ সদস্যের বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগার ১৪৫। এই সংখ্যা পেতে বিজেপি এখন শিবসেনা বা কংগ্রে্স বা এনসিপির দিকে তাকিয়ে। ইতিমধ্যেই জল্পনা, শিবসেনার চার বিধায়ক বিজেপির সঙ্গে রয়েছেন। এদিন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেবেন্দ্র ফড়নবিশের শপথ গ্রহণের পর মহারাষ্ট্রে ঘোড়া-কেনাবেচার তত্ত্ব ফের উঠে পড়েছে।
এখন বিজেপিকে লাইফ লাইন দিয়েছেন বিদ্রোহী এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ার। তিনি মহারাষ্ট্রে বিরোধী জোট ভেঙে বিধায়কদের নিয়ে বিজেপি শিবিরকে সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। বিজেপি সরকারকে এখন সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রমাণ দিতে হবে। মহারাষ্ট্রে দেবেন্দ্র ফড়নবিশ শপথ নেওয়ার পর বিজেপির সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রমাণে তুরুপের তাস হতে চলেছেন অজিতই।
অন্যদিকে শিবসেনার কমপক্ষে ১৭ জন বিধায়ক দলের সুপ্রিমো উদ্ধব ঠাকরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারেন। দেবেন্দ্র ফড়নবিশ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের কয়েক ঘন্টা পরে এমনই জানা যাচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন বিধায়কের বিজেপির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হয়েছে। সূত্রের দাবি এমনটাই। মহারাষ্ট্রে একমাস ধরে চলে আসা রাজনৈতিক টানাপোড়েনের এইভাবেই নাটকীয় পরিসমাপ্তি ঘটল।
দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বলেন, মহারাষ্ট্রে স্থায়ী সরকার জরুরি ছিল। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ এবং জেপি নাড্ডাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ফের সুযোগ জানানোর জন্য।
দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বলেছেন, অজিত পাওয়ার বিজেপিকে সমর্থন করেছেন। পাশাপাশি বেশ কয়েকজন নির্দল বিধায়কও বিজেপিকে সমর্থন করেছেন। এরপরেই বিজেপি সরকার গঠনের দাবি
জানায়।
এর মধ্যে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তুলনা করা হল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। আজ মহারাষ্ট্রে বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পরেই এর কৃতিত্ব অমিত শাহকে দেন অনেক বিজেপি নেতা। সেই রেশ টেনেই আজ বিজেপির মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া অমিত শাহর ছবি পোস্ট করেন। ক্যাপশনে অমিতাভ অভিনীত বিখ্যাত মুভি শাহেনশাহর সংলাপের অনুকরণে লেখেন, "রিস্তে মে তো হাম তুমহারে বাপ লগতে হ্যায়, নাম হ্যায় অমিত শাহ।"
ওদিকে মহারাষ্ট্রে নাটকীয় পট পরিবর্তনের পরই তোলপাড় শুরু হয় মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে। এই ঘটনার পর কংগ্রেসের কার্যকরী সমিতি ভেঙে দেওয়ার দাবি তুললেন প্রাক্তন মুম্বই কংগ্রেস প্রধান সঞ্জয় নিরুপম। পাশাপাশি রাহুল গান্ধীকে ফের একবার দলের রাশ ধরার আবেদন জানালেন সঞ্জয়।
অজিত পাওয়ারের বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গঠনের বিষয়টিতে কংগ্রেসের সম্মানহানী হয়েছে বলে দাবি করেন সঞ্জয় নিরুপম। তিনি অভিযোগ করেন, কংগ্রেস পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা হাসিলের চেষ্টা করছিল। পাশাপাশি কংগ্রেসের কার্যকরী সমিতির দিকে প্রশ্ন চিহ্ন তুলে তিনি বলেন, "সনিয়া গান্ধীকে কী উপদেশ দিয়েছিল কার্যকরী সমিতি? আমি সনিয়া গান্ধীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি যাতে এই কার্যকরী সমিতিকে ভেঙে দেওয়া হয়। সমিতিতে থাকা আর কাউকেই এখন ভরসা করা যায় না। পাশাপাশি দলের স্বার্থের কথা ভেবে রাহুল গান্ধীর উচিত দলের রাশ নিজের হাতে তুলে নেওয়া। এই মুহূর্তে একমাত্র তিনি পারেন দলের নৈতিকতা বজায় রেখে দলকে পরিচালনা করতে। কংগ্রেস পিছনের দরজা দিয়ে ঢোকা দল না।"
তিনি কার্যকরী সমিতির সদস্য আহমেদ প্যাটেল ও কে সি বেণুগোপাল ছাড়াও মল্লিকার্জুন খার্গের সমালোচনা করেন। সঞ্জয় বলেন, "আহমেদ প্যাটেল ও কেসি বেণুগোপাল ‍মূলতঃ দিল্লির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। যদিও মল্লিকার্জুন খার্গে মহারাষ্ট্রের রাজনীতির সঙ্গেই জড়িত। তিনি কী করে হাইকমান্ডকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেন?" পাশাপাশি শরদ পাওয়ারের সমালোচনাতেও মুখর হন তিনি। রাহুল গান্ধীকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, "রাহুল গান্ধী একবার বলেছিলেন যে 'পাওয়ার' (ক্ষমতা) বিষাক্ত। সত্যি বলতে, 'পাওয়ারও' (শরদ পাওয়ার) বিষাক্ত।"
প্রসঙ্গত, এর আগেও শিবসেনার সঙ্গে জোট গড়া নিয়ে দলকে সতর্ক করেছিলেন মহারাষ্ট্রের এই কংগ্রেস নেতা। এই বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি মনে করিয়ে দিতে বুধবার টুইট করেছিলেন তিনি। টুইট বার্তায় তিনি লেখেন, কয়েক বছর আগে উত্তরপ্রদেশে বিএসপি-র সঙ্গে জোট গঠন করে দল ভুল করেছিল। সেই সময় থেকে উত্তরপ্রদেশে দল এত বাজে ভাবে হেরেছে, সেখানে এমন ভাবে মেরুদণ্ড ভেঙেছে যে এখনও সেখানে কংগ্রেস উঠে দাঁড়াতে পারেনি। শিবসেনার সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমরা মহারাষ্ট্রেও একই ভুল করছি। শিবসেনার সরকারে তৃতীয় হয়ে থাকা কংগ্রেসকে কবর দেওয়ার সমান। কংগ্রেসের জন্য এটাই মঙ্গলের যে তারা যাতে কোনও করম চাপে এসে শিবসেনার সঙ্গে হাত না মেলায়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.