দশভূজা নয়, উমার এখানে অন্য রূপ, হাতে নেই কোনও অস্ত্র, মর্ত্যে আসেন শিবের কোলে চেপে
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় : উত্তরের বনেদি বাড়ির এই পুজোয় মা একা আসেন না, উমার সঙ্গে মর্ত্যে আসেন ভোলানাথ। সেই সঙ্গে এই বনেদি বাড়ির পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য এখানে মায়ের শান্তরূপ। হাতে নেই কোনও অস্ত্রসস্ত্র।
বিডন স্ট্রিটের হেদুয়া মোড় থেকে ছোট স্কটিশ চার্চ স্কুলের দিকে হাঁটা লাগালে মিনিট দশেকের পথ। মুকুল বীথি স্কুলের ঠিক পাশের বাড়িতে এসে পৌঁছলেই মনটা জুড়িয়ে যেতে বাধ্য। বনেদিয়ানা আর উত্তর কলকাতার পুরনো বাড়ির অনুভূতি। রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে পেল্লাই সাইজের ভোলানাথ ধাম, দত্ত বাড়ি।
এ বছর এই বাড়ির পুজো পা দিল ১১৫ তম বর্ষে। বাড়ির ভিতর ঢুকলে মুহূর্তেই মনে হবে, পৌঁছে গিয়েছেন অন্য জগতে। বড় বড় থাম, তার পিছনে সুন্দর এক ঠাকুর দালান। সেই ঠাকুর দালানেই উমার আরাধনা। ১৯০৫ সালে এই পুজো শুরু হয়। এই পরিবারে উমার আগমনের শুরুটা অবশ্য কলকাতায় নয়। ১৯০৫ সালে বারাণসীর বাড়িতে পুজো শুরু করেছিলেন ব্যবসায়ী ভোলানাথ দত্ত। কলকাতা থেকে প্রতিবার বারাণসীতে গিয়ে পুজো করা কঠিন হয়ে পড়াতে কয়েক বছর পর কলকাতার বাড়িতে এই পুজো শুরু হয়।
এরপর কলকাতাতে দত্ত পরিবারের আদি বাড়ি শোভাবাজারের গোলক দত্ত লেনে পুজো শুরু হয়। ১৯২৫ সালে ভোলানাথ দত্তের মেজ ছেলে ব্রিডন স্ট্রিট অঞ্চলে বাড়ি কেনেন। পরে পরিবার এই বাড়িতে উঠে আসে। ১৯২৫ সাল থেকে এরপর এই বাড়ির ঠাকুর দালানেই দুর্গাপুজো হয়ে আসছে।
অন্য বাড়ির পুজোয় দুর্গার দশভূজা রূপ দেখা গেলেও এই পরিবারের পুজোয় দ্বি-ভূজা উমা আসেন শিবের কোলে চেপে। এখানে উমার শান্ত রূপ। হাতে নেই কোনও অস্ত্র। এখানে মা দুর্গা যেন সপরিবারে বাপের বাড়ি বেড়াতে এসেছেন। মহাদেবকে এখানে জামাইরূপে পুজো করা হয়।
এ বাড়িতে উমাকে অন্নভোগ দেওয়া হয় না। এখানে মিষ্টি-ফল ভোগ দেওয়া হয়। রাতের ভোগে পাঁচরকম ভাজা ও মিষ্টি দেওয়া হয়। পুজোর দিনগুলোয় ধুনো পোড়ানো হয়। এবাড়িতে কুমারী ও সধবা দুই পুজোই হয়। এ বাড়ির পুজোর নিরঞ্জনে রয়েছে বিশেষ নিয়ম। এবাড়িতে সূর্যাস্তের পর উমার প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। অর্থাৎ প্রতিমা সূর্যাস্তের পর বাড়ি থেকে বেরোবে।
কোন মন্তব্য নেই