Header Ads

দুর্গাপুজো : মুখ্য হোক ফল বলি, গৌণ হোক পশু বলি !

ছবি- প্রতিমা বেলুড় মঠের।
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় : পিতৃপক্ষের অবসানে, দেবীপক্ষে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো’র আজ মহাষ্টমী। বাঙালি মতে, ঘরের মেয়ে উমা এসেছেন। তাই, উমার আগমনে শহর থেকে শহরতলি সর্বত্রই সাজো সাজো রব। এই উৎসব আমার আপনার সকলের। কিন্তু, এই আনন্দ উৎসবের মাঝেই ধর্মের নামে পশু বলির মত নারকীয় প্রথা কোথাও কোথাও আজও বিদ্যমান। বারোয়ারি হোক কিংবা ঘরোয়া পুজো, প্রাচীন রীতি মেনেই আজও এই পশু বলি প্রথা বিভিন্ন ক্ষেত্রেই হয়ে আসছে।
সালটা ২০১৯। প্রযুক্তিগত উন্নতির সঙ্গে সঙ্গেই সর্বক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন। যাকে বলে, অত্যাধুনিক যুগ। তেমনি বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোরও ঘটেছে সার্বিক পরিবর্তন। প্রতিমা থেকে প্যান্ডেল, সবেতেই আধুনিকতা ও নতুনত্বের ছোঁয়া। 
কিন্তু, এর মাঝেই মানুষের মন কোথাও পড়ে রয়েছে সংস্কারে ও ধর্মের প্রাচীন প্রথার মধ্যে। ধর্মের সংস্কার থেকে বেরোতে কোথাও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে মানুষের মন। অনেক জায়গাতেই মা দুর্গার নাম করে পুজোর নামে চলে পশুবলি। একের পর এক জায়গায় ধর্মীয় নিয়ম বলে দূর্গা মায়ের সামনে হয় মোষ, ভেড়া থেকে ছাগ বলি। বিশ্বাস কর হয় যে, এই বলি দিলে নাকি সন্তুষ্ট হন উমা ! তবে, উল্লেখ্য পশু হত্যার বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ফলে বর্তমানে অনেকাংশেই কমেছে এই পশু বলি প্রথা। পরিবর্তে এসেছে ফল বলি দেওয়ার রীতি রেওয়াজ। 
কথায় আছে "জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।" মানবতাই সবথেকে বড় ধর্ম। ধর্মেরও ঊর্ধ্বে মানবতা। তাই আমরা চাই ধর্মের নামে পশুবলি প্রথা পুরোপুরি বিনাশ হোক। তবে স্বস্তির কথা হল, দু-দশক আগে যেভাবে দুর্গা পুজোয় চলত এই পশু বলি, তা আজ সত্যিই প্রায় মুছে গেছে। কলকাতার বহু বনেদি বাড়ির দুর্গা পুজোয় বলি হত। বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানোত রক্ষার জন্য মা দুর্গার কাছে ছাগ বলি চলত। যা এখন বিলুপ্তপ্রায় শহরের বনেদি বাড়ির পুজো থেকে। তবে, গ্রামাঞ্চলে কিন্তু কোথাও কোথাও এই রীতি-রেওয়াজ আজও চালু রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন একটাই--আদতেই কি মা দুর্গা এই বলির মাধ্যমে পূজার্চনায় সন্তুষ্ট হন? 
পৌরাণিক মতে দেবী দুর্গার এই রীতিতে অভিমত ছিল--মমোদ্দেশে পশূন্ হত্যা সরত্তং পাত্রমুৎ সৃজেৎ। যে মূঢ়ঃ স তু পূয়োদে বসেদ্যাদিন সংশয়ঃ।। অর্থাৎ, "যে মূর্খরা আমার পূজার নাম করে, আমার পুজার দোহাই দিয়ে জীব হত্যা করে তাদের এই কদর্য আচরণে ধিক্কার জানাই।" অতএব, প্রাচীন পুঁথি অনুযায়ী দেবী দুর্গা অসন্তুষ্ট এই প্রথায়। মা কখনোই তার সন্তানদের রক্তে তৃপ্ত হতে চান না। তবে কেন এই বলি প্রথা? শুধুই কি ধর্মের গোঁড়ামি নাকি অন্য কিছু? যার উত্তর আজও অজানা। 
তবে এই প্রথাকে সম্পূর্ণরূপে বিনাশ করতে এগিয়ে যওেয়াই সুস্থ চেতনা ও প্রগতি’র নির্দেশ। মা দুর্গাকে সামনে রেখে পশু হত্যার মতো নৃশংস কাজকে হাতিয়ার না করে এই প্রথার প্রতিরোধে চলুক লড়াই। বন্ধ করা উচিত ধর্মের নামে উৎসবের সময় পশু বলি দেওয়া। পুজোর প্যান্ডেল থেকে মূর্তির আদব-কায়দায় ফুটে উঠুক এই প্রতিবাদের ভাষা। 'বন্ধ হোক পশুবলি '। বেলুড় মঠের পুজোয় কিন্তু বহু আগেই স্বামী বিবেকানন্দ পশুবলি প্রথা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.