Header Ads

গুয়াহাটির ব্ৰাহ্ম সমাজ মন্দির আয়োজিত রবীন্দ্ৰ সন্ধ্যা সকলকেই আনন্দের সঙ্গে বেঁচে থাকার রসদ জুগিয়ে দিল




রিংকি মজুমদার 
লোকসভা ভোটকে ঘিরে যে সময় অসমের চারদিকে এক অস্থির পরিবেশ বিরাজ করছে। এনআরসি নিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পগুলি থেকে কয়দিন বাদে বাদেই ডি ভোটার তকমা দিয়ে বাঙালির মত্যুর খবর আসছে। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলোকে পেটের এবং পরিবার প্ৰতিপালনের চিন্তা ছাড়াও তারা দেশের নাগরিক কিনা তা প্ৰমাণের বাড়তি চিন্তাও করতে হচ্ছে। ঠিক সেসময়ই অসমে এক চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিবেশে রবিবার সন্ধ্যায় আমাদের একটি স্নিগ্ধ রবির সন্ধ্যা উপহার দিল গুয়াহাটির ব্ৰাহ্ম সমাজ মন্দির। ঐতিহ্যমণ্ডিত ব্ৰাহ্ম সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত কবি প্ৰণাম অনুষ্ঠানে এদিন অসমিয়া, বাংলা, বিষ্ণুপ্ৰিয়া মনিপুরী, বোড়ো, ইংরেজি, হিন্দি সমেত মোট ছ’টি ভাষায় রবীন্দ্ৰনাথের কবিতা আবৃত্তি করেন শিল্পীরা। তার আগে একটি সমবেত সংগীত দিয়ে শুরু হয় এদিনের অনুষ্ঠান। হিংসা, বিদ্বেষ, চিন্তা সমস্ত কিছুকে পেছনে ফেলে গানে, আবৃত্তিতে মনোময় হয়ে ওঠে রবিবারের এই সন্ধ্যা। এদিন রবীন্দ্ৰনাথের ‘শিশু ভোলানাথ’ কাব্যগ্ৰন্থ থেকে অসমিয়া অনুবাদ কবিতা পাঠ করেন নবনিতা দাস, বিষ্ণুপ্ৰিয়া মনিপুরী ভাষায় ‘আবিৰ্ভাব’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন জয়রাজ সিন্‌হা, এরপর ‘‘Where the mind is without fear, and the head is held high;’’  ‘‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির..’’ রবীন্দ্ৰনাথের কবিতাটির ইংরেজি আবৃত্তি করেন শিল্পী পম্পা সরকার। ‘হে মোর দুৰ্ভাগা দেশ..’ বোড়ো ভাষায় অনুবাদ করা কবিতাটি আবৃত্তি করেন শিল্পী গৌতম দৈমারি। হিন্দিতে কবিতা আবৃত্তি করেন মালবিকা রায় মোধি দাস। ‘‘ঝড় বায়ু বায় বেগে....’’ গানটি সেতার বাজিয়ে আনন্দ দেন ব্ৰাহ্ম সমাজ মন্দিরের সম্পাদক কৃষ্ণাঞ্জন চন্দ। এদিনের সন্ধ্যায় কবি প্ৰণাম অনুষ্ঠানের মুখ্য আকৰ্ষণ ছিলেন শান্তিনিকেতনের সংগীত ভবনের অধ্যাপিকা তথা সংগীত শিল্পী মানিনি মুখোপাধ্যায়। অসমের গুয়াহাটিতে এসে ব্ৰাহ্ম সমাজের এই রকম একটি সাংস্কৃতিক পরিবেশ দেখতে পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই আনন্দ প্ৰকাশ করেন তিনি। ঋক বেদ থেকে শ্লোক দিয়ে শুরু করেন তাঁর পরিবেশন। এরপর রবীন্দ্ৰনাথের বেশ কয়েকটি পূজা পৰ্যায়ের গান একের পর এক গেয়ে তিনি দৰ্শকদের আনন্দ উপহার দিয়েছেন। হারমোনিয়ামে তাঁকে সহযোগিতা করেছেন শান্তিনিকেতনেরই শাস্ত্ৰীয় এবং রবীন্দ্ৰ সংগীত নিয়ে স্নাতকোত্তর করা প্ৰাক্তন ছাত্ৰ তথা তাঁর স্বামী ঋত্তিকাশিষ বিশ্বাস বাগচি। ‘কি গাব আমি কি শোনাব..’, ‘আজি যত তারা তব আকাশে..’ কিংবা ‘প্ৰাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে...’ গানগুলি আমাদের বহুবার শোনা। তবু এদিনের সন্ধ্যায় গানগুলি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে নতুন করে অনাবিল আনন্দ দিয়েছে। অনুষ্ঠানের শেষ পাতে আয়োজক মণ্ডলির মেয়েরা সমবেত সংগীত দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন। এদিনের অনুষ্ঠানে অসমিয়া সাহিত্যিক নিরুপমা বরগোঁহাঞি, সাহিত্যিক তোষপ্ৰভা কলিতা, এতদ অঞ্চলের প্ৰখ্যাত সংগীত শিল্পী পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় , অধ্যাপক তিমির দে, লেখিকা তথা সাংবাদিক সুপৰ্ণা লাহিড়ী বড়ুয়া সমেত আরও বহু ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি ছিল। প্ৰথম পৰ্বে অনুষ্ঠানটি শুরু করেছিলেন প্ৰবীণ অধ্যাপিকা মুক্তি দেব চৌধুরি পরে তিনি অনুষ্ঠানটি এগিয়ে নিয়ে যারওয়ার জন্য অৰ্থাৎ পরিচালনার ভার তুলে দেন এতদ অঞ্চলের প্ৰখ্যাত আবৃত্তিকার গৌতম ভট্টাচাৰ্যের ওপর। তিনি কবিগুরুর কবিতার ঝুলি থেকে একেকটি কবিতা দিয়ে অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে গেঁথে এদিনের কবি প্ৰণাম অনুষ্ঠানটিকে আরও সুন্দর এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেছেন। প্ৰতিদিনের কৰ্মব্যস্ততার জীবনে এদিনের রবীন্দ্ৰ সন্ধ্যা সকলকেই আনন্দের সঙ্গে বেঁচে থাকার রসদ জুগিয়ে দিল।   

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.