Header Ads

১০ টাকার সুরা খেয়ে চির নিদ্ৰায় শতাধিক, প্ৰতিঘণ্টায় বেড়েই চলেছে মৃত্যু মিছিল


গুয়াহাটিঃ অসমের একমাত্ৰ নিয়ন্ত্ৰণহীন বিভাগ আবগারি বিভাগ। এই বিভাগে লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্ৰে ব্যাপক দুৰ্নীতি চলে, কংগ্ৰেস-অগপ-বিজেপির মধ্যে কোনও তফাৎ নেই। আজও দুৰ্নীতির ট্যাডিশন সমানে চলছে। এই আবগারি বিভাগের একাংশ দুৰ্নীতিপরায়ণ কৰ্মচারি একাংশ পুলিশ, দালাল, একাংশ দুৰ্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ী গোপন আঁতাতের বলি হল শতাধিক গরিব চা শ্ৰমিক। বিষ মদ খেয়ে প্ৰাণ হারালেন। এই প্ৰতিবেদন লেখা পৰ্যন্ত যোরহাট মেডিকেল কলেজে ২৩০ জন চিকিৎসাধীন, মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জন। গোলাঘাট মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১২০ জন, মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের, তিতাবরে চিকিৎসাধীন ৮ জন, মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের, সব মিলেয়ে প্ৰায় ৩৫০ চিকিৎসাধীন, ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু মিছিল অব্যাহত। যোরহাটে শালমারা চা বাগানে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, সন্ধ্যা পৰ্যন্ত ২৬ টি চিতা এক সঙ্গে জ্বলছে। মরনোত্তর পরীক্ষার জন্য বাকি মৃত দেহ আনা হয়নি। মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল, অৰ্থমন্ত্ৰী হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা সহ অন্যান্য মন্ত্ৰী অফিসাররা হাসপাতালগুলিতে ভীড় জমিয়েছেন। মৃতের নিকট আত্মীয়দের ২ লক্ষ টাকা করে আৰ্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে সরকার। উচ্চ পৰ্যায়ের তদন্তের আদেশ দেওয়া হয়েছে। সহানুভুতির হাওয়া বইছে। কয়েক দিন বাদেই সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বরাবর এরকমই হচ্ছে। রাজ্যের  ৮০০ বেশি চা বাগানের শ্ৰমিকের দৈনন্দিন খাদ্যাভাসের অন্যতম খাদ্য নিজস্ব চাল সহ নিজস্ব উৎস থেকে তৈরি দেশি মদ যা কাণ্ট্ৰি লিকার বলে পরিচিত। সম্পূৰ্ণ অস্বাস্থ্যকরভাবে বিভিন্ন বিষাক্ত, দ্ৰব্যের মিশ্ৰণ ঘটিয়ে গরুতে খাওয়া সম্পূৰ্ণ অনুপযুক্ত গুড়কে কয়েক দিন মাটিতে পুঁতে রেখে তার সঙ্গে ফিটকিরি, নানা গাছের জড়ি-বুটি, বেটারীর জল, ইউরিয়া, বিভিন্ন নেশাযুক্ত টেবলেট, অ্যাসিড এমনকি হাওয়াই চপ্পলের রবারের টুকরো এবং অন্যান্য সামগ্ৰী মিশিয়ে সম্পূৰ্ণ অস্বাস্থ্যকরভাবে এই দেশি মদ তৈরি করা হয় বলে চা বাগানের বিভিন্ন সূত্ৰে জানা গেল। এই অস্বাস্থ্যকর বিষ মদ তৈরিতে কোনও সরকারি বাধা প্ৰদান করে না। নিৰ্বাচন এলে এই বিষ মদ খাইয়ে রাজনৈতিক নেতারা ভোট আদায় করে। সরকারি তথ্যে সরকারি পরিসংখ্যান বলেছে, রাজ্যে ৩৪১ টি দেশি মদের দোকান আছে। যে তিনটি জেলায় এই ভয়ানক মৃত্যুর ঘটনা ঘটল সেই গোলাঘাট জেলায় লাইসেন্স প্ৰাপ্ত ২৫ টি, যোরহাট জেলায় ২০ টি লাইসেন্স প্ৰাপ্ত দেশি মদের দোকান আছে। মাত্ৰ একটি উদাহরণ দিলেই মদের ভয়াবহতা ধরা পড়বে। মধ্যে অসমের লামডিং রেলওয়ে শহরের অধিকাংশ ছোট-খাট চা পান বিড়ির দোকানে দেশি এবং বিলাতি মদ খুচরো দরে বিক্ৰি হয় বলে বিভিন্ন সূত্ৰে জানা গেছে। ছোট্ট রেল শহরে ১২০০ থেকে ১৩০০ দোকান আছে। আবগারি বিভাগ এবং পুলিশের একাংশ প্ৰতিদিন ঐবেআইনি দোকান গুলি থেকে হাজার হাজার টাকা সংগ্ৰহ করে। প্ৰাক্তন আবগারি মন্ত্ৰী অজিত সিং লামডিংয়ের বেআইনি মদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্ৰহণ করে আবগারি বিভাগের দুৰ্নীতি পরায়ন কৰ্মচারিদের সরিয়ে দিয়েছিলেন। বৰ্তমানে বিজেপির শাসনে লামডিংয়ের মদ, গাজা, জুয়া খেলার সীমা নিয়ন্ত্ৰণের বাইরে চলে গেছে, বহুগুণ বেড়ে গেছে, অপরাধ জনিত ঘটনা বেড়েই চলেছে। বৰ্তমান আবগারি মন্ত্ৰী পরিমল শুক্লবৈদ্য বেআইনি মদ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সৎ সাহস নেই বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। রাজ্যে বিজেপি সরকারের আমলে দেশি এবং বিদেশি মদ থেকে রাজস্ব আদায় বহুগুণ বেড়ে গেছে। রাজ্যে মদমুক্ত স্বচ্ছ প্ৰশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে মহাত্মা গান্ধীর আদৰ্শে ‘মদ মুক্তি অসম দাবি কমিটি'র অস্তিত্ব কাগজে কলমে আছে। রাজ্যের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত শ্ৰেণীর মদ খাওয়ার প্ৰবণতা ভয়ানকভাবে বেড়ে যাওয়ার ফলে রাজ্যে আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি বিশেষ করে সড়ক দুৰ্ঘটনা বহুগুণ বেড়ে গেছে। আই বি এন এস-র এক প্ৰতিবেদন বলছে অসমে গড়ে প্ৰতিদিন ১.৭৫ লক্ষ বেয়ার এবং ২.৩৪ লক্ষ বিলাতি মদ প্ৰতিদিন লাইসেন্স প্ৰাপ্ত দোকান থেকে বিক্ৰি হয়। গত ৭ মাসে ৬.৪৪ লক্ষ মদ বিক্ৰি হয়েছে। ২০১৮-১৯ অৰ্থ বছরের ১ এপ্ৰিল থেকে ৩০ অক্টোবর পৰ্যন্ত ৩,৬৮,৭৬,৭০৮ লিটার মদ এবং 2,৭৫,৯১,৭০৫ লিটার বেয়ার বিক্ৰি হয়েছে। প্ৰতিমাসে গড়ে ৯২.০৯ লক্ষ মদ বিক্ৰি হয়। ২০১৫-১৬ সালে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১৫০০ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭অৰ্থ বছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৯০০কোটি টাকা। রাজস্ব বৃদ্ধি বেড়েই চলেছে। কোষাগার স্ফিত হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সড়ক দুৰ্ঘটানা বেড়েই চলেছে। মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.