Header Ads

স্বর্গীয় রাধাপদ দত্ত মহাশয়ের অন্তিমপ্রয়াণে

 

শ্রদ্ধাঞ্জলি ::

স্বর্গীয় রাধাপদ দত্ত মহাশয় আমার বর্তমান ফকির টিলা নিবাস নিকটস্থ সম্মানিক প্রতিবেশী সুঃপরামর্শদাতা, জ্ঞানী, কর্মতৎপর পরোপকারী দৃঢ়চেতা এবং বিরল ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। এ অঞ্চল জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের এক সুযোগ্য অভিভাবক হারিয়েছে। প্রয়াত দত্ত মহাশয় এ অঞ্চলের বঙ্গবাসীর সঙ্গে হিন্দিভাষী লোকদেরও প্রিয় এবং সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। কথা প্রসঙ্গে অনেকের কথা বলতেন। যার মধ্যে স্বর্গীয় কান্তা প্রসাদ কুর্মী অন্যতম। এ পশ্চাৎপদ সমাজের উন্নতি এবং সমাজের যুবক ও যুবতীদের সরকারী চাকরি প্রাপ্তির জন্য সাহায্য করেছেন। নিজ কর্তব্য সুষ্ঠু রূপে পরিচালনা করার সাথে অবসর সময়ে বনবাসী কল্যাণ আশ্রম এর কাজের সঙ্গেও সুদীর্ঘকাল জড়িত ছিলেন। এই কাজে উনি একসময় কাটলীছড়ার রামনাথপুর থেকে সুদীর্ঘ পথে পায়ে হেঁটে প্রত্যন্ত রাইফেলমারা ফরেস্ট ভিলেজ গিয়ে রাত যাপন করেছেন। এহেন সমাজকর্মী বর্তমানকালে দুর্লভ বলে মনে করি। কল্যাণ আশ্রম এর মাধ্যমে এই উপত্যকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের আদিবাসী ছেলে মেয়েদের শিক্ষালাভের সুযোগ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে উনার অবদান প্রশংসনীয়। আমার ৬৭ বছর কাল উনার সান্নিধ্য লাভের সুযোগে ব্যক্তিগতভাবে আমারও কিছু বৌদ্ধিক বিকাশ হয়েছে বলে অনুভব করি। ওনার সব বিষয়ে জ্ঞান অপরিসীম ছিল, যা হয়তো অনেকেরই অজ্ঞাত। দেশ ভাগ করে স্বাধীনতা প্রাপ্তি থেকে শুরু করে নানা প্রকারের ষড়যন্ত্রের ভিত্তির ওপর সিলেট জেলাকে তথাকথিত গণভোটের মাধ‍্যমে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করার তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা যেখানে ৯৭ শতাংশ  চাকমাদের আদি বাসস্থান ছিল, সেই জেলাকে অযৌক্তিকভাবে পাকিস্তানের দিকে ঠেলে দেয়ার মত ঘটনা তথা তদানীন্তন রাজ নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার অনেক তথ্যের কথা তাঁর কাছে জানতে পেরেছি - যার জন্য আমি চির কৃতজ্ঞ। প্রয়াত দত্ত মহাশয়ের সহধর্মীনি স্বর্গীয় অপর্ণা দত্ত ও ছিলেন গৃহলক্ষী রূপে বিরাজিতা , পতিব্রতা ও ধর্মপ্রাণ। তিনি  ৫০-৬০ বছর পূর্বে স্নাতক হয়েও কোন সরকারী চাকুরি করার আবদার করেননি - বরং গৃহবধূ হয়ে সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার অবদানের সঙ্গে জীবনের শেষ  মুহূর্ত পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে নিজের স্বামীর আদেশ সর্বোপরি রেখে স্বামী মহাপ্রাণ মহিলা হিসাবে অতিবাহিত করেছেন। সদা সর্বদা সদা সহাস্য বদন সকলের সাথে মেলামেশা করছেন। তাঁর মঙ্গলকামী মানসিকতা কেবল আমি নয় এই ফকির টিলার সকল স্তরের লোকের মনে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে মনে করি। অবশেষে, আমি স্বর্গীয় দত্ত মহাশয় এবং তাঁর ধর্মপত্নী উভয়ের আত্মার শান্তি প্রাপ্তি হেতু ভগবত চরণে কামনা করি আত্মার শ্রদ্ধা ও প্রণাম নিবেদন করছি।

 জহরলাল রায়, অবসরপ্রাপ্ত বিদ্যালয় সমূহের উপ-নির্দেশক, শিলচর, কাছাড় অসম

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.