Header Ads

শিলচরে কবি শ্রীজাতর সভায় রিয়া প্যালেসে ভাংচুর, উত্তেজনা

 মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খবর নিলেন
মৃণাল সরকার, করিমগঞ্জঃ একটি বেসরকারি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের আমন্ত্রণে শিলচর এসে দস্তুরমত অপদস্ত হতে হল কলকাতার খ্যতনামা কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি যে হোটেলে উঠেছিলেন সেই রিয়া প্যালেসে ভাংচুর চালালো কতিপয় হিন্দুত্ববাদী যুবক। হিন্দুদের আরাধ্য দেবতা মহাদেব শিবকে নিয়ে শ্রীজাত যে কবিতা লিখেছিলেন সেই কবিতার রেশ ধরেই এই আক্রমণ বলে ধারণা। উশৃঙ্খল যুবক দলের হামলা ও উত্তেজনার খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে ছুটে আসতে হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকেশ রেড্ডিকে। উত্তেজিত যুবকদের ছোড়া ঢিলে রিয়া প্যালেসের জানালার গ্লাস ভেঙেছে বলে জানা গেছে। প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, শিলচরের সাহিত্যপ্রেমী কজন যুবক মিলে ‘এসো বলি’ নামের এক সংস্থার জন্ম দেন। এই সংস্থার উদ্যোক্তা ছিলেন সব্যসাচী রুদ্রগুপ্ত। শান্তনু সূত্রধর, দেবস্মিতা বিশ্বাস, শিবন দাস প্রমুখ। তাদের আমন্ত্রণে শিলচর আসেন কবি শ্রীজাত। শনিবার সন্ধ্যে ৮ টায়  ছিল উদ্বোধন অনুষ্ঠান। যথারীতি শুরু হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান চলাকালীন সভাগৃহে প্রবেশ করতে আসেন বাসুদেব শর্মা, দ্বিপায়ন চক্রবর্তী, মিঠুন নাথ, সঞ্জয় সিনহা নামের কজন ব্যক্তি। তারা এসেই কবি শ্রীজাতর সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কথা শুরু হয় ঠিকঠাক কিন্তু তারা হটাৎ ভগবান শিব নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কবিতা কেন লিখেছেন বলে শ্রীজাতকে কৈফিয়ত তলব করে বসেন। এতে সভা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যুবকরা কবিকে অপদস্ত করছে দেখে জনৈক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য তাদেরকে সভাস্থল থেকে বের হয়ে যেতে নির্দেশ দেন। প্রবীণ সাংবাদিক অরিজিত আদিত্য বলেন- এই শহরে কবির অপমান উচিত নয়। শ্রীজাতকে হেনস্থা করা হলে কলকাতায় এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তিনি উত্তেজনা শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এদিকে সুপ্রিয়বাবুর হুমকিতে ঘটে বিপত্তি। তারা রিয়া প্যালেসের বাইরে এসেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ঠিক এসময় আরও কিছু যুবক জমায়েত হয় রিয়া প্যালেসের সামনে। উত্তেজনার পারদ বাড়তে থাকে এবং একসময় শুরু হয় হোটেল লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকেশ রেড্ডি ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তিনি উত্তেজিত যুবকদের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন কিন্তু তাদের একটাই দাবি। হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত দেয়ার জন্য শ্রীজাতকে ক্ষমা চাইতে হবে। কিন্তু শ্রীজাত ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করেন বলে জানা গেছে। বাধ্য হয়ে পুলিশ একটু বল প্রয়োগ করে উশৃঙ্খল যুবকদের ছত্রভঙ্গ করে। এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে বুদ্ধিজীবী ও সাহিত্য মহলে তবে আরেকটা অংশ শ্রীজাতর সমালোচনা করছে। রবিবার সকালে পুলিশি নিরাপত্তায় শ্রীজাত শিলচর থেকে কলকাতা অভিমুখে রওয়ানা দেন তবে সকালের দিকে বিজেপি সমর্থিত কিছু লোক শিলচর আবর্ত ভবন ঘেরাও করার চেষ্টা করে যদিও পুলিশের বাধায় তা হয়ে ওঠেনি। সংবাদ মাধ্যমে খবর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্ৰী মমতা গতকাল রাতে শিলচরে ফোন করে খবর নিয়ে কবির নিরাপত্তার ব্যবস্থার খবর নেন এবং ঘটনার ধিক্কার জানান। রবিবার কলকাতায় শ্ৰীজাত কলকাতায় পৌঁছলে পুলিশি নিরাপত্তায় তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। তিনি সেখানে সাংবাদিকদের বলেন- অসমের পরিস্থিতি ভয়াবহ। চারপাশে অসহিষ্ণ আবহ। পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি অনেক ভাল বলে দাবি করেন। তিনি বলেন গোটা দেশের নৈরাজ্যের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মুক্ত চিন্তার কোনও অবকাশ নেই। বিশিষ্ট কবি শঙ্খ ঘোষ সাহিত্যিক শীৰ্ষেন্দু মখোপাধ্যায়, সুবোধ সরকার, জয় গোস্বামী প্ৰমুখ কবিরা অসমের এই ঘটনায় তীব্ৰ সমালোচনা করেছেন। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.