Header Ads

নাগরিকত্ব বিল, এন আর সিকে ঘিরে অসমে সৰ্বনাশের খেলা, বাঙালিরা আজ ‘গণশত্ৰু'


গুয়াহাটিঃ অসমে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে কেন্দ্ৰ করে রাজ্যে বিজেপি সরকার বিরোধী হাওয়া চরমে উঠেছে। বিজেপি সরকার কোনও ভাবেই বিলটি সম্পৰ্কে রাজ্যবাসীকে বোঝাতে পারছে না। পরিস্থিতি ক্ৰমশ অগ্নিগৰ্ভ হচ্ছে। সাম্প্ৰদায়িক সম্প্ৰীতির অবনতি ঘটছে দ্ৰুত। অপরদিকে আগামী লোকসভা নিৰ্বাচনের আগে-পরে ৩১জুলাই এন আর সির চূড়ান্ত তালিকা প্ৰকাশ পাবে। এই পৰ্যন্ত এন আর সি থেকে বাদ পরা ৪০ লক্ষ ৭ হাজার ৭০৭ জনের মধ্যে ৩৬ লক্ষ ২ হাজার মানুষ নাম তোলার জন্য আবেদন করেছেন। আপত্তি জানানোর সংখ্যা হলো প্ৰায় ২ লক্ষ। পুনরাবেদন না করা লোকের সংখ্য ৩ লক্ষ  ৮ হাজার। যাদের নাম উঠবে না তাদের কি রাষ্ট্ৰহীন নাগরিক হিসাবে ঘোষণা করা হবে? তাদের ভাগ্যে কি ঘটবে? বাঙালি উদ্বাস্তুদের অন্য রাজ্যে গেলে আৰ্থিক সাহায্য দানের কথাও বলা হচ্ছে, সব কিছুর মধ্যে ঘোর অনিশ্চিয়তা, নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে বাঙালিরা। রাজ্যের দোৰ্দন্ত প্ৰতাপ মন্ত্ৰী হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মাও সৰ্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সুরে  সুর মিলিয়ে দিল্লীতে বলেছেন, এন আর সি ছুট ৪০ লক্ষ লোকই ‘ঘুষপেটীয়া' বা অনুপ্ৰবেশকারী।পশ্চিম বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে বাঙালি হিন্দুদের ভোটের লক্ষ্যে বিজেপি অসমের সৰ্বনাশ ডেকে আনছে। এন আর সি, সংশোধনী বিল এবং ৬ জনগোষ্ঠীকে তপশিলভুক্তকরণ কোনও ক্ষেত্ৰেই কেন্দ্ৰের বিজেপি সরকারের নিৰ্দিষ্ট কোনও স্পষ্ট নীতি আছে বলে মনে হয় না। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল কি নিৰ্বাচনী ময়দানে বিজেপির জন্য শেষমেশ বুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে? দু'নৌকোয় পা দেওয়ায় নিৰ্বাচনী দরিয়ায় শেষমেশ ডুবতে হচ্ছে নরেন্দ্ৰ মোদির দলকে? শুধু অসম নয়, সমগ্ৰ উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলে বহুচৰ্চিত ও বহু বিতৰ্কিত এই বিল নিয়ে যেভাবে বিজেপি-বিরোধী হাওয়া তীব্ৰতর হয়ে উঠেছে, তাতে এই প্ৰশ্ন সঙ্গত কারণেই উঠে আসে। দাক্ষিণাত্যের অভাব পুষিয়ে নিতে উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলের লোকসভা আসনগুলোকে পাখির চোখ করে উনিশের চিত্ৰনাট্য সাজিয়ে ছিলেন বিজেপি সেনাপতি অমিত শাহ। অসমে উত্তরপূৰ্বের মধ্যে প্ৰথম বিজেপি সরকার গঠিত হওয়ার পর উজ্জীবিত শাহ নেডা গঠন করেন। এখন বিলের ঘায়ে নেডার অস্তিত্বই প্ৰেশ্নর মুখে। এই দোদুল্যমান পরিস্থিতেতে বিজেপি সরকারের ঝুলি থেকে বিলের বিষয়ে যেসব ভবিষ্যৎ ইঙ্গিত বেড়িয়ে আসছে, তাতে এই দলের প্ৰধান ভোটব্যাংক বাঙালি হিন্দুর মোহভঙ্গ হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পরিস্থিতি এমন, বিজেপির শ্যামও রাখি কুলও রাখি কৌশল মাঠে মার খাওয়ার সমূহ কারণ ক্ৰমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল দলের অভ্যন্তরীণ বিদ্ৰোহ দমন করতে গিয়ে সম্প্ৰতি মোক্ষম কথাটি বলে ফেলেছেন। সনোয়াল বলেছেন, বিল পাশ হলেও নাগরিকত্ব অৰ্জন মোটেও সহজ হবে না, কারণ এরজন্য অন্তত তিনটি ধাপ পেরোতে হবে। বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষদের অসমের ডেপুটি কমিশনারদের কাছে বাংলদেশে নিৰ্যাতিত হওয়ার নথিপত্ৰ দাখিল করতে হবে, তার পর স্বরাষ্ট্ৰকমন্ত্ৰক বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ঠিকানা ছিল কিনা তদন্ত করে দেখবে। তার পরেই প্ৰশ্ন উঠবে নাগরিকত্ব প্ৰদানের যা দীৰ্ঘ প্ৰক্ৰিয়া। কেন্দ্ৰীয় স্বরাষ্ট্ৰমন্ত্ৰকের এক অফিসারের বয়ান থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে প্ৰতিবেশী রাজ্য থেকে যেসব অমুসলিম নাগরিক ভারতে এসে দীৰ্ঘম্যায়াদি ভিসার আবেদন করেছেন, বিল পাশ হলে একমাত্ৰ তাঁদের নাগরিকত্ব অৰ্জনের পথ সুগম হবে। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে– এই সময়সীমা বাংলাদেশ থেকে মাত্ৰ ১১৭ জন হিন্দু উদ্বাস্তু এলটিভি-র জন্য আবেদন করেছেন। অৰ্থাৎ গোটা অসম জ্বালিয়ে দেওয়া এই বিল পাশ হলেও ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন মাত্ৰ ১১৭ জন বাঙালি হিন্দু। বরং এই বিলের দৌলতে উপকৃত হবেন পাকিস্তান থেকে আগত ৩৫ হাজার অমুসলিম উদ্বাস্তু। প্ৰশ্ন হচ্ছে, সংশোধনী বিলের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে বলে যে ধারণা, তা বিজেপি কেন সৃষ্টি করল? শুধুই ভোটের তাগিদে? এটা ঘটনা, দেশভাগের শিকার বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তুদের যথাৰ্থ পুনৰ্বাসনের কোনও সংস্থান পূৰ্বতন কংগ্ৰেস সরকারগুলো গত সত্তর বছরেও করে উঠতে পারেনি, বা বলা ভাল করতে চায়নি। বিজেপি সরকার অন্তত একটি পদক্ষেপ নিয়েছেল। কিন্তু এখন এই পদক্ষেপের অভিসন্ধি নিয়েই তো প্ৰশ্ন উঠে যাচ্ছে। মোদি সরকার কি যাবতীয় আইনী খুঁটিনাটি বিচার না করেই এ ধরণের একটি বিল উত্থাপন করেছিল? যদি আইনী বিষয়গুলি আগাম বিশ্লেষণ করেই বিলটি আনা হয়, তা হলে কেন এই সরকারেরই বিভিন্ন মন্ত্ৰক জেপিসিতে দাখিল করা প্ৰতিবেদনে বিল বাস্তবায়নে নানা প্ৰতিবন্ধকতার প্ৰসঙ্গ তুলল? নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ও অসম চুক্তির ৬ নম্বর দফা স্পষ্টতই পরস্পরবিরোধী। বিস্ময়ের বিষয়, বিজেপি সরকার রাজ্যের দুই প্ৰধান সম্প্ৰদায়কে এই দু'টি পরস্পরবিরোধী বিষয় দিয়ে আকৃষ্ট করতে চাইছে। কিন্তু জোড়াতালি দিয়ে আইন প্ৰণয়ন করা যায় না, হয়তো সাময়িক লাভের রাজনীতি করা যায়। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে– অস্পষ্ট এই বিলের জেরে গোটা উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলে কাৰ্যত ‘গণশত্ৰু'-তে পরিণত হয়েছেন বাঙালি হিন্দুরা। ধলা হত্যাকাণ্ড দেখিয়ে দিয়েছে, এ রাজ্যেও বাঙালিরা ফের আশির দশকের মত অসুরক্ষিত। এই বিল যদি উদ্বাস্তু বাঙালি হিন্দুকে নাগরিকত্ব দিতে না-ই পারে তা হলে বিজেপি সরকার তা কেন উত্থাপন করল? সরকারকে এই বিষয়টি অবিলম্বে স্পষ্ট করতে হবে। অন্যথায় এই বিল প্ৰত্যাহার করে নেওয়া হোক। সৰ্বনাশের খেলায় বিজেপি মেতেছে। বাঙালিদের ভোটের লক্ষ্যে অসম তথা উত্তর পূৰ্বাঞ্চলকে এক অনিশ্চিত অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হল।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.