Header Ads

পৌষ পাৰ্বনঃ কিছু স্মৃতি, কিছু অনুভূতি

রিংকি মজুমদার
বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বন। পৌষ পাৰ্বন বাঙালির এক বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলা পঞ্জিকা বর্ষ অনুযায়ী পৌষ মাসের শেষ দিনে পৌষ সংক্রান্তি পালিত হয়। আর পৌষ-পার্বন মানেই এক সময় বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠেপুলি খাদ্য উৎসব। একটা সময় বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠে পুলি, পায়েস, মালপোয়া, গোকুল পিঠে আরও কত রকমের যে পিঠে তৈরি করা হত, বাঙালির ঘরে ঘরে খাদ্য উৎসবের ধুম পড়তো। সেই পরিবেশ এখন নেই। বৰ্তমানে চরম ব্যস্ততার জীবনে রাত জেগে বসে বসে পিঠে তৈরি করার জন্য কারও হাতে সময় নেই। আজ থেকে বছর ২০ আগেও মানুষের হাতে সময় ছিল। কিন্তু এখন সময় পরিবৰ্তন হচ্ছে। সবাই ব্যস্ত। ডিজিট্যাল যুগ। মোবাইলে হোয়াটস অ্যাপে সবাই সবাইকে বিহু, পৌষ পাৰ্বন-মকর সংক্ৰান্তির শুভেচ্ছা দিচ্ছেন। হোয়াটস অ্যাপেই মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন। বৰ্তমানে সমস্ত কিছুই ব্যবসায়িক রূপ নিয়েছে। বাড়িতে পিঠে তৈরি করার সময় নেই কারও হাতে। তাই অসম তথা পশ্চিবঙ্গের বাজারে আয়োজন হচ্ছে ‘প্ৰি ভোগালি মেলা’, ‘পৌষ সংক্ৰান্তির খাদ্য উৎসব’ যেখানে রাজ্যের বিভিন্ন গ্ৰাম গঞ্জ থেকে আত্মসহায়ক গোষ্ঠীর মহিলারা মেলায় বসে চোখের সামনেই পিঠে পুলি  তৈরি করে দিচ্ছেন। আর খাদ্য রসিকরা অৰ্থের বিনিময়ে সেগুলি চেখে দেখছেন। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ব্যবস্থাটি ভাল কথা। গ্ৰাম গঞ্জের মহিলারা পিঠে তৈরি করে আৰ্থিকভাবে সবল হচ্ছেন। অসম, পশ্চিমবঙ্গের সরকারও তাদেরকে খাদ্য উৎসবের মতো একটি মঞ্চ তৈরি করে দিতে সাহায্য করছে। ভাল কথা, আমাদের সমাজের উন্নতি হচ্ছে। তবুও কেন জানিনা মাঝে মধ্যে মন খারাপ করে চোখের কোণে জল চলে আসে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এই পল্লী গানটি একেবারে সাৰ্থক - ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা’।  আজ আর সেই দিনও নেই, সেই মানুষগুলিও নেই। ঠাকুরমা, দিদিমা, নিজের মা কাছের মানুষগুলো সকলেই এক এক করে চলে গেলেও জীবন তবুও থেমে থাকে নি। জীবনের প্ৰত্যেকটি উৎসব পাৰ্বনে ছোলটবেলার কথা ভীষণভাবে মনে পরে। নিজের অজান্তেই চলে যাই ছেলাবেলার সুখের সেই দিনগুলিতে। আজও মনে আছে পৌষ পাৰ্বন এলেই বাবা পাটিসাপ্টা তৈরির জন্য নারকোল, গোবিন্দ ভোগ চাল, রসবড়া তৈরির জন্য দিন কয়েক আগেই বাজার থেকে মাষকলাইয়ের ডাল নিয়ে আসতেন। খেজুরের গুড় নিয়ে আসতেন পায়েস তৈরির জন্য। দুদিন আগে থেকেই বাড়িতে শুরু হয়ে যেত পিঠে পুলি তৈরির কাজ। খাওয়া দাওয়ার পর মা বসে বসে পাটিসাপ্পা তৈরি করে থালায় এক, দুই, তিন করে সাজাতেন। পিঠে তৈরির রাতে আমাদের আর ভাত খাওয়া হত না। ওই পিঠে খেয়েই আমাদের পেট টইটম্বুর হয়ে থাকতো। মা বলতেন আর খাস না পেট খারাপ করবে। তখন কে কার কথা শোনে? আজও মনে পরে সেই দিনগুলোর কথা। একবার আমার ঠাকুরমা আমাদের সব কাকাতো, জ্যাঠতুতো ভাই বোনেদের সেদ্দ পুলি তৈরি করে খাইয়েছিলেন। ঠাকুরমার সেই আদর এজীবনে আর পাবো না। আজ আর সেই দিনগুলি নেই। দিনগুলো সময়গুলো স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে মনের স্মৃতিকোণে। তুবুও জীবন থেমে থাকেনি, জীবন চলছে। আজ আমাদের চারপাশে চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। নিজের ভাষা সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে সবাই লড়াই করছে। মনে মনে শুধু প্ৰশ্ন হয় আমাদের কি উন্নতি হচ্ছে ? না, অবক্ষয়? কোথায় যাচ্ছি আমরা? মোবাইল, ইন্টারনেটের জগতে জীবন অ্যাতো সহজ হয়েছে ঠিকই কিন্তু আমরা হারিয়েছি ছেলেবেলার সেই সহজ সরল পরিবেশ। হারিয়েছি সেই আন্তরিকতা।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.