Header Ads

বিরোধীদের হুলুস্থুলুতে বিধানসভায় রাজ্যপাল ভাষণ শেষ করতে পারলেন না


অমল গুপ্তঃ গুয়াহাটি,
অসম বিধানসভার ১৪তম বাজেট অধিবেশনের প্ৰথম দিন বিরোধীদের হুলুস্থুলুতে রাজ্যপাল জগদীশ মুখী মাত্ৰ তিন মিনিট ভাষণ পাঠ করেই শেষ করলেন। রাজ্যপাল ৬০ পৃষ্ঠার ভাষণ বিধানসভায় দাখিল করেছেন বলে অধ্যক্ষ হিতেন্দ্ৰানাথ গোস্বামী ঘোষণা করে চা বিরতির জন্য বিধানসভা আধঘন্টা মুলতুবি করে দেন। সভার সূচনাতে রাজ্যপাল ভারত সরকার সঙ্গীতজ্ঞ ভূপেন হাজারিকাকে ভারতরত্ন দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্ৰকাশ করে তাঁর পরিচিতি তুলে ধরার পর, ২০১৯এর বাজেট বক্তৃতা শুরু করার মূহূৰ্তে বিরোধী অগপ দলের সদ্য প্ৰাক্তন মন্ত্ৰী অতুল বরা নাগরিকত্ব বিলের প্ৰতিবাদ করেন এবং তাঁকে সমৰ্থন করে  ইউডিএফ, কংগ্ৰেস সহ সকল বিরোধী দলের সদস্য হাতে হাতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বিরোধী শ্লোগান লেখা প্লেকাৰ্ড নিয়ে ওয়েল-এর কাছে ছুটে যান। প্ৰচণ্ড হৈ হুল্লুড়, হতচকিত হয়ে রাজ্যপাল ভাষণের শেষ দুলাইন  পাঠ করেই  ভাষণ শেষ করে দেন। প্ৰাক্তণ মুখ্যমন্ত্ৰী তরুণ গগৈ, প্ৰাক্তন মুখ্যমন্ত্ৰী প্ৰফুল্ল কুমার মহন্ত, বিরোধী দলপতি দেবব্ৰত শইকিয়া, অগপ'র সদ্য প্ৰাক্তন মন্ত্ৰী কেশব মহন্ত, এআই ইউডিএফ-এর আমিনুল ইসলাম, মামুন ইমদাদুল হক চৌধুরী, কংগ্ৰেসের রূপজ্যোতি কুৰ্মি, রকিবুল হোসেন প্ৰমুখ তিন বিরোধী দলের সদস্যরা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্ৰতিবাদে বিধানসভায় গৰ্জন করে ওঠে। চা বিরতি চক্ৰে রাজ্যপাল জগদীশ মুখীর সম্মানে চা আপ্যায়ন পৰ্বের আয়োজন বৰ্জন করে বিরোধী দলগুলি। এবার বিধানসভার সেণ্ট্ৰাল হলের পরিবৰ্তে বিধানসভা প্ৰাঙ্গণে বৰ্ণময় মণ্ডপের মধ্যে রাজ্যপাল জগদীশ মুখী, মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল এবং মন্ত্ৰীসভার সদস্যরা চা আপ্যায়ন পৰ্বে অংশগ্ৰহণ করেন। ব্ৰাত্য থেকে যায় সংবাদ মাধ্যম। তাদের জন্য বিধানসভার সেণ্ট্ৰাল হলে পৃথকভাবে চা চক্ৰের আয়োজন করা হয়েছিলো। সেখানে অসম বিধানসভার প্ৰধান সচিব মৃগেন্দ্ৰ কুমার ডেকা সহ আমন্ত্ৰিত সব সাংবাদিকরা অংশগ্ৰহণ করেন। চা পৰ্বের পর বিধানসভা বসলে অধ্যক্ষ হিতেন্দ্ৰানাথ গোস্বামী রাজ্যপালকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বিধানসভার বিএসি প্ৰতিবেদন পেশ করেন। অধ্যক্ষের অনুপস্থিতে বিধানসভা পরিচালনা করার জন্য চেয়ারম্যান এর তালিকা প্ৰকাশ করেন। বিজেপির প্ৰশান্ত ফুকন এবং কংগ্ৰেসের ওয়াজেদ আলি চৌধুরীর প্ৰমুখের নাম ঘোষণা করেন। রাজ্যপালের ভাষণের ওপর ৩০০ মিনিট বিতৰ্ক হবে। বিজেপি সদস্য এবং মুখ্যমন্ত্ৰীর রাজ্যপালের ভাষণের উপর ধন্যবাদ সূচক বিতৰ্কে যোগ দেওয়ার জন্য ১২২ মিনিট সময় ধাৰ্য করেছেন অধ্যক্ষ গোস্বামী। কংগ্ৰেসের জন্য ধাৰ্য করা হয়েছে ৫০ মিনিট, অগপ'র জন্য ২৮ মিনিট, এআইইউডিফ এর জন্য ২৬ মিনিট এবং শরিকদল বিপিএফ এর জন্য ২৪ মিনিট সময় ধাৰ্য করা হয়েছে। বিধানসভায় অৰ্থমন্ত্ৰীর পক্ষে সংসদীয় পরিক্ৰমা মন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারী ৩৪ টি এক্সট্ৰাঅৰ্ডিনারী গেজেটে নোটিফিকেশন পেশ করেন। বিদ্যুৎ মন্ত্ৰী তপন কুমার গগৈ তিনটি গেজেট নোটিফিকেশন দাখিল করেন। অৰ্থমন্ত্ৰী ‘ইকোনোমিক সাৰ্ভে অসম' প্ৰতিবেদন পেশ করেন। শিল্পমন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারী ব্ৰহ্মপুত্ৰ পলিমার লিমিটেডের প্ৰতিবেদন দাখিল করেন। সমবায় মন্ত্ৰী রিহন দৈমারী ‘অসম কোঅপারেটিভ সোসাইটির সংশোধনী বিল' পেশ করেন। অৰ্থমন্ত্ৰী হিমন্ত বিশ্বশৰ্মা ২০১৮-১৯ অৰ্থবছরের ‘দাবি-মঞ্জুরি' পেশ করেন। অধ্যক্ষ হিতেন্দ্ৰনাথ গোস্বামী বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ দীপালি বড়ঠাকুর, প্ৰাক্তন মন্ত্ৰী বিরাজ কুমার শৰ্মা প্ৰাক্তন মন্ত্ৰী চন্দন সরকার, উমেশ চন্দ্ৰ দাস, রেনুপমা শইকিয়া, ধৰ্মগুরপ ভান্তেজী, অভিনেতা কাদের খান, মনোরঞ্জন গোস্বামী, খনিন চন্দ্ৰ দাস, নটবর ঠক্কর, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ প্ৰমুখদের মৃত্যুতে শোক প্ৰকাশ করে ২ মিনিট মৌনতা পালন করা হয়। রাজ্যপাল তাঁর দীৰ্ঘ ভাষণে অসম চুক্তি রূপায়ণে বিশেষ জোর দিয়ে বলেন, রাজ্যের বৈধ নাগরিক শনাক্তকরণের লক্ষ্যে রাষ্ট্ৰীয় নাগরিকপঞ্জি উন্নিতকরণের কাজ চলছে। মেঘালয়, অরুণাচল প্ৰদেশ, ত্ৰিপুরা, মিজোরাম, নাগাল্যাণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে অসমের দীৰ্ঘ ২৭৪৩ কিঃমিঃ সীমান্ত জড়িয়ে আছে। সেই সীমান্ত উন্নয়ণের কাজ চলছে। অসমে তিন দশকের বেশি সময় ধরে সন্ত্ৰাসবাদের মোকাবিলায় রাজ্য সরকার ফলপ্ৰসূ পদক্ষেপ গ্ৰহণ করেছে। আলফা, এনডিএফবি (পি) সহ ১৩ টি উগ্ৰপন্থী সংগঠনের সঙ্গে সরকার ইতিবাচক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজ্যে ক্ৰমবৰ্ধমান সাইবার ক্ৰাইম প্ৰতিরোধ করতে অসম পুলিশ ‘সাইবার ডোম' প্ৰজেক্ট গ্ৰহণ করেছে। দুৰ্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি গ্ৰহণ করে এপিএসসি সহ রাজ্যে শতাধিক অফিসারকে দুৰ্নীতির অভিযোগে গ্ৰেপ্তার করেছে। ভূমি সংরক্ষণ লক্ষ্যে সরকার ভূমি নীতি গ্ৰহণ করেছে। রাজ্যের মহিলাদের সাৰ্বিক কল্যাণে এবং সংখ্যালঘু অনগ্ৰসর জনগোষ্ঠীর জন্য বহুবিধ প্ৰকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের শ্ৰমিক কল্যাণের পাশাপাশি রাজ্যের সকল বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে পেনশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করেছেন সরকার। মহিলাদের প্ৰায় আড়াই লক্ষ ‘আত্ম-সহায়ক' গ্ৰুপকে রেজিষ্ট্ৰারভুক্ত করে সরকারি আৰ্থিক সাহায্যের মাধ্যমে আৰ্থিক স্বাবলম্বী করে তোলা হয়েছে। বিধানসভা চত্তরে বিরোধী দলপতি দেবব্ৰত শইকিয়া অভিযোগ করেন, বিজেপি সদস্যরা আসুর সদস্যদের থানায় নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করে। তারা বিধানসভায় নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্ৰতিবাদ করার পাশাপাশি, বিজেপির এই কাৰ্যকলাপেরও সমালোচনা করা হয়। কংগ্ৰেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বলেন, ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা লংঙঘন করেছে নাগরিকত্ব বিল। এই বিলে ধৰ্মনিরপেক্ষ চরিত্ৰ ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তারা হিন্দু-মুসলিম উভয়ের স্বাৰ্থেই তারা বিলটি আনতে চায়, শুধু হিন্দু ধৰ্মাবলম্বী কথা বললে হবে না। 


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.