Header Ads

অসমকে পাকিস্তানের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন নেতাজী সুভাষ, আজ অসমেই বাঙালিরা অবহেলিতঃ অজয় দত্ত

বিমান দূৰ্ঘটনায় মৃত্যু হয় নি, সাইবেরিয়ার ওমস কারাগারে ৪৫ নম্বর কয়েদী নেতাজীর ওপর অকথ্য নিৰ্যাতন চালানো হয়, দাবি অল ইণ্ডিয়া লিগাল এইড ফোরাম-র প্ৰধান জয়দ্বীপ মুখাৰ্জীর

অমল গুপ্ত, গুয়াহাটিঃ

২৩ জানুয়ারি নেতাজী সুভাষচন্দ্ৰ বসুর ১২৩ তম জন্ম দিবস। সারা দেশে উদযাপনের বিভিন্ন কৰ্মসূচী গ্ৰহণ করা হয়েছে। ফরওয়াৰ্ড ব্লক, সিপিএম সহ দেশের বিভিন্ন দল সংগঠন ২৩ জানুয়ারি দিনটিকে দেশপ্ৰেম দিবস হিসাবে ঘোষণা করে জাতীয় ছুটি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। সেই দাবি আজও পূরণ হল না। দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে বিট্ৰিশরা জানিয়ে গিয়েছিলেন তারা তিনটি কারণে ভারত ছেড়ে যাচ্ছে। প্ৰধান দুটি কারন ছিল নেতাজী সুভাষচন্দ্ৰ বসু, এবং আজাদ হিন্দ বাহিনী। বিট্ৰিশরাজ স্পষ্টাস্পষ্টি জানিয়েছিল মহাত্মা গান্ধীর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ভয়ে তারা দেশ ছাড়ছে না। কারন ঐ আন্দোলন দেশে কোনও প্ৰভাবই পড়ে নি। যে মানুষটির জন্য দীৰ্ঘ ২০০ বছর ভারত শাসনের পর দেশ ছাড়ল বিট্ৰিশরা সেই নেতাজী সুভাষচন্দ্ৰ বসু আজ স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও অবহেলিত, আজাদ হিন্দ বাহিনীও তাঁদের মৰ্যাদা পেল না, যুদ্ধঅপরাধী হিসাবেই তাকে কংগ্ৰেস সরকার পেছনে ঠেলে দিল। 

নেতাজী সুভাষচন্দ্ৰ বসু অসমের পরিবেশ প্ৰকৃতি মানুষকে অত্যন্ত ভালোবেসে ছিলেন। তিনি প্ৰকৃতাৰ্থে অসমের বন্ধু ছিলেন। তদানিন্তন পূৰ্ব পাকিস্তানের হাত থেকে অসমকে রক্ষা করেছিলেন তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অসমীয়া ভাষাকে মৰ্যাদার আসনে প্ৰতিষ্ঠিত করেছিলেন আর এক বাঙালি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদানিন্তন উপাচাৰ্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, সেই অসমে বাঙালিদের কোনও মৰ্যাদা নেই। বাংলাদেশী হিন্দুদের টাৰ্গেট করে প্ৰকৃতাৰ্থে অসমের স্থায়ী বাসিন্দা বাঙালি হিন্দুদেরই আক্ৰমণের লক্ষ্য করা হচ্ছে। গতকাল সোমবার গুয়াহাটির ব্যাতিক্ৰম-মাসডোর উদ্যোগে গুয়াহাটিতে এক অনুষ্ঠানে সুভাষচন্দ্ৰ বসুর ভাইপো চন্দ্ৰ কুমার বসু এসেছিলেন। কটন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুডমাৰ্সন হলে এই অনুষ্ঠান শুরুর আগে একাংশ ছাত্ৰ এই সভা ভুণ্ডুল করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর আগে দেশের বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী শান-এর অনুষ্ঠানে বাধা দান করা হয়, অপরাধ তিনি বাংলায় গান গেয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট কবি শ্ৰীজাত-র অনুষ্ঠানও ভুণ্ডুল করে দেওয়া হয় শিলচরে। রাজ্যের বিশিষ্ট সমাজকৰ্মী অজয় দত্ত আজ দুঃখ প্ৰকাশ করে বলেন, আজ যারা অসমীয়া ভাষাতে কথা বলছেন, ভাষা সংস্কৃতির কথা বলছেন তাদের সেই ভাষায় কথা বলার কোনও অধিকারই থাকত না যদি না ১৯৩৯ সালে নেতাজী সুভাষচন্দ্ৰ বসু তদানিন্তন স্যার সাদুল্লাহ সরকারের পতন ঘটিয়ে পূৰ্ব পাকিস্তানের হাত থেকে অসমকে রক্ষা না করতেন। তদানিন্তন কংগ্ৰেস সভাপতি হিসাবে গুয়াহাটিতে এবং শিলংয়ে এসে সাদুল্লাহ সরকারের কয়েকজন প্ৰতিনিধি গৌরিপুরের মহারাজা সন্তোষ বরুয়া, রোহিনী চৌধুরী, বসন্ত দাস প্ৰমুখদের এবং ৪ জন উপজাতি জনগোষ্ঠীর বিধায়ককে সরকার থেকে ভাঙিয়ে এনে সমৰ্থন প্ৰত্যাহার করিয়েছিলেন। মহম্মদ তৈয়বুল্লাহ নেতাজিকে সৰ্ববিধ সহযোগিতা করেছিলেন। পাকিস্তানপন্থী মুসলিম লীগের সমৰ্থক সাদুল্লাহ সরকারের পতনের ফলে অসমকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল। লোকপ্ৰিয় গোপীনাথ বরদলৈর নেতৃত্বে সরকার গঠন করা সম্ভব হয়েছিল। আজকের অসমে যুব প্ৰজন্ম নেতাজীর অবদানকে স্বীকার করতে রাজী নন। আজ রাজ্যে বাঙালিদেরই নানা ভাবে অপদস্থ করা হচ্ছে। গুয়াহাটির প্ৰাক্তন বিধায়ক তথা বিশিষ্ট সমাজকৰ্মী অজয় দত্ত বলেন, নেতাজীর সঙ্গে গুয়াহাটির কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে পারিবারিক সম্পৰ্ক ছিল। তিনি গুয়াহাটি এলেই তরুণ রাম ফুকন এবং নবীন বরদলৈয়ের বাড়িতে যেতেন। নেতাজী সুভাষচন্দ্ৰ বসুর অন্তৰ্ধান রহস্য সম্পৰ্কে অজয় দত্ত বলেন,  ১৯৪৫ সালের ১৮ আগষ্ট তাইহকু বিমান বন্দরে বিমান দূৰ্ঘটনায় নেতাজীর মৃত্যু হয় নি। দেশের বিভিন্ন গোপনীয় তথ্য এবং ইতিহাস বলছে তদানিন্তন সোভিয়েত রাশিয়ার অন্তৰ্গত সাইবেরিয়া জেলের নেতাজীকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। তখনকার মস্কোর রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ প্ৰথম এই খবরটি ভারত সরকারকে জানায়। তারপর প্ৰধানমন্ত্ৰী জওহরলাল নেহেরুর বোন বিজয় লক্ষী পণ্ডিত রাশিয়ায় ভারতের রাষ্ট্ৰদূত হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কারারুদ্ধ নেতাজীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। তারপর নেতাজী গবেষক পুরবী রায়ও মস্কোতে গিয়ে নেতাজীর অন্তৰ্ধান সম্পর্কীয় কেজিবির বিভিন্ন নথিপত্ৰ পরীক্ষা করে প্ৰমাণ পেয়েছিলেন নেতাজী সোভিয়েত রাশিয়াতেই আছেন। কিন্তু ভারত সরকার নেতাজীকে যুদ্ধ অপরাধী সাজিয়ে ভারতে আসার অনুমতি দেন নি। অল ইণ্ডিয়া লিগাল এইড ফোরাম-র সাধারণ সম্পাদক তথা সুপ্ৰীমকোৰ্টের বরিষ্ঠ আইনজীবি জয়দ্বীপ মুখাৰ্জী জানান, নেতাজীর জন্ম তিথিতে কেন্দ্ৰীয় সরকার বেশ কিছু গোপন ফাইল প্ৰকাশ করবে। তাতে নেতাজীর অন্তৰ্ধান রহস্যের কিনারা হবে। মুখাৰ্জী জানান, ১৯৪৬ সালে দেশের প্ৰথম সারির সংবাদ পত্ৰ ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড'র হেড লাইন ছিল ‘বোস ইন রাশিয়া'। তিনি জানান, সাইবেরিয়ার ওমস নামে এক মানসিক কারাগারের ৪৫ নম্বর কুঠুরিতে নেতাজীকে অকথ্য অত্যাচার চালানো হয়। তদানিন্তন ভারতের বামপন্থী নেতা বাসব পুনিয়া, অজয় ঘোষ, অরুণা আশ্ৰব আলি প্ৰমুখ সোভিয়েত রাশিয়ায় গিয়ে নেতাজীর খবর পেয়েছিলেন। বিজয় লক্ষী পণ্ডিতের সঙ্গে ভারতের প্ৰাক্তন রাষ্ট্ৰপতি সৰ্বপল্লী ডঃ রাধকৃষ্ণণকেও সাইবেরিয়ার জেলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সোভিয়েত রাশিয়ার প্ৰধান যোসেফ ষ্টালিন, প্ৰধানমন্ত্ৰী জওহরলাল নেহেরুর নিৰ্দেশ মেনেই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্ৰামের প্ৰাণ পুরুষ নেতাজীকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিলেন। দেশের আম জনতার বিশ্বাস আজও অটুট। সেই সব রহস্যের কিনারা হওয়া প্ৰয়োজন। বৰ্তমান প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদি সরকার ইতিমধ্যে নেতাজী সুভাষচন্দ্ৰ বসুর প্ৰতি কিছুটা হলেও সুবিচার করেছেন। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের নামাকরণ করেছেন নেতাজীর নামে। আজাদ হিন্দ বাহিনীকেও কিছুটা হলেও স্বীকৃতি দিয়েছেন। শনিবার গুয়াহাটিতে নেতাজীর ভাইপো চন্দ্ৰকুমার বসুও কাকা নেতাজীর সুভাষচন্দ্ৰ বসুর অন্তৰ্ধান রহস্য উন্মোচনে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্ৰহণ করার জন্য কেন্দ্ৰীয় সরকারের কাছে আৰ্জি জানিয়েছেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.