Header Ads

কাৰ্বি আংলংয়ের শিলনী, ছোট ছোট সুন্দর পাথরের সমাহার, আমাদের হাত ছানি দিয়ে ডেকেছিল





অমল গুপ্তঃ গুয়াহাটি
সুদূর বিস্তৃত সবুজ পাহাড় ‘সিংহাসন'। পাহাড়ি নদী শিলনীকে বড় আদরের সঙ্গে কোলে জড়িয়ে নিয়েছে। বুক থেকে ভালবাসার ঝৰ্ণাধারা কুল-কুল করে নেমে এসেছে শিলনী নদী থেকে সমতলের শিলভেটা নদীতে। শিলনী জানের কাৰ্বি নাম ল্যাংসোকাংথু। যার অৰ্থ সুন্দর সুন্দর ছোট ছোট পাথরের সমাহার। অসমীয়া ভাষায় শিলনীর অৰ্থ শিল বা পাহাড়। আবার অনেকে শিলনীর বদলে চিলনী অৰ্থ করেছে যার অৰ্থ গাংচিল। সবুজ পাহাড়ের কোলে গাংচিল যেনো দুই ডানা মেলে ধরেছে, তার মাঝ দিয়ে কুল-কুল রব করে শিলভেটা নদীর গভীরে প্ৰবেশ করেছে। আমারা ‘জাফা'র নেতৃত্বে এক সাংবাদিক দল গত ২ ডিসেম্বর দেশের সব থেকে বড় জেলা (১০,৪৩৪ বৰ্গ কিঃমিঃ) এবং দেশের প্ৰথম ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত অঞ্চল কাৰ্বি আংলং পাহাড়ি জেলার সদর শহর ডিফু থেকে প্ৰায় ২৬ কিঃমিঃ দূরে পাহাড় জঙ্গল ঘেরা মনোরম নৈসৰ্গিক পরিবেশে গিয়ে পৌঁছালাম, সবার মন অপার শান্তিতে পরিপূৰ্ণ হয়ে গেল। শাল, সেগুন সহ অন্যান্য অসংখ্য বড় বড় গাছের ছায়া ঘন পরিবেশ। বহু দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এসেছেন বনভোজ করতে। বনভোজের দলগুলি নাচে-গানে, ফূৰ্তিতে মশগুল, বাইরের পৰ্যটকদের সুবিধার জন্য পাহাড়ি নদীর উপর অস্থায়ী সেতু এবং খাওয়া দাওয়ার সুবিধার জন্য বড় বড় গোলাকৃতির উন্মুক্ত ঘর তৈরি করে দিয়েছে প্ৰশাসন। সেখানে বসেই প্ৰকৃতির অপার সৌন্দৰ্য্য উপভোগ করা যায়। মানুষের কোলাহলের মধ্যেও সিংহাসন পাহাড়ের গাম্ভীৰ্যতা এবং এই শিলনীজান-শিলভেটা নদীর পাথরের কুলু-কুলু রব কানে আসে নিরবিচ্ছিন্নভাবে। মাঝে মাঝে অজানা পাখীদের ডাক শিলনীজানকে এক নতুন মাত্ৰা এনে দিয়েছে। ঐ অঞ্চলের উপজাতি মানুষগুলোর সঙ্গে মিশলাম, তাদের সরলতা, সহজ জীবন যাপন আমাদের মুগ্দ্ধ করেছে। তাদের পরিবেশিত পরম্পরাগত খাদ্যেরও স্বাদ নিলাম। বাঁশের চোঙায় করে ভাত সেদ্ধ হল, সঙ্গে পাহাড়ি মাছও সেদ্ধ,  স্থানীয় শাক পাতা দিয়ে মুৰ্গীর মাংস রান্না করা হয়েছে, তেল মসলার কোনও ব্যবহার নেই বললেই চলে, স্থানীয়ভাবে তৈরি রাইস বেয়ারও পরিবেশন করা হলো, যা সামান্য টক, সামান্য নেশা আমাদের সবাইকে রাঙিয়ে তুললো। মাতিয়ে তুললো কি? বৰ্হিঃজগত থেকে বিচ্ছিন্ন যেন এক নতুন পৃথিৱীর সন্ধান পেলাম। ২৭ টি উপজাতি গোষ্ঠীর আবাসভূমি, জৈব বৈচিত্ৰ্যে ভরপূর এই সুন্দর পরিবেশ দেখেই সুধাকণ্ঠ ভুপেন হাজরিকা গান বেঁধেছিলেন ‘ডিফু হল তোমারে নাম হওক মঙ্গল তোমার ..........' এই কালজয়ী গানটি কাৰ্বি মানুষের অত্যন্ত জনপ্ৰিয় গান। যা কোনও দিন ভুলতে পারবো না। দুটো দিন কাৰ্বি আংলংয়ের পাহাড়ি সফরে জীবনে এক নতুন মাত্ৰা এনে দিল। ফিরবার পথে ট্ৰেনে সাংবাদিক বন্ধুরা হৈ হুল্লুর করে মাতিয়ে তুললো, গান, কবিতার মালা সাজিয়ে। এই প্ৰতিবেদকে সাংবাদিক বাবুরাম আবৃত্তি করার জন্য অনুরোধ করলো। আমি সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে আবৃত্তি করলাম– 
“গরিব মায়ের ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে
লাখ টাকার স্বপ্ন দেখতাম,
এখন লাখ টাকার মালিক হয়ে,
মায়ের সেই
ছেঁড়া কাঁথাটার জন্য মন খারাপ করে”





কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.