Header Ads

অসমের অপার সৌন্দয্যে ভরা বগামাটি-সাদামাটিকে অপবিত্ৰ করা হচ্ছে, কোনও নিয়ন্ত্ৰণ নেই, পরিবেশ প্ৰকৃতি ভয়ে কুঁকরে গেছে



অমল গুপ্তঃ গুয়াহাটি

ভারত-ভূটান আন্তরাষ্ট্ৰীয় সীমান্তবৰ্তী পাহাড় জঙ্গল ঘেরা, হাজার হাজার বুনো কুলের ছায়াঘন নিরিবিলি শান্ত-সমাহিত পরিবেশ। ভূটানের পাহাড়ি জেলা সানদ্ৰুপঝঁঙ্কারের ভাংটার থেকে দিঘলাই এবং মরচলা নামে দুই পাহাড়ি নদী অসম সীমান্তের বিটিএডির অন্তৰ্গত বাক্সা এবং ওদালগুড়ি জেলার জৈব বৈচিত্ৰ্যের সঙ্গমস্থল বগামাটিতে গিয়ে তিন চার ভাগে বিভক্ত হয়েছে। সেখানে বোটিংয়ের ব্যবস্থাও আছে। সমতলে গিয়ে পরিচিতি লাভ করেছে বড়নদী বলে। বড় বড় বোল্ডার, নুড়ি পাথরেৰ মাঝ দিয়ে স্বচ্ছ শীতল ধারা কুলুকুলু রবে বয়ে চলেছে। ঠাণ্ডা বাতাস পাহাড়ের ঝোঁপ ঝড়ের ওপরে ২০০ বেশি সিঁড়ি বেয়ে উঠে বুদ্ধের শরণ নিতে হ'বে। সাংসদ বিশ্বজিৎ দৈমারি তার সাংসদ তহবিল থেকে প্ৰাকৃতিক সৌন্দয্যের মাঝে বৃহৎ বুদ্ধ মূৰ্তি নিৰ্মাণ করিয়ে বৌদ্ধ ধৰ্মাবলম্বী ভূটানের মন ছুয়ার চেষ্টা করেছেন। বন জঙ্গল ঢাকা বগামাটির মাথায় ঝুঁকিপূৰ্ণ রোপওয়ে আছে। জঙ্গল ঘেরা ভূটান পাহাড়ের কিছুটা অংশ সাদা মাটি, সাদা পাথর যা অসমীয়া ভাষায় বগামাটি। সাংবাদিক বাবুরাম রাভা হাকাসাম জানালেন, পাহাড়ের পিছনেই আর এক পাহাড় লোন বা লোনা পাহাড় বলে পরিচিত, লবনাক্ত মাটি, দেশান্তরি পাখিরা সেই লবনাক্ত মাটি খুঁটে খুঁটে খায়। সেই মাটিতে খাদ্যগুণ আছে। সেই খাদ্যরসের সন্ধানে পাখিরা সেখানে যায়। হাজার হাজার টক মিষ্টির বুনোকুলের গাছ, টক কুল খেতে লবন লাগে, সেই লবনাক্ত পাহাড় কি পাখিদের লবনের চাহিদা মিটাচ্ছে? আন্তৰ্জাতিক সীমান্তবৰ্তী মনোরম প্ৰকৃতির কোলে অবস্থিত সাদা মাটির এই অঞ্চলটিতে একদিন আলফা, এনডিএফবি প্ৰভৃতি জঙ্গি সংগঠন এক শক্ত ঘাঁটি গড়ে ভারত সরকারের দিকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল, পাণ্ডববৰ্জিত দূৰ্গম পাহাড়ি পরিবেশে শুধুই ছিল অস্ত্ৰের ঝনঝনানি। মানুষ ভয়ে এই অঞ্চলকে এড়িয়ে যেত। ২০০৩ সালে ভূটান সরকার ভারত সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যৌথভাবে ‘অপারেশন অল ক্লিয়ার' অভিযান শুরু করে। হঠাৎই বাগামাটি রক্তাক্ত হয়ে যায়, তা আজ ইতিহাস। বগামাটি আজ মুক্ত, পাহাড় জঙ্গলের বুনো সুবাস, পাখ-পাখালির কুহ-কলতান, পাহাড়িয়া স্ৰোতের কুলুকুলু রব, বগামাটি তার আগের সৌন্দয্য ফিরে পেয়েছে। বনভোজনের আদৰ্শ স্থান হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। সাংবাদিক প্ৰকাশ পোরাল দেখালেন, বড়নদীর পেছনে জঙ্গলের মধ্যে এক গুহা, যা আজও দূৰ্ভেদ্য। গুয়াহাটি থেকে ৯১ কিলোমিটার দূরবৰ্তী। বামপন্থীর রাজনীতির আদৰ্শ গ্ৰাম বলে পরিচিত গোরেশ্বর, নাওকাটা পেরিয়ে ২৬১ বৰ্গ কিলোমিটার বড়নদীর অভয়ারণ্যের পশ্চিম প্ৰান্তে অবস্থিত বগামাটি। ভোরের কূয়াশায় হাজার হাজার পাখিদের কূহ কলতান, মাঝে  মধ্যে অভয়ারণ্য থেকে বেড়িয়ে আসে হাতি, হিমালয়ান ভালুক, বাঁদর, নীল গাই, হরিণ, বুনো শুকর প্ৰভৃতি জন্তু জানোয়ার। সন্ধার পর অঞ্চলটি মোটেই নিরপদ নয়। আমার কিন্তু বন্য জন্তু দেখা পাই নি। সাংবাদিক বাবুরাম রাভা হাকাসাম তার বাড়ি থেকে কাঁঠাল পাতা, ঢেকিয়া শাক প্ৰভৃতি অন্যান্য জড়িবুটি দিয়ে তৈরি কোমল চালে দিয়ে  ঘরে ‘রাইস বেয়ার' তৈরি করে এনেছিলেন। এর সঙ্গে এক বড় হাঁড়িতে এনেছিলেন তেল ঘন মসলায় তৈরিতে রাঁধা খাঁসির কচি মাংস নয় শুকরের কচি মাংস। দিসপুর প্ৰেস ক্লাবের মধ্যমণি কুঞ্জ মোহন রায়ের ব্যবস্থাপনায় এই বিশেষ ভোজসভা বসেছিল পাহাড়ের মাথায়, ভিড় জমিয়েছিল স্থানীয় সাংবাদিকরা। নিজস্বী (সেলফি) আজ সমাজে এক সংক্ৰামক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। সারা বিশ্বে নিজস্বী তুলতে গিয়ে সব চেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা  ঘটেছে আমাদের এই দেশেই। বগামাটিতে আসা প্ৰত্যেকটি দলের ছেলে-মেয়েদের নিজস্বী (সেলফি) তোলা নিয়ে প্ৰতিযোগিতা দেখা গেল। সব বনভোজনের অবিচ্ছেদ অঙ্গে পরিণত হয়েছে নিজস্বী। আমাদের দলের সঙ্গীতা, অনুপমাদেরও দেখলাম বড়নদীতে পোজ দিয়ে নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত। মনোরম নৈসৈৰ্গিক পরিবেশকে দূষিত করছে বনভোজনস্থলের সৰ্বত্ৰ। এঁঠো পাতা, প্লাষ্টিকের থালা- গেলাস অজস্ৰ মদের বোতল প্ৰভৃতি আবৰ্জনায় ভরে গেছে। ২০১৮র শেষ শনিবার শতাধিক গাড়িতে করে বনভোজন (পিকনিক) দল গিয়েছিল, শৌচালয়ের কোনও সু-বন্দোবস্ত নেই। লাউড স্পীকারের প্ৰচণ্ড শব্দ, কান ফাটিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট ১০০ ডেসিবেলকেও শব্দ মাত্ৰা ছাড়িয়ে যাবে। চার পাশে শহুরে মেলার মতো পরিবেশ, শহুরে কোলাহল, বুনো পরিবেশ উধাও হয়ে গেছে, পাহাড় প্ৰকৃতি জঙ্গল বন্য জন্তু প্ৰাণ ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। তথাকথিত সভ্য মানুষ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মানুষ জঙ্গল মনোরম পরিবেশকে যেন ধৰ্ষণ করছে। সুন্দর পবিত্ৰ স্থানকে অপবিত্ৰ করে দেওয়া হচ্ছে। দাওয়ারায়ঝার ‘ইকোটুরিজম সোসাইটি' এই বনভোজনস্থলের দায়িত্বে আছেন যারা তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। তামুলপুরের বিধায়ক ইমানুয়েল মুসাহারি গত ২২ ডিসেম্বর বগামাটিকে বনভোজ এবং পৰ্যটন স্থল হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাৱে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু বগামাটিকে যেভাবে অপবিত্ৰ করা হচ্ছে, রক্তাক্ত করা হচ্ছে তা কি রক্ষা করতে পারবেন? শেষপৰ্যন্ত।




কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.