Header Ads

কাৰ্বিআংলংয়ে ২৪৪ (ক) ধারা অনুযায়ী রাজ্যের মধ্যে স্বশাসিত রাজ্যের স্বীকৃতি দিলেই কি সব সমস্যা সমাধান হবে?



গোয়া ও সিকিমের ভৌগোলিক পরিসীমার তুলনায় কাৰ্বি আংলংয়ের পরিসীমা অনেক বেশি, আৰ্থিক বরাদ্দ বহুগুণে কম, কেন্দ্ৰ-রাজ্যে বঞ্চনার শিকার
কাৰ্বিআংলংবাসী জানে না তাদের পাঠানো মসলায় আরবের ফাইভ ষ্টার হোটেলে মাংস রান্না হয়

অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি
দেশের মধ্যে ১০,৪৩৪ বৰ্গ কিলো এলাকা জুড়ে উত্তর পূৰ্বাঞ্চলের অনগ্ৰসর দারিদ্ৰ পীড়িত সৰ্ববৃহৎ জেলা অসমের কাৰ্বি আংলং। পাহাড় পরিবেশ প্ৰকৃতিতে ঘেরা জৈব বৈচিত্ৰ্যে ভরপূর দেশের প্ৰথম ষষ্ঠ তফসিলভূক্ত জেলা কাৰ্বি আংলংয়ের গুরুত্ব সমধিক। ১৯৫১ সালে প্ৰতিষ্ঠিত স্বশাসিত জেলা পরিষদ ৬৭ বছরে পা দিল। এই পাৰ্বত্য জেলায় প্ৰচুর খনিজ সম্পদ আছে কয়লা, তেল, এবং শেষ পৰ্যন্ত সোনা থেকেও দামী প্ল্যাটিনামও পাওয়া গেছে। জনসংখ্যা কিন্তু এখনও ১০ লক্ষ অতিক্ৰম করে নি। ২০১১ জনগণনা অনুযায়ী ৯ লক্ষ ৬৫ হাজার ২৮০ জন। এর থেকেও ছোট রাজ্য গোয়া যার পরিসীমা হচ্ছে ৩,৭০২ বৰ্গ কিলো মিটার এবং সিকিমের পরিসীমা হচ্ছে ৭, ০৯৬ বৰ্গ কিলো মিটার। গত ২০১৮-১৯ অৰ্থ বছরের এই দুই রাজ্যের কেন্দ্ৰীয় সরকারের বরাদ্দ হচ্ছে– যথাক্ৰমে ১৭,১২৩,২৮ কোটি টাকা এবং ৭০৫১,০৯ কোটি টাকা অথচ কাৰ্বি আংলংয়ের ১০,৪৩৪ বৰ্গ কিলো মিটার ভৌগোলিক এলাকা সত্বেও ২০১৮-১৯ সালে তাদের বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্ৰ ২৮৮ কোটি টাকা। আৰ্থিকভাবে চরম বঞ্চনার শিকার কাৰ্বি আংলং। তাই জেলার দল মত নিৰ্বিশেষে সবার একই দাবি ভারতীয় সংবিধানের ২৪৪/ (ক) ধারা অনুযায়ী রাজ্যের মধ্যে স্বশাসিত রাজ্যের স্বীকৃতি জানানো। ভারতীয় সংবিধানে এই ব্যবস্থা আছে। এই দাবি ন্যায্য দাবি। কাৰ্বি আংলং জেলায় তিন দিন সফর কালে বিভিন্ন দল সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে বিশিষ্ট সাংবাদিক লংসিং টেরণ, ভীমসন রংপিএবং অন্যান্য সাংবাদিকদের তথ্য অনুসারে এই বঞ্চনার ছবি ফুটে উঠেছে। কাৰ্বি আংলংয়ের প্ৰায় ২৭ টি জনগোষ্ঠীর বাস। জৈব বৈচিত্ৰ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন উপজাতি গোষ্ঠীর বৰ্ণময় সাংস্কৃতিক বৈচিত্ৰ্যেও বাইরের মানুষদের মুগ্দ্ধ করবে। এই পাৰ্বত্য জেলায় প্ৰায় ২০০ সংগঠন। ২০টির বেশি সংবাদপত্ৰ প্ৰকাশ পায়। কিন্তু সাংবাদিকদের যথাযোগ্য মৰ্যাদা নেই। মাঝিথিয়া কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আজও সাংবাদিকদের বেতন ভাতা দেওয়া হচ্ছে না। ডিব্ৰুগড় বিশ্ববিদ্যালয় পাৰ্বত্য কাৰ্বি ভাষা অনুশীলনের জন্য এক ইনিষ্টিটিউট স্থাপন করেছে। তার দায়িত্বে আছেন ‘জাৰ্নালিষ্ট এ্যসোসিয়েশন ফর আসাম'-এর সভাপতি তথা বিশিষ্ট সাংবাদিক লংসিং টেরণ। তিনি সাংবাদিকদের ইনিষ্টিটিউটটি ঘুরিয়ে দেখান। কাৰ্বিআংল বাসী হয়তো জানেনা, এই জেলায় উৎপাদিত এক ঔষধি গাছের ফল এবং বাকল করিমগঞ্জ সীমান্ত বাংলাদেশ হয়ে সুদূর আরবে রপ্তানি হচ্ছে। যে ফল এবং বাকল থেকে কমলা রঙয়ের এক পাউডার তৈরী হচ্ছে যা আরবের রিয়াদ এবং অন্যান্য বড় বড় শহরের ফাইভ ষ্টার হোটেলগুলিতে বিভিন্ন পদের মাংস তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। ডিফু শহর থেকে ১০-১৫ কিলো মিটার দূরে ৪৮ হেক্টর এলাকা জুড়ে তৈরী ‘বায়োডাইভারসিটি কাম রিক্ৰেশন পাৰ্ক' যা কাৰ্বি ভাষায় বলা হেচ্ছ ‘শিরিওলিন আকরমানো'। এই পাৰ্কে ৬০০ প্ৰজাতিরও বেশি মেডিসিন প্লাণ্ট বা ঔষধি গাছ আছে। যা অত্যন্ত মূল্যবান সারা দেশে নেই  বললেই চলে, কিন্তু পরিচৰ্যার বড় অভাব আছে। মাত্ৰ ৩৫ জন অস্থায়ী কৰ্মচারি এই বৃহৎ পাৰ্কটিকে পরিচৰ্যা করছে। বন বিভাগের অফিসার জেমসন ক্ৰো দেখভালের দায়িত্বে আছেন। তিনি এই প্ৰতিবেদকে নিজের গাড়ীতে করে পাৰ্কটির বিভিন্ন এলাকা ঘূরিয়ে দেখান। অত্যন্ত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, কাদা মাটিতে এশিয়ান কচ্ছপ ঘূরে বেড়াচ্ছে। বারকিং ডেয়ারকেও দেখা গেল। এই পাৰ্কের মাঝা মাঝি হরিতকির এক মরাগাছকে সংরক্ষণ করে গাছটিতে বিভিন্ন মূৰ্তি খোদাই করে রাখা হয়েছে, যা অপূৰ্ব এক স্মারক বলা যেতে পারে। বন বিভাগের অফিসার জানালেন, শান্তি নিকেতনের শিল্পীরা এই কাজটি করেছেন। এছাড়াও সিমেন্টর তৈরি এক কাৰ্বি ভবন তৈরি করা হয়েছে। যা মনে হতে পারে বাঁশ বেত দিয়ে তৈরি। জৈব বৈচিত্ৰ্যে ভরপূর এই পাৰ্কে বিভিন্ন ধরণের রুদ্ৰাক্ষ, শ্বেত চন্দন ছাড়াও বিভিন্ন রোগ উপশমের গাছ গাছরা আছে। যা দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষ ভীড় জমান এই পাৰ্কে। পাৰ্কটির মুখে এক বৃহৎ আকারের বাঁশের আপ্যায়ন কক্ষ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। অফিসার ক্ৰো জানালেন, ভুলকা বাঁশ দিয়ে তৈরি এই কাঠামো, বাঁশগুলির আয়ু ১০০ বছরের বেশি, কোনও পোকায় কাটবে না। সতি্যই অপূৰ্ব।জাফার সম্পাদক কুঞ্জ মোহন রায়ের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের সাংবাদিক দল ৩০ থেকে ২ ডিসেম্বর ঐ জেলা সফর করে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে।
পাৰ্বত্য কাৰ্বিআংলংকে প্ৰকৃতি তার আপন রঙে সাজিয়ে তুলেছে, উজাড় করে দিয়েছে, কিন্তু মানুষ তা ধরে রাখতে পারছে না। রাজ্য এবং কেন্দ্ৰীয় সরকারের বঞ্চনা তো আছেই, সেই সঙ্গে অফুরন্ত প্ৰাকৃতিক সম্পদের লুট তরাজ চলছেই। সেই সঙ্গে ব্যাপক দুৰ্নীতি ওতঃপ্ৰোতভাবে জড়িয়ে গেছে। প্ৰশাসনিক দক্ষতার অভাব, রাজনৈতিক বিচক্ষণতার অভাব কাৰ্বি আংলংকে পেছনের দিকে ক্ৰমান্বয়ে ঠেলে দিচ্ছে। কাৰ্বি আংলং স্বশাসিত পরিষদের চিফ এক্সকিউটিভ মেম্বার তুলি রাম রংহাং বার বার এই জেলার প্ৰতি বঞ্চনার কথা শোনালেন। তিনি কেবল সংবাদ মাধ্যমকে দোষারোপ করে বলেন, ‘একাংশ সংবাদপত্ৰ জেলার উন্নয়নের ছবি যথাযথ তুলে ধরছেন না, শুধুই নেতিবাচক ছবি তুলে ধরছে, তাই জেলার এই অবনতি।' এই জেলার উন্নয়নে যে অৰ্থ বরাদ্দ হচ্ছে তা কি ঠিক মতো সদ্ব্যবহার হচ্ছে কি? কয়লা সহ অন্যান্য খনিজ সম্পদ ঠিক মতো ব্যবহৃত হচ্ছে কি? এই লাখ টাকার প্ৰেশ্নর জবাব কিন্তু পাওয়া গেল না।



কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.