Header Ads

আসামে কি বাংলা নাটক চলবে না? - সুশান্ত কর

তিনসুকিয়ার এক সাহিত্য সংস্কৃতি সংগঠন এখানে 'বাইরের নাটক করবার পরিস্থিতি'কে ভুল পাঠ করলেন। এর নজির এই সংবাদ ১৯ থেকে ২৩ ডিসেম্বর, বঙ্গাইগাওঁতে নাট্যউৎসব হচ্ছে---সেখানে পশ্চিম বাংলা, বাংলাদেশ থেকেও দল আসছে। সেরকম ভুল হতেই পারে। তারা কিন্তু বলেন নি, '  বাংলা নাটক করবার পরিস্থিতি নেই’। বলেছেন, ‘বাইরের নাটক করবার পরিস্থিতি নেই’। যদিও আমরা এই অর্থেই পড়তে পারি,তাদের কথাকে। কিন্তু সম্প্রসারিত অর্থ যদি করে নেওয়া হয় 'বাংলা/ বাঙালি চলবে না' সে খানিক অতিকথন এই কারণেও হয়ে যায়--যে বাংলা অসমের বাইরের ভাষা না। আসামেও বাঙালি থাকে, অসমেও বাংলা গান নাটক হয়। চলুন, এহ বাহ্য। কিন্তু সেই ভাস্যকেই যখন সংবাদ মাধ্যম হাতিয়ার করে উত্তেজনা ছড়ায় তখন কি তা মেনে নেওয়া যায়? আপনি বলবেন,কেন বাপু? আসামে কি বাংলা নাটক,সিনেমা গান, সাহিত্যের স্বর্ণযুগ চলছে? এতো তোষামোদী কেন? বলি কি,সামান্য সবুর করুন। উগ্রজাতীয়তাবাদ কেবল সহিংস আক্রমণেই হয় না। চারপাশের সমাজ বাস্তবতার ভুল অধ্যয়নও করাতে পারে উগ্রজাতীয়তাবাদ। তাতে আখেরে আপনার ক্ষতিই হতে পারে। কী করে? বেশ! চলুন সংবাদটি আবার পড়ুন। এখানে কোথাও এই তথ্য নেই যে এখানে অসম-ত্রিপুরার কোনো বাংলা নাটক আছে কি না।এই খানেও গ্যাঁড়াকল। লড়তে গেলে সত্যটাকে সূক্ষ্মভাবে দেখতে এবং পড়তে হয়। আসামে কোনোদিনই বাংলা নাটক, বা বাইরের নাটক নিষিদ্ধ ছিল না। অসম আন্দোলনের সাময়িক কিছু দিন বাদ দিলে। কিন্তু সেই সব পশ্চিম বাংলার নাটক।সেই সব নাটক নইলে যে কেবল বাঙালির চলে না, তাই নয়---অসমিয়ারও চলে না।অসমিয়া নাটকের নিবন্ধ প্রবন্ধ পড়ে দেখুন---বাংলা নাটকের প্রশংসা প্রসস্তিতে ভরপুর পাবেন। আমরা সেরকম একটি লেখার লিঙ্ক মন্তব্যে দিয়ে রাখব। কিন্তু প্রশ্ন করুন, অসমের বাংলা নাটক সম্পর্কে কী জানেন, কী ভাবেন ?  অধিকাংশের থেকেই কোনো জবাব পাবেন না। সেরকই কিছু প্রশ্ন তুলে রেখেছেন Arijit Aditya তাঁর সাম্প্রতিক বই ' ডি--রাষ্ট্রই যখন নিপীড়ক' বইতে। নিবন্ধের নাম ‘রাজকুমারীর গান ও ধামাইল’ যারা পড়েছেন,তারাও আবার পড়ে নিন। আসামের বাংলা নাটক অলিখিত ভাবে এই আই পি টি-এর স্বর্ণযুগের আগে এবং সমসময়ের পরে একরকম বলতে গেলে সরকারি-বেসরকারী ভাবে এবং  অলিখিত ভাবে নিষিদ্ধই।আর সেটি যে কেবল অসমিয়া উগ্রজাতীয়তবাদী, বা সাধারণভাবে গণতান্ত্রিক অসমিয়া সমাজই বাদ দিয়ে রেখেছেন তাই না। খবর নিয়ে দেখুন, বাংলা সংগঠনগুলো একই অপরাধে অপরাধী। যারা লেখেন এখনকার পরিস্থিতিতে "বাইরের নাটক করা' সম্ভব না---তারাও 'বাইরে' বলতে বাংলাই বোঝেন,এবং বাংলা বলতে 'বাইরে'ই বোঝেন।অন্যায়টি কেবল 'পূর্বরঙ্গে'র না।এককালে শুনতাম অসমের নাট্যদলগুলোর মধ্যে জেলান্তরের প্রদর্শনী বা প্রতিযোগিতাতে যাতায়াত ছিল। তিনসুকিয়ার এক প্রয়াত নাট্য ব্যক্তিত্ব  অশোক কুমার কর্মকার সম্ভবত তাঁর দল নিয়ে দুই একবার শিলচরের রূপম প্রতিযোগিতাতে গিয়েছিলেন। শুনেছি একবার তিনি বদরপুরে বিচারক হয়েও গেছিলেন। কিন্তু সেই সব পুরাকালের কথা। আজকাল সেই সব নেই। বরাকে যদিও তিনজেলার দলগুলোর মধ্যে ভাবের এবং প্রদর্শনীর আদানপ্রদান হয়েও থাকে, বা তাঁরা ত্রিপুরাও যাতায়াত করে থাকেন, ব্রহ্মপুত্রে তাঁরাও আসেন বা তাঁদের কেউ ডাকেন বলে শুনি না।আর তাঁরাও যদি ডেকে থাকেন ব্রহ্মপুত্রের কাউকে-- আমরা জানি কম--সংখ্যাতে সেগুলো এতোই নগন্য। আর ব্রহ্মপুত্রের জেলাগুলোর কথা কী বলব? স্বয়ং তো ডিব্রুগড়,ডিগবয়, তিনসুকিয়ার মতো সমৃদ্ধ শহরের নাট্য চর্চার কথা জানি। দেখেও ছি। সব্বাই তাকিয়ে থাকে---বাইরে তথা কলকাতার দিকে।নাটক বাছাই করেন সেখানকার।নিজেরা লিখে করবারও সাহস করেন না।এবং তাঁদের নাটক আসামের বিভিন্ন জেলার লোকে দেখুন কতটা আন্তরিক ভাবে চান জানি না। নিজেরা আসামের বাকি জেলার নাটক দেখতে আগ্রহী ভাবে গতিকে মনে হয় না।জেলা বাদ দিন , ডিগবয়ের বলাকা বছর দুই আগে তিনসুকিয়াতে একখানা নাটক করেছিল বহু ঝক্কির পরে। আরো দীর্ঘদিন করতে পারবে কি না,আমার সংশয় আছে। কেউ ডাকবে কি না, আছে সংশয়। তাঁরা নাটক ভালোই করেন।তাদের অপরাধ তারা আসামের দল। কিন্তু সেই দৃষ্টির থেকে বলাকা স্বয়ং কি মুক্ত? চলুন, একে নিন্দে বলে ধরে না নিয়ে সামুহিক সামাজিক আত্মসমালোচনার কথা ধরে নিয়ে বাকি কথা নাহয় বলাকার  Bidyut দাই বলুন। বঙ্গাইগাঁও কেন,অসমের যে কোনো জেলাতে প্রতিবছর যে নাট্য উৎসব গুলো হয়---সেখানে যদি বলাকার মতো অজস্র নাট্যদলের ব্রাত্য দশা কাটাতে হয়---তবে এই অপ্রিয় প্রশ্নগুলোকে এড়িয়ে গেলে চলবে কেন? ও হ্যা, ২০১৭র জানুয়ারিতে তিনসুকিয়াতে সারা অসম নাট্য সম্মেলন হয়েছিল। সেখানেও সারা দেশের নানা ভাষার  দুর্দান্ত সব নাটক এসেছিল। Neeldeep সাক্ষী। সেখানে আসামের একটিও বাংলা নাটক ছিল না। অথচ, এও সত্য যে এই বছর মরান ছাত্র সংস্থার আয়োজিত নাট্যোৎসবে সারা আসাম থেকে একটিই বাংলা নাটকের দল তিনসুকিয়ার ‘সন্ধানী’ যোগ দিয়ে পুরষ্কৃতও হয়েছিল।  গোল পাকিয়ে গেল কি? সমাজটাই এই রকম। গোলপাকানো এবং দ্বন্দ্বে ভরা। সেখানে কোন দিকে পথ বন্ধ আর কোন দিকে খুলা---সেই সত্যকে না দেখতে শিখলে আমরাই এই বাণীকে মহাসত্য করে রাখব, আসামে 'বাংলা ও বাঙালি চলবে না'... স্থিতি যদি পাল্টাতে হয়, নিজেদেরও পাল্টাবার জন্যে তৈরি হতে হয়। কেবল কলকাতার টিভি কাগজের ছড়ানো উত্তেজনাতে উত্তেজিত হলে চলবে না। তাঁরা কতটা কী খবর রাখেন, আমাদের নিত্যদিনের সংবাদে? না হয় গেল একবছর এন আর সি---বিতর্ক তাদের দিয়ে রাখাচ্ছে।

1 টি মন্তব্য:

  1. এতে একজায়গাতে লেখা আছে "আমরা সেরকম একটি লেখার লিঙ্ক মন্তব্যে দিয়ে রাখব। " সেটি এই রইল.।।https://sushantakar40.blogspot.com/2017/06/blog-post_22.html

    উত্তরমুছুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.