বিষ মিশিয়ে মারা হচ্ছে পরিযায়ী পাখি, বিকোচ্ছে ১৫০০ টাকা কিলো দরে
মালদায়ঃ
গত কাল অসমের ডিমা হাসাও জেলার জাতিঙ্গা পাহাড়ে ইতিমধ্যো যাযাবর পাখি আসতে শুরু করছে। সাইবেরিয়া ও অন্যান্য ঠাণ্ডা অঞ্চল থেকে পাখিগুলো প্ৰতিবছর উষ্ণ অঞ্চল জাতিঙ্গায় আশ্ৰয় গ্ৰহণ করে। শীত ফুরোলে ফিরে যায়। জাতিঙ্গা অঞ্চলের গ্ৰামবাসীরা সেই পাখিগুলোকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। অসমের মতো পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন ধরনের পরিযায়ী পাখি বিষ প্রয়োগ করে মেরে ফেলা হচ্ছে। গতকাল তার প্রমাণ পেয়েছেন মালদা ওয়াইল্ড লাইফ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সদস্যরা। তাঁরা কালিয়াচক ২ ব্লকে গঙ্গার চর থেকে উদ্ধার করেছেন ২০টি পাখির মৃতদেহ। সেগুলি তাঁরা জেলা বনবিভাগে জমা দেন। আজ মৃত পাখিগুলির ময়নাতদন্ত করা হবে।শীতকালে মালদার বিভিন্ন জায়গায় আস্তানা গাড়ে পরিযায়ী পাখির দল। সেইসব পাখির বসবাসের পক্ষে ভীষণ উপযোগী গঙ্গার চরগুলি। কারণ, বেশিরভাগ চরেই মানুষের বসবাস নেই। তবে সেই চরগুলিতে কৃষিকাজ হয়ে থাকে। শীতের সময় ওইসব চরে বাসা বাঁধে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা রাডি সেলড ডাক, কমন সেলড ডাক, ইন্ডিয়ান স্পট বিলড ডাক, লাল মুনিয়া, বার হেডেড গুজ, পেরিগ্রিন ফ্যালকন, ব্রাউন হেডেড গাল, লিটল স্টিন্ট, কমন স্যান্ডপাইপার প্রভৃতি প্রজাতির পাখি। কিন্তু সম্প্রতি এই সব পাখির উপর নজর পড়েছে স্থানীয় মানুষজনের একাংশের। পাখিপ্রেমীদের অভিযোগ, এইসব পাখি ধরে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। সেসব রান্না করে খাওয়াও চলছে। অথচ এইসব পাখিগুলির অধিকাংশই বিপন্ন প্রজাতিভুক্ত।পরিযায়ী পাখিদের বাঁচাতে বেশ কিছুদিন ধরে মানুষকে সচেতন করার কাজ করছে মালদা ওয়াইল্ড লাইফ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নামক একটি সংস্থা। প্রতি রবিবার এবং ছুটির দিনগুলিতে এই সংস্থার সদস্যরা জেলার বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষকে পাখি সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি পাখির ছবিও তোলেন। গতকাল এই সংস্থার চার সদস্য সুদীপ্ত মানি, সুকান্ত মণ্ডল, গৌতম দাস ও সোহম চক্রবর্তী কালিয়াচক ২ ব্লকের পঞ্চানন্দপুরে গেছিলেন। সেখানে তাঁরা প্রথমে এলাকাবাসীকে পাখি সম্পর্কে সচেতন করতে একটি ক্যাম্পের আয়োজন করেন। তারপর, তাঁরা গঙ্গার ১৯ নম্বর চরে পাখির ছবি তুলতে যান। তখনই তাঁদের নজরে আসে, চরের একটি জায়গায় নদীর ধারে পড়ে রয়েছে বেশ কিছু পাখির মৃতদেহ। তাঁরা দেহগুলিকে উদ্ধার করেন। দেখা যায়, মৃত পাখিগুলির সঙ্গে রয়েছে তিনটি মৃতপ্রায় পাখিও। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসায় দুটি পাখি প্রাণে বাঁচলেও একটি মারা যায়। সন্ধ্যায় তাঁরা ২০টি পাখির দেহ জেলা বনবিভাগের হাতে তুলে দেন।সুকান্তবাবু জানান, মৃত ২০টি পাখির মধ্যে রয়েছে ব্ল্যাক হেডেড গাল, কমন স্যান্ডপাইপার ও লিটল স্টিন্ট প্রজাতির পাখি। সব পাখির মৃতদেহ তাঁরা নিয়ে আসতে পারেননি। এনিয়ে এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের কাছ থেকে জানা গেছে, চরে পাখি নিধন চলছে। রাতে বিষ মেশানো খাবার ছড়িয়ে রাখা হচ্ছে। সকালে তা খেয়ে মারা যাচ্ছে পাখির দল। এইসব মৃত পাখি ১৫০০ টাকা কিলোদরেও বিক্রি হচ্ছে। গোটা ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।অসুস্থ থাকায় আজ মালদা ডিভিশনের রেঞ্জার সুজিতকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আজ মৃত পাখিগুলির ময়নাতদন্ত করা হলে মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে জানা যাবে। বনবিভাগের পক্ষ থেকেও গঙ্গার চরগুলিতে পাখি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হবে।
কোন মন্তব্য নেই