Header Ads

কোচবিহারের দ্ৰারিদ্ৰ পীড়িত মেয়ে এশিয়ান গেমসে সোনার পদক পেলেন


সোনার মেয়ে স্বপ্না বর্মন, গল্প হলেও সত্যি
আজ একটা বাঙালি মেয়ের গল্প শোনাবো আপনাদের। বাঙালির দুর্ভাগ্য, যাকে মাথায় তুলে নাচা উচিত ছিল তাদের সে চোট নিয়েও লড়ে যাচ্ছে আর বদলে পান পাতা, সিঁদুর কৌটো আর টোপর পড়া অন্য কাউকে বাঙালি তাদের পোস্টার গার্ল হিসাবে তুলে ধরছে।

বাবা পঞ্চানন বর্মন রিকশা চালাতো আর মা বসনা বর্মন চা বাগানের শ্রমিক। মেয়েটা যখন জন্মালো, দেখা গেল দুটো পায়েই ছ'টা করে আঙুল। গুরুত্ব দেয়নি বাড়ির লোক। ভেবেছিল সেই তো বড় হয়ে চা বাগানেই খাটবে - পায়ের ডিফেক্টে আর কিই বা এসে যায়! এদিকে ভগবান ততদিনে অন্য কিছু লিখতে শুরু করেছে মেয়েটার ভাগ্যে।

পড়াশোনায় ভালো ছিল মেয়েটা, খেলাধুলাতেও। স্কুলের মাস্টার বিশ্বজিৎবাবুর (মজুমদার) একদিন মনে হলো এই মেয়েটা অনেকদূর যেতে পারে। মূলত তাঁর উদ্যোগেই স্পোর্টস লাইনে এলো স্বপ্না।

এদিকে মাথার উপর ভালো ছাদ নেই, দুবেলা খাবার পয়সা নেই। পায়ে ডিফেক্ট থাকায় জুতোও মেলেনা দৌড়োনোর। যে জুতো পড়ে খেলতে হয় সেটা যথারীতি চওড়ায় ছোট - পড়লেই পায়ে অসহ্য ব্যথা হয় কিছুক্ষণ পরে।

২০১৩ নাগাদ এলো দুঃসংবাদ। স্টোক হয়ে বিছানা নিলো বাবা। মায়ের টি এস্টেটেও তখন টালমাটাল অবস্থা। দু ভাই এর এক বোন নিয়ে পথে বসার উপক্রম হলো স্বপ্নার পরিবারের। স্বপ্না অবশ্য স্বপ্ন ছাড়লো না - লড়ে গেল এর মধ্যেও। 

২০১৬ সালে লাখ দেড়েক টাকা পুরস্কার পেল স্বপ্না। বাবার চিকিৎসা আর ভাঙাফুটো বাড়ি সারাতেই চলে গেল সব। নিজের জন্যে শুধু পড়ে রইলো সীমাহীন জেদ।

গত বছর হেপ্টাথলনে (সাতটা খেলার সমষ্টি) এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্বপ্না। গেছে এবারের এশিয়াডেও। আশা ছিল ভালো করবেই। 

কিন্তু কথায় বলে অসময়ে দুর্ভাগ্যও পিছু ছাড়েনা। স্বপ্নারও তাই হলো। ইভেন্টের আগেই চোয়ালে চোট পেয়ে আহত হয়ে গেল মেয়েটা। শোনা যাচ্ছে দাঁতে গুরুতর আঘাত। 

এরকম মানের প্রতিযোগিতায় আহত হয়ে লড়া কঠিন। তবু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে স্বপ্না। ওর ইভেন্ট শুরু হয়ে গেছে কাল। আজ বিকেল ছ'টা চল্লিশে ফাইনাল।

বোনটি আমার, আজ জীবনের সেরা আটশো মিটার দৌড়ে দে মা। জানি তোর চোট, জানি পায়ের প্রবলেম নিয়ে এই লেভেলে দৌড়ানোয় জেতা কঠিন। তবু, যেভাবে হোক ওই আটশো মিটার নিজের সবটুকু দিয়ে দে আজ। দেখবি দুর্ভাগ্য মাথা লুকিয়েছে চেষ্টার কাছে। 

মেডেল ভুলে যা। আজ জিতলেই দেখবি কাল মিডিয়া নিয়ে মন্ত্রী আসবে, পরশু টাকা পাবি আর তার পরের দিন চাকরি। আজ জিতলেও বং ক্রাশে মত্ত বাঙালি হয়তো তোকে পাত্তা দেবেনা, তবু টাকা আর চাকরিটা তোর বড্ড দরকার। তোর ভাঙা ঘরে তোর বাবা শুয়ে এখন, তোর মা হয়তো চা পাতা তুলছে জলপাইগুড়ির বাগানে - ওদের জন্য দৌড়ো আজ।

এই আটশো মিটার তোর ভাগ্য বদলে দেবে দেখিস, আর তোর মতো অনেক অভাগার।

'অভাগীর স্বর্গ' আজ নেমে আসুক জাকার্তার পোডিয়ামে।

সংগ্ৰাহক- মানস চৌধুরী

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.