কেরালার বন্যায় ৩৫০ জন নিহত এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহ হারা, অসম সরকারের ৩ কোটি সাহায্য
আশীষ কুমার দেঃ বেঙ্গালুরু, অগাস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এ যাবৎ কেরালা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অভূতপূর্ব, ফলে চোদ্দোটি জেলার তেরোটিই ভয়াবহ বন্যার কবলে । এখনো পর্যন্ত 350 জনের মৃত্যু হয়েছে সম্পত্তির ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। প্রায় আট থেকে দশ লক্ষ লোক বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন । বেশীরভাগ বন্যা প্রভাবিত এলাকা গুলি ইকোলজিক্যাল সেন্সেটিভ জোনে (ESZ), এ অবস্থিত। পশ্চিম ঘাট ইকোলজি এক্সপার্ট প্যানেল কমিটি গঠন করা হয়েছিলো কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও কোঙ্কন এলাকার পরিবেশ রক্ষার জন্য । ভারতীয় বিজ্ঞান সংস্থা বেঙ্গালুরুর তরফে ও সেন্টার ফর ইকোলজিক্যাল সায়েন্স এর প্রধান পরিবেশবিদ মাধব গ্যাডগিল এর নেতৃত্ব দেন । এই কমিটি কেরালার অতি সংবেদনশীল ইকোলজিক্যাল এলাকা গুলিকে তিনটি পৃথক জোনে ভাগ করেন । এই রিপোর্টে পশ্চিম ঘাটের 140,000 কিমি এ পরিবেশ সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয় । কিছু এলাকায় মাইনিং ও পাথর খাদান সম্পুর্ণ রুপে বন্ধ করে দিতে বলা হয় । বহুতল ভবন তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা ও বনাঞ্চলকে অন্য কোন ধরনের কাজে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার জন্য সুপারিশ করা হয় । যদিও এই সুপারিশ 2011 সনে জমা করা হয়, কেরালা সরকার এই রিপোর্ট কে সম্পুর্ণ ভাবে বাতিল করেন ।
আজকের এই বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে ESZ তে অনিয়ন্ত্রিত খনন কার্যের ফলে ভূমিস্থলন, সংরক্ষিত বনাঞ্চল কেটে পর্যটকদের জন্য রিসোর্ট নির্মাণ করা, পাকা রাস্তা তৈরি ইত্যাদির ফলে । ভারতীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা যায় মৌসুমী বায়ু প্রথমে কেরালায় আসে, তাই বৃষ্টিপাত এখানে নতুন কিছু নয় । পশ্চিম ঘাটের ভৌগলিক অবস্থান অনুসারে আরব সাগরে তৈরী নিম্নচাপ যখন দক্ষিণমুখী ঝড়ো হাওয়ার সম্মুখীন হয় তখনই অধিক বৃষ্টিপাত হয় । এধরনের দুটি ঘটনা ঘটে 7 ও 14 আগষ্ট ফলে কেরালা ও কোঙ্কনের সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি শুরু হয় যা সামান্য বৃষ্টিপাতের থেকে 30% বেশী । মুলত ইদ্দুকি জেলার দুটি বৃহৎ জলাধার মুল্লাপেরিয়ার ও ইদ্দুকি কে বাঁচাতে সবকটি স্লুইস গেট খুলে দিতে হয় যার ফলে ডুবে যায় তিনটি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা, এখানে 70% বেশী বৃষ্টিপাত হয়েছে যা একশ বছরের মধ্যে হয়নি । এই পরিস্থিতির জন্য দেশের বেশির ভাগ পরিবেশবিদ মনে করেছেন এটা শুধু মাত্র অধিক বৃষ্টিপাতের জন্য নয়, সরকারি উদাসীনতা এর জন্য দায়ী ।
গত চারদশক ধরে কেরালা রাজ্যের সক্ষম পুরুষ ও মহিলাদের আন্তর্যাতিক স্থানান্তরন ও তার ফলে রাজ্যের আর্থিক ও সামাজিক জীবনে ব্যপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় । কেরালার প্রথাগত ভাবে তৈরী সহজলভ্য সামগ্রী পরিবর্তে শুরু হয় কংক্রিটের বহুতল ভবনের নির্মাণ । পর্যটনকে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে আনার প্রচেষ্টায় তৈরি শুরু হয় রিসোর্ট, ভিলা ও কটেজ অবজ্ঞা করা হয় অতি সংবেদনশীল পরিবেশকে । এর ফলে বৃষ্টির জল যাওয়ার প্রাকৃতিক পথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে । বৃহৎ ড্যাম নির্মাণের ফলে কি ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনে তা আমরা গত এক সপ্তাহ ধরে দেখছি । যতক্ষণ আমরা পরিবেশ সংরক্ষণ এর মতন বিষয়টিকে অবজ্ঞা করব ততদিন প্রকৃতি তার প্রতিশোধ এভাবেই নেবে।অসম সরকার ৩ কোটি টাকা সাহায্য করেছে।
কোন মন্তব্য নেই