Header Ads

অসমে সুপ্রাচীন যুগ থেকে দুর্গা পুজোর ধারা চলে আসছে


প্রশান্ত চক্রবর্তী
•••

দুর্গোৎসব রাজঘরানা থেকে উদ্ভুত। বঙ্গে তো বটেই, অসমেও। তবে অসমে সুপ্রাচীন যুগ থেকে দুর্গা-সংস্কৃতি নানাভাবে ছড়িয়েছিল। অষ্টাদশ পুরাণের অন্যতম 'কালিকা-পুরাণ' বৃহত্তর অসমেই রচিত হয়েছিল নবম-দশম শতাব্দীতে। বিশিষ্ট অসমিয়া পণ্ডিত ড. সত্যেন্দ্রনাথ শর্মা লিখেছেন : "অসমিয়া মনীষার যুগোত্তীর্ণ কীর্তি হলো কালিকা-পুরাণ।" সেই পুরাণের ৫৯ নং অধ্যায়ে দুর্গামন্ত্র পাওয়া গেছে : " জটাজুটসমাজুক্তামর্দ্ধেন্দুকৃত শেখরাম্..."। অসমের এই দুর্গাস্তব শুধু অসমেই নয়, বঙ্গদেশেও প্রচলিত। (দ্র. 'দেবী', ড. নির্মলপ্রভা বরদলৈ, পৃ. ৪২৬)।
    এ-ছাড়া, সারা অসম জুড়ে অজস্র দুর্গামূর্তি পাওয়া গেছে। শিলামূর্তি তো বটেই, পেতলের মূর্তিও। পাহাড়ের গায়ে পাথরে খোদাই করা সুপ্রাচীন দুর্গামূর্তিও অসমে দেখা যায়। গুয়াহাটির অসম রাজ্যিক সংগ্রহশালাতে মাটির তলা থেকে খননকার্যে প্রাপ্ত বেশ কিছু দুর্গামূর্তি আছে। এর মধ্যে একটি অদ্ভুত সিংহবাহিনী বেশ বড় দুর্গামূর্তি আছে~সেটি চতুর্ভূজা। ডান হাতে খড়্গ, বাঁ হাতে ঢাল। ডানদিকের ওপরের হাত অস্ত্রবিহীন, বাঁদিকের ওপরের হাতে শূল। জটামুকুট আর অলংকারশোভিতা। অসমের দুর্গামূর্তিগুলোর বেশির ভাগই উগ্ররূপের~মহিষাসুরমর্দিনী। বাংলার যেমন ছেলেপুলে, স্বামীসন্তান নিয়ে বাঙালির পরিবারের আদল~অসমে সেই বাৎসল্য ও পারিবারিক রূপটি মূর্তিতে নেই। এর বড় কারণ~অসমে বঙ্গের চেয়েও প্রাচীন এক আর্যসভ্যতা ছিল, কিন্তু পরে অস্ট্রিক-মঙ্গোলীয় ধারার প্রভাব বাড়তে থাকে। এই ভাষ্য স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্রের। তিনি লিখছেন : "যথায় এখন কামরূপ, তথায় অতি প্রাচীন কালে এক আর্য্যজাতি ছিল। তাহাকে প্রাগজ্যোতিষ বলিত।" বঙ্কিমের মতে~আহোম ও অন্যান্য অ-আর্য জাতির বৃদ্ধির ফলে অসমে আর্যধারাটিতে অন্য ধারা মেশে।(দ্র."বাঙ্গালার ইতিহাসের ভগ্নাংশ : কামরূপ~রঙ্গপুর",বিবিধ প্রবন্ধ)। কাজেই বোঝা যায়~অস্ট্রিকপ্রভাব অসমের দুর্গামূর্তিতে ধরা আছে। বনজঙ্গল, পাহাড়, আদিম জীবন, লোক ও জনজাতীয় ধারা~প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সংযোগ~ইত্যাদির ফলে অসমে দুর্গাসংস্কৃতি বিচিত্র রূপ নিয়েছে। জীবনযাপনে প্রকৃতিকেন্দ্রিক আরণ্যক ধারা, নদী-পাহাড়, গভীর অরণ্য, পশুনিধন ইত্যাদির মধ্যে এখানকার সংস্কৃতির একটি ভিন্ন রূপ গড়েছিল। আর এর পাশাপাশি জনজাতীয় মাতৃতান্ত্রিক সমাজেরও প্রভাব। এর ফলে অসমে একটি আলাদা দেবী-কালচার দেখা যায়। দুর্গারও রণচণ্ডী মূর্তির প্রাধান্য তাই রয়েছে। গুয়াহাটি শহরের মধ্যিখানে আমবাড়ি খননকার্যেও  তিনটি মূর্তি উঠেছে~সবই মহিষমর্দিনী~রণের দেবী। এই সমস্ত মূর্তিই কমপক্ষে দশম শতাব্দীর বলে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা মনে করেন। কামাখ্যায় পাহাড়ের গায়ে খোদাই-করা দুর্গার শিলামূর্তি পাওয়া গেছে~যেখানে দুর্গার হাত আঠারোটি। গুয়াহাটি এরকম আঠারো হাতের দুটি মূর্তি আছে।(সূত্র : নির্মলপ্রভা বরদলৈর পূর্বোক্ত গ্রন্থ, পৃ. ৪৩৬-৩৭) 
     আমি জানি না~বৃহৎবঙ্গে আঠারো হাতের দুর্গামূর্তি কোথাও পাওয়া গেছে কিনা। দুর্গার আঠারোটি হাত~অভিনব তো বটেই। 
   অসমের দুর্গার নানারকম স্থানিক রূপ। অজস্র জনজাতীয় বা ট্রাইভাল গোষ্ঠী গোটা উত্তর পূর্বে। এদের অনেকগুলো ধারায় দুর্গাকে বিচিত্রভাবে বিচিত্র রূপে পূজা করার প্রথা আছে। সবই বনদুর্গা। বঙ্গের গার্হস্থ্য দুর্গা অসমে নেই। এখানে দুর্গার নানা নাম। মঙ্গলদৈ অঞ্চলে একটি দুর্গামূর্তি পাওয়া গেছে~যার নাম, 'বুঢ়িগোসাঁনী'। পলাশবাড়ি ও মির্জা বলে দুটি জায়গা গুয়াহাটির কাছাকাছি~যেখানে দুর্গার নাম 'বাঘেশ্বরী', 'লাহেশ্বরী ভগবতী', 'নিজেশ্বরী'। বৃহত্তর অসমের খাসি-জয়ন্তিয়া পর্বতের দক্ষিণ সীমান্তে চেলা গাঁও~ওখানে দুর্গা মা একটি গোলাকার চ্যাপ্টা শিলা~তিনি চণ্ডিকা ও জয়ন্তেশ্বরী। আমার গৃহশহর অসমের হোজাই জেলার লংকায় আছে~লংকেশ্বরী দেবীর থান। সমস্ত অসম জুড়ে এরকম অনেক "থান" আছে। শব্দটি "স্থান" থেকে এসেছে। অসমের দুর্গার পৌরাণিক রূপের সঙ্গে একটি লৌকিক রূপ রয়েছে। এখানে তিনি "গোঁসানি"। লোকদেবী। 
   বোঝাই যাচ্ছে, হাজার বছর ধরেই অসমে দুর্গা-সংস্কৃতি চলছে। আর্য ও অনার্য ধারার সম্মিলিত রূপের ভেতর দিয়ে। 
   পরবর্তীকালে দুর্গাপূজা উপলক্ষে যে দুর্গোৎসব শুরু হয়~সেটা কোচবিহার থেকে আগত। একটা সময় কামরূপ-কামাখ্যা পর্যন্ত কোচ-কামতাপুর রাজ্য ছিল। সীমান্তের এই সংযোগের ফলে বঙ্গীয় দু্র্গাসংস্কৃতিও অসমে প্রবেশ করেছিল। 
    "কোচবিহারের ইতিহাস" প্রণেতা খান বাহাদুর আমানাতুল্লা আহমেদ লিখেছেন~রাজা নরনারায়ণের আমলে আহোম রাজার সঙ্গে কোচ রাজার একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুসারে সুন্দর কোঁওর(কুমার) বা 'সুন্দর গোহাঞি' নামে এক রাজবংশীয়কে অসম থেকে কোচবিহারে পাঠানো হয়। ইনি ছিলেন আহোমরাজ চুখামফা স্বর্গদেও(প্রতাপসিংহ)র ভাই ছগাম কোঁওর, কোচবিহারের ইতিহাসে তাঁকে 'সুন্দর কোঁওর' বলা হয়েছে। আহোম রাজার প্রতিভূ রূপে তিনি কোচবিহারে ছিলেন। সেখানে স্বচক্ষে কোচরাজাদের দুর্গোৎসবের বিরাট জাঁকজমক, বিশাল আয়োজন দেখে মোহিত হন। এবং অসমে ফেরার পর আহোমরাজকে বিশদ বর্ণনা করেন। আহোম রাজ ওই ধরনের একটি দুর্গা-উৎসব তাঁর রাজ্য-রাজধানী গড়গাঁওয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেন। শুধু তাই নয়~মৃন্ময় মূর্তি গড়া শেখার জন্য কোচবিহারে লোক পাঠালেন আমোমরাজ। অসমে শুরু হলো মৃন্ময়ী দুর্গাপূজা।(দ্র. "অসম বুরঞ্জি",হরকান্ত বরুয়া সদরামিন, সম্পা. ড. সূর্যকুমার ভূঞা, পৃ.৩৬-৩৭)। স্বর্গদেও চুকামফা বা প্রতাপ সিংহর আমল থেকেই অসমে দেবীগৃহ বা দেবীমন্দিরগুলো তৈরি হতে থাকে।
   প্রতাপ সিংহের রাজত্ব থেকে এই দুর্গোৎসব যে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল~তার প্রমাণ~এরপর, স্বর্গদেও গদাধর সিংহ প্রজাদের সন্তুষ্টির জন্য উজানে তাঁর রাজধানী গড়গাঁও নগরে রাজপরিবারের উদ্যোগে দুর্গা পূজার অনুমতি দেন।
   আহোমরাজ শিব সিংহ নদীয়া শান্তিপুরের শিমলা গ্রামের কৃষ্ণানন্দ ভট্টাচার্য ন্যায়বাগীশ নামে এক বাঙালি তান্ত্রিক যোগীপুরুষকে অসমে আমন্ত্রণ করে এনেছিলেন। ওই কৃষ্ণানন্দ এসে কামাখ্যায় পাকাপাকি থাকা শুরু করেন। রাজা সপরিবার তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। কামাখ্যা পাহাড়ে ছিলেন বলে অসমের ইতিহাসে তিনি "পর্বতীয়া গোঁহাই" নামে খ্যাত। (হরকান্ত সদরামিনের পূর্বোক্ত গ্রন্থ, পৃ. ৬৬-৬৭)।
   অসমিয়াভাষী হলিরাম ঢেকিয়াল ফুক্কন(ফুকন)-এর "আসাম বুরঞ্জি" নামক ইতিহাসগ্রন্থটিকে ড. সুকুমার সেন বলেছেন~বাংলা গদ্যে লেখা প্রথম ইতিহাসবিষয়ক গ্রন্থ। এটি ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দে হলিরাম নিজের টাকায় বইটি কলকাতা থেকে প্রকাশ করেন এবং বিনামূল্যে বিতরণ করেন। ওই মহামূল্যবান গ্রন্থের "রাজবিবরণ" অধ্যায়ে হলিরাম লিখছেন : "আর জেলা নবদ্বীপান্তর্গত শিমলা গ্রাম হইতে কৃষ্ণরাম ন্যায়বাগীশকে আনিয়া শক্তিমন্ত্র গ্রহণ করেন। তদবধি রাজগৃহে দুর্গোৎসব ও চণ্ডীপাঠ ও বলিদানাদির প্রচার হইল।"(দ্র. "আসাম বুরঞ্জি", সম্পাদক ও আবিষ্কারক : যতীন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য, মোক্ষদা পুস্তকালয়, ১৩৬৯ বাং, পৃ. ৩৯)। 
    হলিরাম লিখেছেন, এই কৃষ্ণরাম ন্যায়বাগীশ মহাপণ্ডিত শক্তিধর সাধক ছিলেন। তিনিই 'যোগিনী তন্ত্র', 'কালিকা পুরাণ' ইত্যাদি গ্রন্থ ঘেঁটে অসমে নানা দেবতার পূজা-অর্চনা, ধ্যান, স্তব ইত্যাদি সৌর-শাক্ত-শৈব-গাণপত্য-বৈষ্ণবদের নিত্যনৈমিত্তিক ক্রিয়ার বিধান প্রস্তুত করেন~বঙ্গের রঘুনন্দনের স্মৃতিশাস্ত্রানুসারে। হলিরাম আরও লিখছেন~"আর তিনি কামাখ্যা দেবালয়ে দুর্গার্চমণিমঞ্জরী নামে দুর্গোৎসবের এক বিধি সংগ্রহ করিয়া দেন।"(হলিরামের পূর্বোক্ত গ্রন্থ,পৃ. ৩৯)। 
  কৃষ্ণানন্দের আমল থেকে কামাখ্যায় ও আহোমরাজ পরিবারের দুর্গাপূজায় বলিপ্রথা চলছে। এখনও কামাখ্যায় বলি হয়। আর কামাখ্যার দুর্গাপূজায় তো বলি একটি অঙ্গ। এই নিয়ে অসমের জ্ঞানপীঠ বিজয়িনী সাহিত্যিক মাননি রয়সম গোস্বামী(ইন্দিরা) তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস "ছিন্নমস্তার মানুহটো"(ছিন্নমস্তার মানুষটি) লিখে কামাখ্যার বলি প্রথার বিরুদ্ধে সরব হন। 
   অসমের রাজতন্ত্র কিন্তু কামাখ্যার দুর্গোৎসবে বলিবিধানের একটি বাস্তববিধান প্রণয়ন করেছিলেন। সকলেই জানি যে~ভারতীয় জীবনে গোরু নিধন পাপ, যদিও একসময় গোমেধ যজ্ঞ হতো, গোমাংসও প্রচলিত ছিল। কিন্তু ভারতবর্ষের মতো কৃষিপ্রধান সভ্যতায় আর্য কৃষিবিদরা গোরক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। ধর্মের বিধিনিয়ম বেঁধে গোহত্যা বন্ধ করে কৃষিসভ্যতাকে রক্ষা করার নিদান চালু করা হয়েছিল। 
    অসমে আহোমরাজারাও তেমনটি করলেন। হলিরাম লিখেছেন : "দুর্গোৎসব পূজা ও বলিদান রাজগুরু অথবা প্রাপ্তাজ্ঞ ব্যতিরেক কাহার করার সাধ্য ছিল না এইক্ষণ তাহা রহিত হইয়াছে। কেবল মহিষ ঘাতন করিলে অনেক মহিষ নষ্ট হইবেক তদ্দ্বারা সরকারী কর্ম্মের ক্ষতি ও দেশেতে কৃষি কর্ম্মের হানি হইবেক। একারণ আজ্ঞা ব্যতিরেক মহিষ বলিদান নিষেধ আছে, যেহেতুক মহিষ দ্বারা হল প্রবাহ প্রভৃতি নির্ব্বাহ হয়।"(পুরনো বানান রক্ষিত, দ্র, হলিরামের পূর্বোক্ত গ্রন্থ, পৃ. ৫৮)। 
    দুর্গাপূজায় মহিষ বলি দিলে কৃষিসভ্যতার ক্ষতি হবে~তাই অনুমতি ছাড়া বলি নিষেধ~ধর্মীয় গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে উঠে এমন বাস্তব চিন্তা মধ্যযুগের অসমের রাজারা দেখিয়েছিলেন। 
    বঙ্গের মতোই অসমে সাধারণ মানুষের মধ্যে দুর্গা পূজার প্রচলন অনেক পরে হয়েছিল। হলিরাম লিখছেন : হিন্দুর পর্ব্বের মধ্যে দুর্গোৎসব ও ফল্গূৎসব এই দুই পর্ব্বই সর্ব্বত্র প্রবল এবং এদেশেও তাহাই প্রবল কিন্তু রাজা অথবা রাজনিকট হইতে প্রাপ্তাজ্ঞা ব্যক্তি ব্যতিরেকে দুর্গোৎসব কেহ করিতে পারিত না, তন্নিমিত্তে পল্লীগ্রামস্থ প্রায় লোকে দুর্গোৎসব জানেও না...।"(পূর্বোক্ত গ্রন্থ, পৃ. ১০৩)। 
    অর্থাৎ আজকের "বারোইয়ারি"(বারো জন "ইয়ার" বা বন্ধু মিলে নদীয়ার শান্তিপুরের গুপ্তিপাড়ায় এই সাধারণের দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল বলেই এই নামকরণ) দুর্গাপূজা অসমেও শুরু হতে হতে উনিশ শতক পেরিয়ে গেল। গুয়াহাটির উজানবাজারে আহোম রাজার একটি বাড়ি ছিল। সেখানেই দুর্গা পূজা হতো। রাজতন্ত্র শেষ হওয়ার পর ওই অঞ্চলে প্রজাসাধারণ নতুন করে পূজা শুরু করে। আজও সেই পূজা হয়। এবং পূজার নাম অনুসারে ওই স্টপেজটির নাম "বারোয়ারি"। 
   উনিশ শতকেও আহোমরাজার দুর্গা পূজার শেষ স্মৃতি ধরা আছে অসমে মিশনারিদের "অরুণোদই"(অক্টোবর, ১৮৪৬) পত্রিকায়। ওখানে আছে, মধুমেহ রোগে আহোমরাজ পুরন্ধর সিংহর যেদিন মৃত্যু হয়~সেদিন দুর্গা পূজার আড়ম্বর দেখার জন্য "ফুকন বরুয়া" "বরবরুয়া" এসেছিলেন, তাঁরা পূজার আড়ম্বর ছেড়ে রাজার দাহর ব্যবস্থা করেন।
    উনিশ শতক থেকে অসমে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের বাড়ি দুর্গা পূজার প্রচলন শুরু হয়। সিপাহি বিদ্রোহের সময় অসমের অন্যতম স্বনামধন্য ব্যবসায়ী মণিরাম দেওয়ানের ফাঁসি হয়। সেই মণিরামের জোড়হাটের বাড়িতে মহা আড়ম্বরে পূজা হতো। সেই পূজার মূর্তি বানাতেন চারিং অঞ্চলের বুদুরাম খনিকর। মূর্তি বানানো বাবদ বুদুরামকে নগদ ত্রিশ টাকা, এক জোড় নববস্ত্র, একটি রাজকীয় ফুলের সাজি আর ছোট মোষ উপহার দেওয়া হতো। ওই পুজোয় অজস্র অর্থ ব্যয় করা হতো। ব্রাহ্মণদের দানদক্ষিণার সীমা ছিল না। ষষ্ঠির বোধন থেকে দশমীর ভাসান পর্যন্ত হাজার লোক পাত পেড়ে খেত। ('মণিরাম দেওয়ান', বেণুধর রাজখোয়া, দ্বিতীয়, সং, পৃ. ২০৩)।
    নামনি অসমের গোয়ালপাড়ার জমিদার বাড়িগুলোয়ও দুর্গা পূজার প্রচলন শুরু হয়েছিল। স্বনামধন্য অভিনেতা প্রমথেশ বড়ুয়া রাজপরিবারের ছিলেন। তাঁদের গৌরীপুরের রাজবাড়িসংলগ্ন মহামায়া থানে আজও পূজা হয়। 
  ইয়ান্ডাবু সন্ধির পর ব্রিটিশ শাসন সূত্রে অসমে অনেক বঙ্গীয় "বাবু" আগমন ঘটে। তাঁদের মধ্যে ধনী কারও কারও বাড়িতে দুর্গা পূজা শুরু হয়। এবং সেই সব পূজা এখনও চলছে। সেরকম দুটো পূজা হলো~গুয়াহাটির পানবাজারের কালীচরণ সেনের বাড়ির পূজা এবং নগাঁওতে জানকীনাথ সেন উকিলের পারিবারিক দুর্গোৎসব। 
•••
(সৌজন্য : "দৈনিক যুগশঙ্খ", ১৯-১০-২০)

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.