Header Ads

বিলটি পাশ না হলেও বিভাজনমুখী রাজনীতির জয় হল, সবাই বিজেপির ফাঁদে পা দিল

বিরোধীদের উল্লসিত হওয়ার কিছুই নেই, জয় হল বিজেপিরঃ হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী


গুয়াহাটিঃ দীৰ্ঘ রক্তক্ষয়ী অসম আন্দোলনের পর ১৯৮৫ সালে অসম চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। সেই চুক্তি সম্পাদনের পর রাজ্য জুড়ে বিশ্ব জয়ের উল্লাস পরিলক্ষিত হয়েছিল। সেই দিনের কথায় স্মরণে এল। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৬ রাজ্যসভায় পাশ না হওয়ার ফলে রাজ্য জুড়ে আনন্দ উল্লাস লক্ষ্য করা গেল। প্ৰশ্ন উঠছে লাভবান কে হল? রাজনৈতিক মহলের এই প্ৰেশ্নর জবাবে রাজ্যের বিশিষ্ট আইনজীবি হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী স্পষ্টাস্পষ্টি জানালেন, বিল পাশ না হওয়ার ফলে বিরোধীদের উল্লাসিত হওয়ার কিছুই নেই। অবধারিতভাবে জয়লাভ হল সেই শাসক দল বিজেপির। হিন্দুত্ববাদী বিজেপি দলের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। রাজ্যে হিন্দু-মুসলিম বিভাজন স্পষ্ট হয়েছে। বিভাজনমুখী রাজনীতির জয় হয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে কেন্দ্ৰ করে রাজ্যে তথা উত্তর-পূৰ্বাঞ্চলে যে ভাবে আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ল, তাতে রাজ্যের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি হল। রাজ্যে উন্নয়ন থমকে গেল। রাজ্যসভায় বিলটি পাশ না হলেও বিজেপি অন্যান্য রাজ্যে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতির মুনাফা তুলবে। তারা বলবে ক্ষমতাতে এলেই বিলটি পাশ করানোর চেষ্টা করা হবে। বিরোধীরা বাধা দেওয়ার ফলেই বিলটি পাশ করা গেল না। নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির অন্যতম উপদেষ্টা হাফিজ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ থেকে ১ কোটি ৭০ লক্ষ বাঙালি হিন্দু অসমে প্ৰবেশ করবে, অসমকে দ্বিতীয় ত্ৰিপুরা গড়ে তোলা হবে, এই সব ভ্ৰান্ত অপপ্ৰচারের ফলে রাজ্যে এক বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। বাংলাদেশে জাতীয় আয় অসমের থেকে অনেক বেশী, সেখানে ১৮জন বাঙালি হিন্দু সাংসদ, ৩ জন বাঙালি মন্ত্ৰী। বাংলাদেশে ৩০ হাজারেরও বেশী দুৰ্গা পূজো অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই বাংলাদেশ থেকে ১ কোটিরও বেশী মানুষ অসমে প্ৰবেশ করবে এই ধরণের ভ্ৰান্ত অপপ্ৰচারের ফলে তথা আন্দোলনকারীরা ব্যক্তিগতভাবে হয়তো লাভবান হয়েছে, কিন্তু ক্ষতি হয়েছে রাজ্যের। তিনি বলেন, রাষ্ট্ৰসংঘের ঘোষিত বিধি হচ্ছে উদ্বাস্তুদের রক্ষা করা। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে হিন্দু ধৰ্মাবলম্বী মানুষদের রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। সেখানে ধৰ্ম নিরপেক্ষ ভারতবৰ্ষের বিপরীতে গিয়ে কেবল ধৰ্মের ভিত্তিতে পুনরবাসন দেওয়ার কথায় বলা হয়েছে, নিপীড়িত মুসলিমদের কথা বলায় হয় নি। ধৰ্মের কথা না বলে শুধু উদ্বাস্তুদের পুনর বাসনের কথা বলা হতো তবে বাঙালি হিন্দু কেন সব জনগোষ্ঠীর নিপীড়িতরা মানবাধিকারের প্ৰেশ্ন পুনর বাসনের সুযোগ পেত। মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল তো বলেই দিয়েছেন, নাগরিকত্ব বিলে বাঙালি হিন্দুদের সরাসরি পুনবাসন দেওয়ার কথা বলা হয় নি। নিৰ্যাতিত হয়ে বাংলাদেশ থেকে এসেছে তার প্ৰমাণ সাপেক্ষে জেলা ডেপুটি কমিশনারদের কাছে নথিপত্ৰ দাখিল করার পরই এদেশে থাকার সুযোগ পেত। আন্দোলনকারীরা আবেগিকভাবে আন্দোলন করে গেল। বিলটিএকবারও খতিয়ে দেখল না। অৰ্থমন্ত্ৰী হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা আজ প্ৰতিক্ৰিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, বিজেপি বিলটি পাশ করার ক্ষেত্ৰে বদ্ধপরিকর। বিলটি পাশ না হওয়ার ফলে অসম বাংলাদেশী মুসলিমদের হাতে চলে যাবে। ইতিমধ্যে ১৭টি জেলা চলে গেছে। আগামী ২০১১ অসম মুসলিম রাষ্ট্ৰে পরিণত হবে। অসমের কৃষ্টি-ভাষা-সভ্যতা ম্লান হয়ে যাবে। এই বক্তব্যের তীব্ৰ বিরোধিতা করে হাফিজ চৌধুরী প্ৰশ্ন তোলেন, মুসলিমরা যদি প্ৰকৃত ভারতীয় নাগরিক হয় তবে তাদের ক্ষেত্ৰে আপত্তির করা হচ্ছে কেন? বাংলাদেশী মুসলিম হলে আমিও সমৰ্থন করতাম না। চৌধুরী আবার বলেন, হিন্দু-মুসলিম বিভাজন রেখা স্পষ্ট হল। এবার বিজেপি চাইবে হিন্দু-মুসলিম সংঘৰ্ষের সৃষ্টি হোক। তাতে বিজেপি আরও লাভবান হবে বলে মন্তব্য করেন বিশিষ্ট আইনজীবি হাফিজ রশিদ চৌধুরী। বিজেপি বাঙালি হিন্দুদের ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করবে। আন্দোলনকারীদের উল্লসিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।সবাই বিজেপির ফাঁদে পা দিয়েছে।বিলটি সংসদে পাশ না হওয়ায় এআইইউডিএফ-র প্ৰধান মৌলানা বদরুদ্দিন আজমল বলেছেন, জনসাধারণের কাছে বিজেপি মাথা নত করতে বাধ্য হল, গণতন্ত্ৰের জয় হল। অগপ বলেছে, অসম তথা উত্তর পূৰ্বাঞ্চলের জনসাধারণের নৈতিক বিজয় হল। কৃষক মুক্তি সংগ্ৰাম সমিতির নেতা অখিল গগৈ বলেছেন, গণতন্ত্ৰ রক্ষা পেল। প্ৰাক্তন মুখ্যমন্ত্ৰী তরুণ গগৈ বলেছেন, কংগ্ৰেস দলের কড়া অবস্থানের জন্যই বিলটি পাশ হল না। কংগ্ৰেস পরিষদীয় দলের নেতা দেবব্ৰত শইকিয়া দল বল মিলে মিষ্টি খেলেন। সেই মিষ্টি খাওয়ারও সমালোচনা করলেন হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.