Header Ads

কোনও লোক হাতে আইন তুলে নিলে তা বরদাস্ত করবো না, আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবঃ সৰ্বানন্দ সনোয়াল

রাজ্যে ১৬১ জন ডাইনীহত্যার ঘটনা ঘটেছে


অমল গুপ্তঃ গুয়াহাটি
মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল আজ দিল্লী থেকে ফিরেই বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের ওপর বিতৰ্কের জবাবে রাজ্যের উন্নয়নের বিভিন্ন প্ৰসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, রাজ্যে আন্দোলনের ফলে উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সপক্ষে বলেন, বিলটি পাশ হলে রাজ্যের মানুষের জাতি-মাটি-ভেটি সুরক্ষিত হবে। কংগ্ৰেসের সমালোচনা করে বলেন, ১ কোটি ৯০ লক্ষ বাংলাদেশী হিন্দু এই রাজ্যে আসবে বলে ভূয়ো তথ্য দেওয়া হচ্ছে, ধৰ্মীয় উৎপীড়নের বলি হয়ে আজ আসছে না প্ৰাক্তন প্ৰধানমন্ত্ৰী জওহর লাল নেহেরু র সময় থেকেই আসছে। অসম চুক্তির ৬ নম্বর ধারা বাস্তবায়িত হলে অসমীয়া জনগোষ্ঠীর বিধানসভায় আসন সংরক্ষণ চাকরি-বাকরি, ভাষা-কৃষ্টি-সংস্কৃতি সুরক্ষিত হয় হবে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্ৰী। বিলটির প্ৰকৃত অৰ্থ না বুঝে রাজ্যে লাগাম ছাড়া আন্দোলনের সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, এই বিলটি নিয়ে আলোচনা করতে রাজি আছি কিন্তু জনসাধারণকে হেনস্থা করে নয়। কোনও লোক হাতে আইন তুলে নিলে তা বরদাস্ত করবো না, আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব। সঙ্গীতজ্ঞ ভূপেন হাজরিকাকে ভারত রত্ন দেওয়ায় উৎফুল্লিত মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, বিজেপির আমলেই গোপীনাথ বরদলৈকে দেওয়া হয়েছিল, গত ৭০ বছর উত্তর পূৰ্বাঞ্চলে কোনও উন্নয়ন হয়নি। প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদীর আমলে সব ধৰ্ম, বৰ্ণ, ভাষা নিৰ্বিশেষে সুরক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে। উত্তর পূৰ্বাঞ্চলকে শক্তিশালী ইঞ্জিন হিসাবে গণ্য করে প্ৰধানমন্ত্ৰী অসমের স্বাৰ্থে কাজ করছেন। প্ৰাক্তন প্ৰধানমন্ত্ৰী ড০ মনমোহন সিং অসমের প্ৰতিনিধিত্ব করেছিলেন, কিন্তু অসমকে কোনও গুরুত্ব দেন নি বলে অভিযোগ করেন। কংগ্ৰেসের কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বরাক উপত্যকার চরাইবাড়ি থেকে ত্ৰিপুরা অভিমুখী ৩০.২৮ কিলোমিটার রাস্তার দূরবস্থার কথা তুলে ধরে বলেন, ত্ৰিপুরার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্ৰ সড়ক নিৰ্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে আছে। গত ১১ ফেব্ৰুয়ারি ১০ কোটি টাকা দিয়ে কাজ শুরু করার পরেও তা বাতিল করে দেওয়া হয়। পুনরায় দিল্লীতে ডিপিআর পাঠানো হয়েছে। এখন পৰ্যন্ত ২৮ শতাংশ কাজও হয় নি। জবাবে সড়ক যোগাযোগ ভারপ্ৰাপ্ত মন্ত্ৰী তপন গগৈ বলেন, বিধায়কের অভিযোগ যথাৰ্থ সরকার বিষয়টি নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্ৰহণ করেছে। নতুন করে ২৬ কোটি টাকার ডিপিআর দিল্লীতে পাঠানো হয়েছে। যথা শীঘ্ৰ কাজটি শুরু করা হবে। এআইইউডিএফ-র আমিনুল ইসলাম রাজ্যের মরিগাঁও জেলার লাহরিঘাট অঞ্চলের বন্যাএবংধ্বসের ফলে ৮২টি গ্ৰাম নিশ্চিহ হয়ে গেছে। তিনি অভিযোগ করেন, রাজ্য বিদেশী সমস্যার মূলেই হচ্ছে বন্যা ও ধ্বস। বন্যা দূৰ্গত ছিন্নমূল মানুষগুলি আশ্ৰয়ের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে আশ্ৰয় নেয়। শহরে গিয়ে রুজি রোজগারের স্বাৰ্থে অস্থায়ীভাবে আশ্ৰয় গ্ৰহণ করে। শহরে গিয়ে ঠেলা-রিক্সা চালায়, রাজমিস্ত্ৰীর কাজ করে, তখন তাদেরকে বাংলাদেশী বা বিদেশীর তকমা সেঁটে দেওয়া হয়।  নানাভাবে হেনস্থা করা হয়, আটক করে থানাতেও নিয়ে যাওয়া হয়। আমিনুল বলেন, বন্যা দূৰ্গত মানুষগুলি বন্যার ফলে সব কিছু খুইয়ে হয়তো বা তারা সরকারি জমি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে গিয়ে আশ্ৰয় নিতে বাধ্য হয়। তাদের জন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করা হয় না। জলসম্পদ বিভাগের দায়িত্বপ্ৰাপ্ত মন্ত্ৰী সিদ্ধাৰ্থ ভট্টাচাৰ্য জানান ধ্বস এবং বন্যা প্ৰতিরোধে সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্ৰহণ করেছে। সরকার ধ্বস ও বন্যা প্ৰতিরোধে বিস্ত´ত প্ৰকল্প হাতে নিয়েছে। নরুল হুদার এক প্ৰেশ্নর জবাবে ভূমি সংরক্ষণ বিভাগের দায়িত্বপ্ৰাপ্ত মন্ত্ৰী প্ৰমিলা রাণী ব্ৰহ্ম বলেন, ২০১১-১২ অৰ্থ বছর থেকে ২০১৮-১৯ অৰ্থ বছর পৰ্যন্ত রাজ্যে ৮২৪ প্ৰকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বরদ্দকৃত অৰ্থ হচ্ছে ৮৩৩০৬.৭১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে তার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ২৩০৬৪.৯৪৪২৪ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। রাজ্যে ডাইনী হত্যার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিধানসভার সদস্যরা উদ্বেগ প্ৰকাশ করেন। দূৰ্গা ভূমিজের এক প্ৰশ্নে জবাবে সমাজ কল্যাণ বিভাগের দায়িত্বপ্ৰাপ্ত মন্ত্ৰী প্ৰমিলা রাণী ব্ৰহ্ম উদ্বেগ প্ৰকাশ করে বলেন, সমাজের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধি না হলে এ ধরণের ঘটনা চলতেই থাকবে। তিনি বলেন, সরকারের দিক থেকে বিভিন্ন ধরণের সজাগতা সভা আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সজাগতা সভার আয়োজন করে। তার বিভাগের অসম রাজ্যিক মহিলা কমিশন রাজ্যে জুড়ে ডাইনী হত্যার বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করে যাচ্ছে। কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বরাকের ডাইনী হত্যার ঘটনায় সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা গ্ৰহণের দাবি জানান। বরাকে ডাইনী হত্যার নামে আব্দুল মাতিনকে হত্যা করা হয়। আজও সরকারের তরফ থেকে তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় নি। ২০০১ থেকে বৰ্তমান পৰ্যন্ত রাজ্যে ১৬১ জন ডাইনীর নামে হত্যা করা হয়। এখন পৰ্যন্ত ১৩৩টি অভিযোগ থানায় দায়ের করা হয়েছে। সব থেকে বেশি ঘটনা ঘটেছে কোকড়াঝারে সেখানে ৪৫টি, ডাইনী হত্যার ঘটনা সংঘটিত হয় তার পরের স্থান হচ্ছে চিরাং সেখানে ২৪টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে, তার পরের স্থান গোয়ালপাড়া সেখানে ১৭ টি ঘটনা, কাছাড়েও দুটি ঘটনা ঘটেছে। গোলাঘাটে ৪ জন, যোরহাটে ১ জন, কাৰ্বিআংলং জেলায় ৬ জন, নগাঁও জেলায় ১০জন, নলবাড়িতে ২ জন শোণিতপুরে ৮ জন, তিনসুকিয়াতে ১৫ জন, ওদালগুড়িতে ১৫ জন, লখিমপুরে ৪ জন এবং ধেমাজী জেলায় ২ জনের মৃত্যু হয়। মন্ত্ৰী জনান, তিনসুকিয়া জেলারা হাঁহচরা বাগানে দিলীপ কিষাণ এবং তার পত্নী শিবরাত্ৰি কিষাণকে সন্দেহজনক ডাইনী বলে হত্যা করা হয়। তার ১০ বছরের কন্যা ভাগ্যেক্ৰমে বেঁচে যায়। তার সুরক্ষার জন্য ডুমডুমা থানাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। থানেশ্বর বসুমতারী, কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ প্ৰমুখ বিতৰ্কে অংশ গ্ৰহণ করেন। সংখ্যালঘুর মানুষের স্বাৰ্থে সরকার বিভিন্ন কৰ্মসূচী গ্ৰহণ করেছে বলে জানান সংখ্যালঘু বিভাগের দায়িত্ব প্ৰাপ্ত মন্ত্ৰী রঞ্জিত দত্ত কংগ্ৰেসের নুরল হুদার এক প্ৰশ্নের জবাবে মন্ত্ৰী জানান, ২০১৬-১৭  সাল থেকে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কৰ্মসূচী গ্ৰহণ করেছে। ২০১৭-১৮ সালে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে ছাত্ৰীদের হোষ্টেল নিৰ্মাণের জন্য ৯০ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এছাড়াও ই রিক্সা বিতরণ, তারা হেণ্ডপাম্প বিতরণ, টেক্টার প্ৰভৃতি উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। এএনএম নাৰ্সের জন্য ৯০জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এআইইউডিএফ-এর মামুন ইমাদাদুল হক চৌধুরীর এক প্ৰশ্নের জবাবে রঞ্জিত দত্ত জানান, বৰ্তমান সরকার দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুৰ্থ শ্ৰেণীর কৰ্মচারীর জন্য পেনশনের ব্যবস্থা করেছে। পেনশন সঞ্চালকের মাধ্যমে ২০১৬ থেকে চলিত বছর জানুয়ারি পৰ্যন্ত মোঠ ৩১,২৫৩ টা পেনশন নিয়মিতভাবে দেওয়া হচ্ছে।মন্ত্ৰীর জবাবে সন্তুষ্ট হন নি হক চৌধুরী। অসমের বৰ্তমান পৰ্যন্ত খাদ্য সুরক্ষা আইনের অধীনে ৭ লক্ষ পরিবারকে এএওয়াই রেশন কাৰ্ড এবং পি এইচ এইচ খাতে প্ৰায় ৬ লক্ষ পরিবারকে রেশন কাৰ্ড দেওয়া হয়েছে। এই কাৰ্ডের মাধ্যমে ক্ৰমে ৩৫ কেজি ও ৫ কেজি করে চাউল দেওয়া হচ্ছে। নজরুল হকের প্ৰশ্নের জবাবে মন্ত্ৰী রঞ্জিত দত্তএ কথা জনান। তিনি বলেন, প্ৰতি কাৰ্ডের বিপরীতে সারে  তিন লিটার করে কেরোসিন তেল দেওয়া হয়েছে। সংখ্যালঘু ছাত্ৰ-ছাত্ৰীদের জলপানী দেওয়ার নামে ব্যাপক দুৰ্নীতির কথা স্বীকার করেন মন্ত্ৰী। এ ক্ষেত্ৰে পুলিশ তদন্ত করে দেখছে, মরিগাঁও এবং বরপেটা জেলাতে একজন করে শিক্ষককে গ্ৰেফতার করা হচ্ছে। আজ বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের ওপর সংশোধনী প্ৰস্তাব তুলে অভিযোগ করেন অসম চুক্তির ৬ নম্বর ধারা নস্যাৎ করে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করতে চলেছে কেন্দ্ৰীয় সরকার। কিন্তু অসম চুক্তির ৫ নম্বর ধারাকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। এই ধারায় ১৯৭১ সালের ২৪ মাৰ্চকে ভিত্তি বছর হিসাবে ধরা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্ৰী ভাষণের পর রাজ্যপালের ধন্যবাদ প্ৰস্তাবটি বিধানসভায় গৃহিত হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.