Header Ads

অসম তথা উত্তরপূৰ্বাঞ্চলে বনধ সৰ্বাত্মক, বিক্ষিপ্ত ঘটনা, যানবাহন ভাঙচুর, স্তব্ধ গুয়াহাটি


ছবি, সৌঃ টাইম৮
নয়া ঠাহর প্ৰতিবেদন, গুয়াহাটিঃ  আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে নিৰ্যাতিত হয়ে আসা হিন্দু ধৰ্মাবলম্বী মানুষদের এই দেশে আশ্ৰয় দেওয়ার লক্ষ্যে এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। এই বিলটি শুধুমাত্ৰ অসমের ক্ষেত্ৰেই প্ৰযোয্য নয়, সারা দেশের  ক্ষেত্ৰে প্ৰযোয্য। পশ্চিমবঙ্গের ২০১৯ এর লোকসভা নিৰ্বাচনের কথাকে মাথায় রেখে বাঙালি হিন্দু, বৌদ্ধ, পারসি, জৈন, শিখ, খ্ৰিস্টান উদ্বাস্তুদের প্ৰতি লক্ষ্য রেখে এই বিলটি লোকসভায় পেশ করতে যাচ্ছে কেন্দ্ৰীয় বিজেপি সরকার। এই বিলটিকে ঘিরে অসমের সাধারণ মানুষের আশঙ্কা বাংলাদেশের ১ কোটি ৬০ লক্ষ্যেরও বেশি হিন্দু ধৰ্মাবলম্বী মানুষ বিশেষ করে বাঙালি হিন্দু অসমে আশ্ৰয় নিয়ে অসমিয়াদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলবে। অসমিয়ারা নিজ দেশে পরভূমিতে পরিণত হবে। সেই বিলের প্ৰতিবাদে অসমে জাতীয়তাবাদী সংগঠন আসু সহ মোট ৭০ টি সংগঠন এমনকি উত্তরপূৰ্বাঞ্চলের ছাত্ৰ সংগঠনগুলিও আজ অসমে ১১ ঘন্টা বনধের ডাক দিয়েছে। সেই বনধ এমনই স্বতঃস্ফূৰ্ত যা অসম আন্দোলনকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়ালের নিজের জেলা ডিব্ৰুগড়ে বিজেপির কাৰ্যালয় ভাঙচুর পুলিশের সঙ্গে প্ৰতিবাদকারীদের হাতাহাতি সংঘৰ্ষ, ডিব্ৰুগড়ে পুলিশ অফিসার সুরজিৎ সিং পানেসর সমেত কয়েকজন পুলিশ আহত হন। এরপর বাধ্য হয়ে পুলিশকে শূন্যে গুলি ছুড়তে হয়, কাঁদানে গ্যাস ছাড়তে হয়। পরিস্তিতি নিয়ন্ত্ৰণের জন্য ১৪ জনকে গ্ৰেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবারের বনধে বিভিন্ন জায়গায় হিংসাত্মক ঘটনা হয়। ব্যপক হারে যানবাহন ভাঙচুর হয়। এমনকি গুয়াহাটিতে দেখা গেছে অ্যামবুলেন্সকেও ভাঙচুর করতে। মরানের শিল্পী সমাজ এই বিল পাশের বিরোধিতা করেছেন সেইসঙ্গে বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী জুবিন গৰ্গ মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়ালকে এক গোপন চিঠি দিয়ে প্ৰতিবাদ করেছেন। বিজেপি নেতা মেহদি আলম বরা এই বিল গ্ৰহণের প্ৰতিবাদে পদত্যাগ করেছেন। মরিগাঁও, নলবারী, বরপেটা, ওদালগুরি, দুলিয়াযান প্ৰভৃতি জায়গায় বনধ সৰ্বাত্মক হয়েছে। কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ৰরা বিল গ্ৰহণের প্ৰতিবাদে ক্লাস বয়কোট করেছেন। কেএমএসএস নেতা অখিল গগৈ মঙ্গলবারের দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।  গতকাল দিল্লির মতো এদিনও তিনসুকিয়ার মাকুমে আটসার সদস্যরা উলঙ্গ প্ৰতিবাদ করে। নিম্ন অসম নারায়ণপুরে দুজন যুবক বুকে ব্লেড দিয়ে স্লোগান লিখে প্ৰতিবাদ করে। উজান অসমের সোনারিতে আসুর প্ৰাক্তন নেতা বাৰ্তমান বিদ্যুৎ মন্ত্ৰী তপন গগৈয়ের বাসগৃহ ঘেরাও করে টায়ার জ্বালিয়ে প্ৰতিবাদ আন্দোলন করে কেএমএসএস এবং আটসার কৰ্মীরা। মাহমরার বিধায়ক জোগেন মোহনের বাসগৃহ ঘেরাও করে প্ৰতিবাদকারীরা। তিনসুকিয়ার বিধায়ক সঞ্জয় কিষাণের বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ প্ৰদৰ্শন করে আসু। গুয়াহাটিতে বিভিন্ন জায়গায় হিংসাত্মক কাৰ্যকলাপ হয়। নুনমাটিতে যানবাহন ভাঙচুর, ভেটাপাড়া, লখরায় পথ অবরোধ, রঙিয়ার ডিআরএম কাৰ্যালয়ে বিক্ষোভ, গোলাঘাটে বিজেপির কাৰ্যালয়ে বিক্ষোভ, তিনসুকিয়ার বিজেপির অফিসে বিক্ষোভ, গুয়াহাটিতে রেললাইন অবরোধের চেষ্টা, রেললাইন অবরোধে সিপিএম কৰ্মীরাও এগিয়ে আসে। তেজপুর, মরিগাঁও রাজ্যের বিভিন্ন বিজেপি কাৰ্যালয়গুলিতে বিক্ষোভ প্ৰদৰ্শন করে আন্দোলন করে প্ৰতিবাদকারীরা। গুয়াহাটিতে ফ্যান্সিবাজারের ব্যবসায়ীরা প্ৰতিবাদ করেন, বিলের বিরুদ্ধে পথে নেমে আসেন, দোকান পাট বনধ করে প্ৰতিবদান করেন। গোপিনাথ বরদলৈ আন্তৰ্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্ৰীদের হাহাকার অবস্থা। বিমান থেকে নেমে গাড়ির জন্য হাহাকার অবস্থা। ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করেও কোনও গাড়ি নেই। জাগিরোড পেপার মিলের কৰ্মীরাও এদিনের বনধকে সমৰ্থন করেছে। এদিকে, রাজ্যজুড়ে যেন কোনও অপ্ৰীতিকর ঘটনার সৃষ্টি না হয়, শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আসুর উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল কুমার ভট্টাচাৰ্য আন্দোলনকারীদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বিল সম্পৰ্কে বলেন- প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদি অসমের মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল, বিজেপি সভাপতি রঞ্জিত দাস সবাই মিলে অসমের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করলেন। অবৈধ বাংলাদেশীদের সুরক্ষার জন্য অসমের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করলেন। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্ৰী কনরাড সাংমা এনডিএ-র শরিক হয়েও বিলের বিরোধীতা করেছেন। বরাকের কাছাড়া হাইলাকান্দি থেকেও বনধের খবর পাওয়া গেছে বলে তিনি জানান। অরুণাচলপ্ৰদেশ ছাত্ৰ সংস্থা এই বনধকে সমৰ্থন করে বলেছে- অরুণাচল প্ৰদেশে চাকমা এবং হাজং জনগোষ্ঠীতে ভরে গেছে। তাদেরকে রক্ষা করার জন্যেই এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আমরা মানবো না। সেই বিলের আমরা প্ৰতিবাদ করবই। কৃষক মুক্তি সংগ্ৰাম সমিতি অনিৰ্দিষ্টকালিন অবরোধের ডাক দিয়েছে। অগপ-র মন্ত্ৰী ফণিভূষণ চৌধুরি সাংবাদ মাধ্যমকতে জানান- ‘আমরা সঙ্গ ছেড়েছি, আগামিকাল আমরা পদত্যাগ করবো।’ এদিন ঠায়ে ঠায়ে পথ অবরোধের সঙ্গে সঙ্গে প্ৰধানমন্ত্ৰী, মুখ্যমন্ত্ৰীর ব্যানার পোস্টার জ্বালিয়ে দিয়েছে প্ৰতিবাদকারীরা। অভিনভ প্ৰতিবাদ দেখা গিয়েছে তিনসুকিয়ার কাকোপাথারে। সেখানে আসুর এক সমৰ্থনকে ২০০ ফুট উচু এক টাওয়ারে উঠে কালো পতাকা হাতে নিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে প্ৰতিবাদ করতে দেখা গেছে। এদিনের বনধে অসম তথা উত্তরপূৰ্বাঞ্চল স্তব্ধ হয়ে গেছে। তবে ত্ৰিপুরায় বনধের কোনও প্ৰভাব পড়েনি বলে জানা গিয়েছে। এদিনএর বনধে গুয়াহাটি মহানগরের স্বাভাবিক জীবনযাবন বিপৰ্যস্ত হয়েছে। সরকারি অফিস প্ৰায়ই ফাঁকা, রাস্তাঘাট জনশূন্য। এই পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখে মুখ্যমন্ত্ৰী এদিন জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।   

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.