Header Ads

৬ই ডিসেম্বর, বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও বাবাসাহেব আম্বেদকরের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষ্যে

তিনসুকিয়াঃ
৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভেঙে দেওয়ার ঘটনা ও তৎপরবর্তী দেশব্যাপী ভয়াবহ দাঙ্গার পরিস্থিতি গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। সেই থেকে আজ অবধি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতা দখলের নানা কূটকৌশলের রাজনীতি ভারতের জনসমষ্টিকে নানাভাবে বিভাজিত করেছে। স্পষ্টত সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করে রাষ্ট্র পরিচালনার নামে কর্পোরেট শোষণের ব্যবস্থাটাকে আরো পোক্ত করাই এর লক্ষ্য। এই লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছে ভারতের বর্তমান বিজেপি সরকার। সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের কাছে আত্মসমর্পণ ও ভারতবর্ষের শ্রম ও সম্পদ লুটেরা দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে যাতে প্রতিরোধ গড়ে না উঠে তার জন্য সম্প্রদায়িক রাজনীতির মাধ্যমে সরকার মেতেছে মেহনতি মানুষকে বিভাজনের খেলায়।

এই ২০১৮ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি অযোধ্যায় সংঘের ধর্মসভা এবং রামমন্দিরের উন্মাদনাকে আবার চাগিয়ে তোলার খেলা। এর পর পরই ৩০শে নভেম্বর দিল্লিতে লাখো কৃষক জনতার জমায়েত। অর্থাৎ ভারতবর্ষের জনতা যখন ক্ষুধা, অপুষ্টি, স্বাস্থ্য পরিসেবার অভাব, চরম বেকারত্ব, ছাঁটাই, নিচু হারের মজুরি, কৃষকের আত্মহত্যা,  জল-জঙ্গল-জমির অধিকার হরণ, ভঙুর শিক্ষা ব্যবস্থা, নারী নির্যাতন,  উন্নয়নের নামে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ইত্যাদি আরো অনেক সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তখন সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো ব্যস্ত বিভাজনের নিত্য নতুন কৌশল তৈরিতে। ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’-র ঝলমলে রঙিন রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞাপনের আড়ালে রয়েছে অন্ধকার এক ভারতবর্ষের চিত্র। যে ভারতে অসহিষ্ণুতা চরম মাত্রা ছুঁয়েছে। সংখ্যালঘুর পাশাপাশি দলিত, আদিবাসী ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগণের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘন করে তাদের উপর নামানো হচ্ছে রাষ্ট্রীয় আক্রমণ। যখন এইচপিসি-র মতো কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে –  তেল ক্ষেত্রকে ব্যক্তিগত মালিকদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, যখন কর্পোরেট মুনাফার জন্য বৃহৎ নদীবাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে আসামকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দিকে, যখন কৃষি বিপর্যস্ত ও কৃষক উচ্ছেদ চলছে ব্যাপক হারে, তখন একাংশ শ্রমজীবী মানুষকে নাগরিকত্বহীন করে দেওয়ার চক্রান্ত এই ফ্যাসিবাদী প্রকল্পেরই অঙ্গ। ভারতের সাংবিধানিক গণতন্ত্র তথা বহুত্ববাদের বিপদ হিসাবে হাজির হয়েছে এই ফ্যাসিবাদী উত্থান। এর বিরুদ্ধে গড়ে তোলা জরুরি জনগণের ঐক্য, সকল সামাজিক-রাজনৈতিক শক্তির ব্যাপক গণতান্ত্রিক মোর্চা।

৬-ই ডিসেম্বর বাবাসাহেব আম্বেদকরের প্রয়াণ দিবস। সংবিধানের প্রস্তাবনায় যে সমতা ও সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে তাকে বাস্তবায়িত করতে জরুরি পুঁজিবাদী ও আমলাতান্ত্রিক প্রতিক্রিয়াশীল শাসন-শোষণের অবসান। এক শোষণহীন নতুন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে গড়ে তোলা জরুরি শ্রমিক-কৃষকের ব্যাপক বিপ্লবী ঐক্য।

তাই, আসুন ৬ই ডিসেম্বর, বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও বাবাসাহেব আম্বেদকরের প্রয়াণ দিবসে, সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদ বিরোধী দিবস  হিসেবে শপথ নিই–

★সাম্প্রদায়িক বিভাজন নয়, চাই সাম্য-সম্প্রীতি ও সমান অধিকার।

★মন্দির-মসজিদের লড়াই নয়, চাই সবার জন্য শিক্ষা স্বাস্থ্য ও রুজি-রুটির নিশ্চয়তা।

★ চাই সংখ্যালঘু দলিত আদিবাসী ও যেকোনো নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর গণতান্ত্রিক অধিকার।

★ শ্রমিক-কৃষকের অধিকার আদায়ে বিভাজনকারী শক্তির বিরুদ্ধে গড়ে তুলি সক্রিয় প্রতিরোধ।


ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি-র পক্ষে –অরিন্দম দেব।

কোরাস (সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা)-র পক্ষে – নীলু দাস।

সংখ্যালঘু গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন, অসম-এর পক্ষে – অশাদুল হক চৌধুরী।

অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন-এর পক্ষে – মৃণাল কান্তি সোম।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.