Header Ads

নগাঁওয়ে আইনি সাহায্যের জন্য বাঙালি গৃহবধু পথে নেমেছে

গুয়াহাটি: আইনি সাহায্যের জন্য বাড়ি বাড়ি বেড়াচ্ছেন তিনি। নিজের মেয়ে, স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি, দেওর, ননদের ‘বিদেশি’ তকমা ঘোচানোর জন্য যাবতীয় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এই গৃহবধূ। এমনকি আইনজীবীদের কাছেও ছুটে যাচ্ছেন ওই মহিলা। কিন্তু সুরাহা বের হচ্ছে না। নিজে ভারতীয়। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির সবাই ইতিমধ্যেই ‘বিদেশি’ ঘোষিত। ওই মহিলা আইনি দৃষ্টিতে ‘বিদেশি’ ঘোষিত নগাঁওয়ের বাসিন্দা নগেন দাসের বড়ো ছেলের বউ।১৯৭০ সালের ভোটার লিস্টে নাম থাকা নগেন দাস নগাঁও শহরে পরিচিত নাম। পেশায় ছিলেন রঙমিস্ত্রি। তথাকথিত অশিক্ষিত নগেনবাবু আইন-আদালত বিষয়ে ছিলেন পুরোপুরি অজ্ঞ। আজ থেকে চার বছর আগে ‘ডি’ ভোটারের নোটিশ দেওয়া হয় নগেন দাস ও তাঁর স্ত্রী আরতি দাসকে। এবং পরবর্তী সময়ে ওই দম্পতিকে ছুড়ে দেওয়া হয় ডিটেনশন ক্যাম্পে। নগেনবাবুকে বন্দি রাখা হয় তেজপুর ডিটেনশন ক্যাম্পে এবং আরতি দেবীকে কোকরাঝাড় ডিটেনশন ক্যাম্পে। উল্লেখ্য, বিয়ের আগে বিলাসিপাড়া নিবাসী আরতি দাসের বাবার নাম  ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকায় ছিল। এমনকি উভয়েরই লিগ্যাসি ডেটায় নাম রয়েছে।অভিমানী স্বভাবের নগেন দাস ‘ডি’ ভোটারের নোটিশ পাওয়ার পর কোনো আইনি সাহায্য নেননি। দুঃখের বিষয়, প্রায় সাত মাস আগে ৭০ বছর বয়সি নগেন দাসের মৃত্যু হয় তেজপুর হাসপাতালে। পরিবারের সূত্রে জানা যায়, ডিটেনশন ক্যাম্পেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন নগেনবাবু। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।এই অবস্থায় নগেনবাবুর শ্রাদ্ধের পরের দিনই নগেনবাবুর দুই ছেলে মহাদেব দাস (৪৫), সঞ্জিত দাস (৩৫) এবং মেয়ে রত্না দাসের নামে ‘বিদেশি’ নোটিশ জারি করা হয়। নগেনবাবুর নাতনির নামেও ‘বিদেশি’ নোটিশ জারি করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, আতঙ্কিত এই পরিবারের সদস্যরাও ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছেন। আইনের দৃষ্টিতে যে হেতু নগেন দাস ‘বিদেশি’, সে হেতু তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদেরও ‘বিদেশি’ তকমা দিয়ে নোটিশ ধরানো হচ্ছে। এমনকি, নগেন দাসের মৃত্যুর শংসাপত্র তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দিতেও জেল কর্তৃপক্ষ টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ।ডিটেনশন ক্যাম্পে আজ পর্যন্ত কত জন ‘ডি’ ভোটারের মৃত্যু হয়েছে তা বিশদ জানতে চেয়ে শিলচরের বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল বিধানসভায় একটি প্রশ্ন করেছিলেন। বিধানসভায় ওই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের হয়ে পরিবহণমন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি জানিয়েছিলেন, নগেন দাসের ঠিকানা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ।এখন প্রশ্ন, আইনি দৃষ্টিতে ‘বিদেশি’ তকমা পাওয়া নগেন দাসের বাড়ি সত্যিই কি বাংলাদেশের ময়মনসিংহ? এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন মহলে। যদি নগেন দাস বাংলাদেশের অধিবাসী হন, তা হলে তাঁর মৃত্যুর পর কর্তৃপক্ষ কী ভাবে তাঁর দেহ তাঁর ভারতীয় পরিবারের তুলে দেওয়ার জন্য খবর দিয়েছিল? এমনকি মৃতদেহ বুঝে নেওয়ার কথাও বলেছিল। শুধু তা-ই নয়, এক জন ‘বিদেশি’র নাম কী ভাবে ১৯৭০ সাল থেকে ভোটার লিস্টে সন্নিবিষ্ট হল? সরকার বা প্রশাসন তখন কী করছিল?নগাঁও শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বসবাসকারী এই আতঙ্কিত পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য কোনো আইনজীবী, দল বা সংগঠনের এগিয়ে না আসাটা সভ্য সমাজের কাছে লজ্জার বিষয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.