Header Ads

আমেরিকার বোস্টন ব্রাহ্মণদের সম্পৰ্কে কিছু কথা


আমেরিকার বোস্টন শহর থেকে আশীষ  কুমার  দে
ম্যাসাচুসেটস  রাজ্যের  রাজধানী  বোস্টন,  আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের একটি সমৃদ্ধ শহর। নিউ ইংল্যান্ড (মেইন, ম্যাসাচুসেটস, কানেক্টিকাট, রড আইল্যান্ড, নিউ হ্যাম্পসায়র ও ভারমন্ট) এর ছয়টি  রাজ্যের  মধ্যে  অন্যতম । এই অঞ্চলেই ইউরোপিয়ানরা  প্রথম বসতি  স্থাপন করেছিলেন। এবারের  আমেরিকা  ভ্রমণের  শুরু বোস্টন  শহর থেকে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের  ঔদ্যোগিকরণের ফলে প্রয়োজন হয়ে পড়ে প্রচুর  কারিগরি শিক্ষা প্রাপ্ত কর্মীদের, এই চাহিদা পূরণ করতে ১৮৬২ সালে ইউরোপিয়ান পলিটেকনিক এর ধাঁচে স্থাপিত হয় ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি, ধীরে ধীরে প্রয়োজনের তাগিদে যুক্ত হয়েছে চিকিৎসা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি  ও  গবেষণা এবং  এস্ট্রোনমি। আমেরিকার  স্পেস  রিসার্চে কর্মরত বিজ্ঞানীদের একটি  বিশাল সংখ্যক এখান থেকে  গেছেন। এই সময়  বিশ্বের  তৃতীয়  উৎকৃষ্ট মানের  বিশ্ববিদ্যালয়  MIT. কাছেই  হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল, যা প্রায় সব  অর্থনীতি ও ম্যানেজমেন্ট এর ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের কাছে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন। এখানে পড়ে বা পড়িয়ে  অনেকেই  আজ বিশ্ব জুড়ে  অর্থনৈতিক  প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী  সংস্থা,  রাজনৈতিক নেতৃত্ব, অধিবক্তা ও প্রতিষ্ঠিত  অধ্যাপক। নোবেল জয়ী প্রোফেসর অমর্ত্য সেন, এই বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভিজিটিং  প্রোফেসর। বোস্টন  শহরের  আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দেশ ও বিদেশের ছাত্রছাত্রীদের  ভিড়ে শহরটি  কিছুটা  অন্যরকম। এই শহরের অর্থনৈতিক  বুনিয়াদ  হচ্ছে, বিত্ত, বানিজ্য, প্রফেশনাল সার্ভিস, বায়োটেকনোলজি, ইনফরমেশন টেকনোলজি ও সরকারি  কাজকর্ম।  এই শহরের মানুষ  আমেরিকার  সবচেয়ে বেশি অর্থ  দান করেন  মানবিক  কারণে(Philanthropy )।  র্চার্লস  নদীর তীরে অবস্থিত  এই  শহরটি  পুরানো  শহরের  সাথে  সংযুক্ত  হয়েছে সুদৃশ্য একটি  ব্রিজের  মাধ্যমে,  যা  লিওনার্দো  পি  জাকিম  বাঙ্কার হিল মেমোরিয়াল  ব্রিজ  নামে পরিচিত,  রাতের  বোস্টনে  এই ব্রিজের  আলোকসজ্জা  নয়নাভিরাম। এই শহরের  আরেকটি  বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর পার্ক  ও জলাশয়  গুলির  সংরক্ষণ,  এর মধ্যে  ফ্র্যাঙ্কলিন  পার্ক,  বোস্টন  কমন, জামাইকা পন্ডের উল্লেখ করতে হবে । আমেরিকান রেভ্যুউলেশন এর একটি  অন্যতম প্রধান  স্থান বোস্টন  শহর । ইউরোপিয়ান  উপনিবেশবাদের  বিরুদ্ধে  অনেক  সংগ্রাম  ও  অসামরিক যুদ্ধের সাক্ষী এই শহর। এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে পর্যটকদের  সামনে তুলে ধরতে  তৈরি করা হয়েছে ২:৫ কিমি  ফ্রিডম  ট্রেইল,  লাল ইটের তৈরি  এই পথ  এঁকে বেঁকে গেছে  বোস্টন  কমন  থেকে  বাঙ্কার  হিল মনুমেন্ট  (চার্লস  টাউন) পর্যন্ত । এই পথে পরে  ঐতিহাসিক ঘটনার  সাক্ষী,  গির্জা, বাড়ি,  সমাধি,  সভাগৃহ, ফেনুউল  হল,  কুইন্সি মার্কেট ও  পরিত্যক্ত  নৌসেনার জাহাজ । আমেরিকান  আন্দোলনের সাথে  যুক্ত  আছে  ভারতীয়  চা,  যা  বোস্টন  টি  পার্টি'  নামে  খ্যাত । ১৭৭৩ সালে ভারতীয়  চা এর ওপর অতিরিক্ত কর চাপিয়ে ব্রিটিশ  সরকার একটি  আইন  পাশ করে, এর নাম ছিল "টি  এক্ট,  ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অভিযোগ  তারা  আমেরিকানদের প্রতিনিধিত্ব  ছাড়া  এই আইন  পাশ করে। বোস্টন  বন্দরে দাঁড়িয়ে থাকা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির  জাহাজ  ভর্তি  চা পুড়িয়ে  ফেলেন শহরের  আন্দোলনকারীরা । এই  শহরে  এসে  জানতে পারলাম  বোস্টন  ব্রাহ্মণ পরিবারের কথা,   ব্রাহ্মণ  শব্দটি  ভারত ও  নেপালে  ছাড়া আর  কোথাও  ব্যবহার করা হয় আমার জানা  ছিলনা। এই শহরে থাকাকালীন  জানতে পারলাম  ঐতিহাসিক ‘Boston Brahmin’দের  প্রতিষ্ঠা ও বুৎপত্তির কথা। ইস্ট কোস্ট ইস্টাব্লিশমেন্ট এর এক আভিজাত্য সম্প্রদায়, যারা ইউরোপ থেকে 'Mayflower ও 'Arbela' নামের  জাহাজের  যাত্রী ছিলেন ও এই  অঞ্চলে  প্রথম  বসতি স্থাপন করেন। এদের চালচলন, পরিধেয়, খাদ্যাভাস  সাধারণ ইউরোপিয়ানদের থেকে সতন্ত্র ছিল । এরাই এই শহরের  সমাজ  ব্যবস্থা, ব্যবসা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির  উন্নয়ন  করেন। ১৮৬০ সালে চিকিৎসক ও  লেখক  স্যার  ওলিভার ওয়েন্ডাল হোমস্ ,  'আটলান্টিক  মান্থলি' নামের  পত্রিকায়  এই সম্প্রদায়কে  ব্রাহ্মণ  বলে চিহ্নিত করেন এবং  তুলনা করেন সমকালীন ভারতীয়  ব্রাহ্মণদের  উচ্চ  সামাজিক  প্রতিষ্ঠার  সাথে । এই পরিবারের  সদস্যেরা  রাজনীতি,  শিক্ষা, চিকিৎসা,  ব্যবসা কে নিজেদের মতো করে গড়ে তুলেছিলেন,  এদের পরবর্তী প্রজন্ম একইভাবে  এই ঐতিহ্য  বহন করে আসছেন। অনেকটাই  আমাদের  বাংলার  ঠাকুর  পরিবার ও  কিছু কুলীন  ব্রাহ্মণ পরিবারদের মতো।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.