Header Ads

‘ডি' ভোটার নিয়ে বিধানসভায় হুলুস্থুল


শাসক দলের বিধায়ক দিলীপ পাল সরকারের সমালোচনা করলেন, গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্পে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে, আজও ডেথ সাৰ্টিফিকেট পাওয়া যায়নি

অমল গুপ্ত, গুয়াহাটিঃ
অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী (এন আর সি) থেকে ৪০ লক্ষ মানুষের বাদ পড়ার পর এই ইসু্যটি রাষ্ট্ৰীয় পৰ্যায় থেকে আন্তৰ্জাতিক পৰ্যায়ে আলোচিত হচ্ছে। ৪০ লক্ষ বাদ পরা মানুষদের মধ্যে অধিকাংশ ধৰ্মীয়-ভাষিক সংখ্যালঘু  জনগোষ্ঠীর মানুষ। রাজ্যের ৩ কোটি ২৯ লক্ষ মানুষের মধ্যে ২ কোটি ৮৯ লক্ষ মানুষের নাম তালিকায়  অন্তৰ্ভুক্ত হয়েছে। ৪০ লক্ষ ৭ হাজার ৭০৭ জন মানুষের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। সোমবার অসম বিধানসভায় বিষয়টিকে ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠে। বিধানসভায় প্ৰেশ্নাত্তর পৰ্বে বিরোধীরা বার বার করে ‘ডি' ভোটার, ডিটেনশন ক্যাম্প এবং এন আর সি ইসু্যতে সরকারকে চাপে ফেলে আক্ৰমণ করতে থাকলে তা প্ৰতিহত করার চেষ্টা করেন বিধানসভার অধ্যক্ষ হিতেন্দ্ৰ নাথ গোস্বামী। তিনি বার বার বলেন, এই ‘ডি' ভোটার ইস্যু অত্যন্ত স্পৰ্শকাতর, বিষয়টি নিয়ে এমন কোনও মন্তব্য করা উচিত নয় যার ফলে রাজ্যবাসীর কাছে ভুল বাৰ্তা যাবে। তিনিও বিষয়টিতে উদ্বেগ প্ৰকাশ করে বলেন, ‘ডি' ভোটারের সমস্যা সমাধান হওয়া দরকার। বিষয়টি নিয়ে বিরোধী দলপতি দেবব্ৰত শইকিয়া এবং মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়ালের মধ্যে এবং এই ‘ডি' ভোটার সমস্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবকে নিয়ে উচ্চ পৰ্যায়ে বৈঠক করা সিদ্ধান্তের কথা জানান। আজকে বিধানসভায় প্ৰাক্তন উপাধ্যক্ষ দিলীপ পাল সরকারি দলের প্ৰতিনিধি হয়েও সরকারকে কড়া ভাষায় আক্ৰমণ করেন। তিনি গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী সুব্ৰত দের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা বিধানসভায় তুলে ধরে সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে দেন। তিনি বলেন, সুব্ৰত দে ডিটেনশন ক্যাম্পে মারা গেলেন, তার শরীরে কাটা ছেড়ার দাগ ছিল, তার পোষ্টমৰ্টেম রিপোৰ্ট মাত্ৰ দু-এক দিন আগে দেওয়া হয়েছে। এখন পৰ্যন্ত ডেথ সাৰ্টিফিকেট দেওয়া হয়নি। তার পরিবারে ১৫ বছরের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে উপাৰ্জনের কোনও পথ নেই। সরকার এখন পৰ্যন্ত কোনও ব্যবস্থা গ্ৰহণ করেনি। প্ৰাক্তন উপ্যধক্ষ দিলীপ পাল প্ৰায়ত সুব্ৰত দের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারকে সান্তনা দিয়ে আসেন। ব্যক্তিগত ভাবে কিছু সাহায্য করে আসেন। মন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি বিধায়ক পালকে আশ্বস্ত করে বলেন বিষয়টি নিয়ে তিনি তার সঙ্গে কথা বলবেন। কংগ্ৰেসের শুকুর আলী আহমেদের এক প্ৰেশ্নর জবাবে চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি জানান, ১ লক্ষ ১৯ হাজার ৫৫৯ জন ‘ডি' ভোটার আছে।  কংগ্ৰেসের শ্বেরমান আলীর এক প্ৰেশ্নর জবাবে চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি জানিয়েছেন, ৬৭ হাজার ৪৮০ ‘ডি' ভোটারকে ভারতীয় বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই জবাব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্বেরমান আলী সরকারকে আক্ৰমণ করে বলেন, অধিকাংশ ‘ডি' ভোটার যে ভারতীয় সরকারের জবাবে তা প্ৰমাণ হয়ে যাচ্ছে। তিনি আদালতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, এক জন নিদোষী মানুষকেও যেন দোষী সাব্যস্ত করা না হয়। সরকার প্ৰকৃত ভারতীয় নাগরিকদের ‘ডি' ভোটার বানিয়ে মানৱাধিকার লংঘন করেছে। যে সব ‘ডি' ভোটারদের ১৯৯৭ সাল থেকে ৩১ মাৰ্চ ২০১৮ পৰ্যন্ত ভারতীয় বলে ঘোষণা করে হয়েছে, তাদের মধ্যে কাছাড়ে আছে ৩১৫৬জন, করিমগঞ্জে আছে ১৫২৯ জনকে ভারতীয় হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। সব চেয়ে ধুবড়ি জেলায় ৬২০০ জনকে ভারতীয় হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। বিধানসভায় জাকির হোসেইন সিকদার বিদেশী অভিযোগে অভিযুক্ত মানুষদের নোটিশ বাড়িতে গিয়ে দেওয়া হয় না, হাটে বাজারে বিলি করা হয়। মন্ত্ৰী পাটোয়ারি সে কথা অস্বীকার করে বলেন, সরকার নিয়ম নীতি মেন নোটিশ সাৰ্ভ করে। কংগ্ৰেসের কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ  অভিযোগ করেন গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্পের আবাসিকরা তিনবার বিভিন্ন দাবি দাওয়া জানিয়ে অনশনে বসে ছিলেন। তাদের সমস্যাগুলি সমাধান করে নি সরকার। জবাবে চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি বলেন, শাস্তির মেয়াদ উত্তীৰ্ণ হয়ে যাওয়ার পরও যতদিন বিতাড়ন করা না হচ্ছে ততদিন ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়। পাটোয়ারি জনান, গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্পে ২১২ জন লোক আছে এর মধ্যে ১৯০ জনকে বিদেশী ট্ৰাইব্যুনাল বিদেশী বলে ঘোষণা করেছে এবং বিদেশী ঘোষিত ২২ জনের শাস্তির মেয়াদ উত্তীৰ্ণ হয়ে গেছে। মন্ত্ৰী জানান, ভারতীয় বলে ঘোষিত একজন কেউ বন্দী করে রাখা হয় নি। বিধানসভায় এন আর সি প্ৰসঙ্গে সরকারের পক্ষে পাটোয়ারি জানান, সৰ্বোচ্চ আদালত সুপ্ৰীমকোৰ্টের নিৰ্দেশে নাগরিকপঞ্জীর কাজ চলছে। সরকারের পক্ষে বিস্তারিত তথ্য জানানো সম্ভব নয়। এন আর সি কৰ্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে রাজ্যে বহু বৈধ নাগরিকের নাম বাদ পড়েছে। এবং বহু অবৈধ নাগরিকের নাম অন্তৰ্ভুক্ত হয়েছে। চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি বিধানসভায় জানান, নেহেরু-লিয়াকত চুক্তি সম্পাদন হয়েছিল ১৯৫০ সালে সেই সময় থেকে ২০৭১ সাল পৰ্যন্ত সরকারের কাছে বিশেষ কোনও রেকৰ্ড নেই। বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে কত জন মানুষ গিয়েছে বা এসেছে তার কোনও বিস্তারিত তথ্য নেই, তবে শুধু সংখ্যা আছে। আজ বিধানসভায় রাজ্যে কথায় কথায় বনধ সম্পৰ্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মৃণাল শইকিয়ার এক প্ৰেশ্নর জবাবে চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি জনান, ২০১৮ সালের রাজ্যে ১৩ বার আসাম বনধ এবং ১৬ বার স্থানীয় বনধ হয়েছে। এই বনধ-এর ফলে ৬৭৮০ কোটি টাকা সরকারে ক্ষতি হয়েছে। যেখানে সেখানে টায়ার জ্বালিয়ে কথায় কথায় বনধ-এর ফলে রাজ্যের বিরাট ক্ষতি হেচ্ছ। অধ্যক্ষ হিতেন্দ্ৰ নাথ গোস্বামী উদ্বেগ প্ৰকাশ করে বলেন, বার বার বনধ-এর ফলে রাজ্যের আৰ্থিক ক্ষতি হচ্ছে। গণতান্ত্ৰিক ভাবে প্ৰতিবাদ করার অধিকার আছে সবার আছে, তবে এই প্ৰতিবাদের ফলে স্বাভাবিক জীবন যাত্ৰা যাতে ব্যাহত না হয় তা সুনিশ্চিত করতে হবে। এই বনধ, আন্দোলন বিকালের দিকে করলে ভালো হয়। হাইকোৰ্ট বনধ-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা করা হলেও রাজনীতিদলগুলিসাধারণত তা মানছে না। পাটোয়ারি জানান, দ্য অসম প্ৰোহিবিশন এ্যণ্ড প্ৰিভেনশন অফ বনধ বিল, ২০১৭ এই বিলের খসড়া প্ৰস্তুত করা হয়েছে গত ৫ মাৰ্চ, ২০১৮। সুপ্ৰীমকোৰ্ট এই বিলটি আইনে পরিণত করার জন্য রাজ্য সরকারকে নিৰ্দেশ দিয়েছে। বৰ্তমানে বিলটি বিবেচনাধীন হয়ে আছে। বিধায়ক রমেন্দ্ৰ নাথ কলিতার এক প্ৰেশ্নর জবাবে চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি জানিয়েছেন, প্ৰতিবেশী রাজ্যগুলি অসমের ৮৪৩.৫৭১৯ বৰ্গ কিঃমিঃ জমি বেদখল করে রেখেছে। নোমল মমিনের এক প্ৰেশ্নর জবাবে পাটোয়ারি জানান, গত ৫ বছরে অসম থেকে ৮৪৪৩ শিশু পাচার হয়েছে এবং গত ৫ বছরে ৪৩৭৭ জন শিশু নিখোঁজ হয়েছে। অসমে বৰ্তমানে ১২২ টা শিশু কল্যাণ প্ৰতিষ্ঠান আছে। মামুন ইমদাদুল হক চৌধুরীর এক প্ৰেশ্নর জবাবে চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি জানান, ২৪ মে' ২০১৬ থেকে ১০সেপ্তেম্বর ২০১৮ পৰ্যন্ত অসমে ২ লক্ষ ৬০ হাজার ৫৫৩ টা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ২০১৬ তে হয়েছে ৬৪ হাজার ৬৪০, ২০১৭ তে হয়েছে ১ লক্ষ ১১ হাজার ১১৮ টা এবং ২০১৮ র সেপ্তেম্বর পৰ্যন্ত হয়েছে ৮৪ হাজার ৭৯৫ টা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। বিরোধী দলপতি দেবব্ৰত শইকিয়া আসাম টি কৰ্পোরেশনের চা বাগানগুলিতে শ্ৰমিকদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না তাদের ২ শতাংশ হারে বোনাস দেওয়ার দাবি জানান। বরাকের চা শ্ৰমিকদের প্ৰতি বৈষম্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগের প্ৰেক্ষিতি মন্ত্ৰী জানান, বরাকের প্ৰতি মুখ্যমন্ত্ৰীর বিশেষ দৃষ্টি আছে। বরাক উপত্যকার শ্ৰমিকদের একই হারে বোনাস দেওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। রমেন্দ্ৰ নারায়ণ কলিতা অভিযোগ করেন, রাজ্যে কোনও জমি জরিপ করা হয়নি। মেয়াদি পাট্টা দেওয়া হয়নি। গুয়াহাটি মহানগরে ৬৫ হাজার মানুষ মেয়াদি পাট্টার জন্য দাবি জানাচ্ছে, কিন্তু তাদের মেয়াদি পাট্টা দেওয়া হয়নি। ভূমি ও রাজস্ব মন্ত্ৰী ভবেশ কলিতা বিধানসভায় জানান, প্ৰাক্তন নিৰ্বাচন কমিশনার হরি শংকর ব্ৰহ্ম-এর নেতৃত্বাধীন কমিটি রাজ্যের ৩৩ জেলার সফর করে ভূমি নীতি কি হবে এক প্ৰতিবেদন পেশ করেছে। সেই প্ৰতিবেদন পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্ৰতিবেদনের সুপারিশ মেনে ভূমি নীতি প্ৰস্তুত করা হবে। মন্ত্ৰী জানান রাজ্যে সৰ্বমোট ৮ হাজার ৫১৪জনকে পাট্টা দেওয়া হয়েছে এবং ১ হাজার ৪৫ জনকে পাট্টার সাৰ্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। কাছাড় জেলায় কাউকে পাট্টা দেওয়া হয়নি, করিমগঞ্জ জেলায় ১৩৭জনকে পাট্টা দেওয়া হয়েছে। হাইলাকান্দি জেলায় ১৩৫ জনকে পাট্টা দেওয়া হয়েছে এবং ৫৮ জনকে পাট্টার সাৰ্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। অশোক কুমার সিংহীর এক প্ৰেশ্নর জবাবে সমতল উপজাতি উন্নয়ন মন্ত্ৰী চন্দন ব্ৰহ্ম জানান, রাজ্যে ২২টি আম্বেদকার ভবন নিৰ্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। করিমগঞ্জে ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে, হাইলাকান্দিতে ৯১.১৪৫ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। পবিন্দ্ৰ ডেকার এক প্ৰেশ্নর জবাবে পৰ্যটন বিভাগের মন্ত্ৰী চন্দ্ৰন ব্ৰহ্ম জানান, চলচ্চিত্ৰ অভিনেত্ৰী প্ৰিয়ংকা চোপ্ৰাকে ব্ৰ্যাণ্ড এ্যম্বাসাডর হিসাবে তাঁর সঙ্গে কি ধরণের চুক্তি হয়েছে এবং কত টাকা পারিশ্ৰমিক দেওয়া হয়েছে তা প্ৰকাশ করা সম্ভব নয়। প্ৰিয়ংকা চোপ্ৰাকে নিয়ে বিজ্ঞাপন করা এবং তার যাবতীয় যাতায়াতের খরচ বাবদ ৬৮ লক্ষ ১৫ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। রাজ্য ২০১৭-১৮ সালে বিদেশী পৰ্যটকের সংখ্যা ৪১ হাজাৰ ৭৩৯। আজ বিধানসভায় অধ্যক্ষ হিতেন্দ্ৰ নাথ গোস্বামী ভুল করে জানিয়ে দেন আগামী কাল ২ অক্টোবর বিধানসভার অধিবেশন বসবে।আগামী কাল জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর জাতীয় ছুটি। বিধানসভার প্ৰধান সচিব পি ডেকা শ্লিপ পাঠিয়ে অধ্যক্ষকে ভুলটি স্মরণ করিয়ে দেন। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.